৩৫-৪০ হাজার টাকা দামের সাইকেল মিলছে ৪ হাজার ৬০০ টাকায়! ১ হাজার টাকা বাড়িয়ে দিলেই পাওয়া যাবে বাংলাদেশের বাজারে না থাকা অত্যাধুনিক ইউরোপীয় সাইকেল! আবার টাটা কোম্পানির মোটরযুক্ত সাইকেল মিলছে মাত্র ৭ হাজার টাকায়! শুধু তাই নয়, সোয়া লাখ টাকা দামের আইফোন-১৩ প্রো মোবাইল ফোন পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ৪ হাজার টাকায়! সঙ্গে ঘড়ি ফ্রি! তবে এজন্য বিকাশ বা নগদের মাধ্যমে অগ্রিম পাঠাতে হবে মোট মূল্যের একটি অংশ। অবশ্য বিকাশে অগ্রিম ফুল পেমেন্ট করলে কেউ আবার দিচ্ছে ২০% ক্যাশব্যাক! তাতে আইফোনের দাম পড়বে ৩ হাজার টাকার মতো! আর সারা বাংলাদেশে ডেলিভারি হবে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে। ফেসবুকে এমন প্রতারণামূলক বিজ্ঞাপন এখন ঘুরে বেড়াচ্ছে ভূরিভূরি। লোভনীয় বিজ্ঞাপন দিয়ে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে লাখো মানুষের টাকা।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, ‘বিকাশ’ বা ‘নগদ’-এর মাধ্যমে অগ্রিম টাকা পাঠিয়ে ফোন দিলেই ব্লক করে দেওয়া হচ্ছে ক্রেতার নম্বর। কখনো আবার টাকা পাঠিয়ে ফোন দিলে করা হচ্ছে গালাগাল। এ নিয়ে ফেসবুকের ওই পেজে অভিযোগ করলে কয়েক মিনিটের মধ্যেই সে মন্তব্য মুছে ফেলা হচ্ছে। আবার কেউ সরেজমিন দেখে পণ্য কেনার কথা বললে ভুলভাল ঠিকানা বলে করছে হয়রানি। অধিকাংশ ক্ষেত্রে বলা হচ্ছে তারা শুধু অনলাইনেই পণ্য বিক্রি করে। লোভনীয় প্রস্তাবগুলো দেওয়া হচ্ছে সীমিত সময়ের জন্য। ফলে সুযোগ হাতছাড়া হওয়ার ভয়ে অনেকেই তাড়াহুড়ো করে টাকা পাঠিয়ে প্রতারিত হচ্ছেন। এসব পেজ কয়েকদিন পর্যবেক্ষণ, পেজে ক্রেতাদের মন্তব্য, নিজে ফোন করে ও তাদের দেওয়া ঠিকানায় সরেজমিন গিয়ে এসব প্রতারণার বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
ফেসবুক ঘেঁটে China chyle.com, China shop BD, China Bicycle Shop Bd, Duronto Express, Duronto bicycle shop, Duronto Bicycle.BD, Bicycle Shop, BiCycle shop, Cycle Bazar, BD Bicycle Shop সহ অসংখ্য অনলাইন পেজ পাওয়া গেছে যারা সাইকেল বিক্রির একই ধরনের বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রতারণা করছে। অধিকাংশ সাইকেলের ছবি নেওয়া হয়েছে বিদেশি ই-কমার্স সাইট থেকে, যার কোনোটির দাম বাংলাদেশি মুদ্রায় ৫০ হাজারের বেশি। তবে ওইসব পেজে দাম দেওয়া হয়েছে ৫ হাজার টাকার কম। Japanish Bicycle Shop টাটা কোম্পানির বিশেষ সাইকেল (চার্জে, তেলে ও পায়ে চালানো যায়) বিক্রির অফার দিয়েছে ৭ হাজার ১২০ টাকায়। অন্যদিকে Mobile shopping Shop, BD Mobile gallery, Daraz Happy Shop, Daraz Online Mobile Shop BD সহ অসংখ্য পেজে মাত্র ৪-৫ হাজার টাকায় লাখ টাকার ফোন বিক্রির অফার দেওয়া হয়েছে। আইফোন থেকে নোকিয়া, ভিভো, শাওমি- সব কোম্পানির মোবাইলই রয়েছে বিজ্ঞাপনে। দাম ৫ হাজার টাকার নিচে। হরফের ধরন পরিবর্তন করে একই নামে খোলা হয়েছে একাধিক পেজ। প্রতিটি পেজে একই ধরনের পণ্যের ছবি। বিজ্ঞাপনের ভাষাও এক। প্রায় সব পেজই দিয়েছে ৬৫% মূল্যছাড়। আইফোন-১৩ প্রো (৬/২৫৬ জিবি) আনঅফিশিয়াল মূল্য ১ লাখ ১৫ হাজার টাকা হলেও Mobile shopping Shop নামের পেজে সেটি মাত্র ৪ হাজার টাকায় বিক্রির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। সঙ্গে ঘড়ি ফ্রি। এজন্য নগদ অ্যাকাউন্টে (০১৮৮৯-৬৫৭১৪৭) অগ্রিম পাঠাতে হবে ১ হাজার টাকা। পুরো টাকা অগ্রিম দিলে ৮০০ টাকা ছাড় পাওয়া যাবে। পেজে দেওয়া নম্বরে ফোন করে আইফোন কিনতে চাইলে অবস্থান জানতে চায় ও অগ্রিম পাঠাতে বলে। বাড্ডার কথা বলে সরেজমিন কিনতে চাইলে মিরপুর শাহ আলী মার্কেটের ষষ্ঠ তলায় তাদের দোকান বলে জানায়। অন্য নম্বর দিয়ে ফোন করে বাসার অবস্থান মিরপুর বললে জানায় তাদের দোকান যাত্রাবাড়ী। Daraz happy shop নামের পেজে ভিভো ভি২৩ প্রো ফোনের দাম দেওয়া হয়েছে ৪ হাজার ২০০ টাকা, যার বাজারমূল্য প্রায় ৫০ হাজার টাকা। পেজে দেওয়া নম্বরে ফোন করলে নগদ অ্যাকাউন্টে (০১৮৩১-১৫৮৮২৩) বা বিকাশ অ্যাকাউন্টে (০১৮৮০-৮৬৯৭২২) ৫৫০ টাকা অগ্রিম পাঠাতে বলে। বিক্রেতা নিজের নাম-পরিচয় দেন মেহেদী হাসান অভি। সরেজমিন কিনতে চাইলে জানান, তাদের হেড অফিস চট্টগ্রামে। মোবাইল নারায়ণগঞ্জে রাখা আছে, দেখা যাবে না। ভারত থেকে কালোবাজারে আনা হয়েছে বলে কমে দিতে পারছেন। এদিকে একাধিক সাইকেল বিক্রির পেজে দেওয়া নম্বরে ফোন ও মেসেঞ্জারে যোগাযোগ করলে একই অভিজ্ঞতা পাওয়া যায়। অনেক ক্রেতা নিজে দেখে ২০-২৫টি সাইকেল কেনার প্রস্তাব দিলেও তাতে সাড়া দেয়নি পেজগুলোর অ্যাডমিন। পেজগুলোয় যেসব আকর্ষণীয় সাইকেলের ছবি দেওয়া হয়েছে তার অনেক মডেলই বাংলাদেশের বাজারে নেই বলে জানিয়েছেন বংশালের সাইকেল ব্যবসায়ীরা। এদিকে বিকাশ নম্বর ব্যবহার করে এমন প্রতারণার বিষয়ে জানতে চাইলে বিকাশের হেড অব করপোরেট কমিউনিকেশন শামসুদ্দিন হায়দার ডালিম বলেন, ‘আমরা অভিযোগ পেলেই ওইসব অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ বা বন্ধ করে দিই। নিজেরাও মনিটরিং করি। আসল জাতীয় পরিচয়পত্র ছাড়া বিকাশ অ্যাকাউন্ট খোলা যায় না। তাই এসব প্রতারকের পরিচয় জানা কঠিন নয়। তবে এটা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিষয়।’ এ ব্যাপারে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ তারেক বিন রশিদ বলেন, ‘এটা ডিজিটাল প্রতারণা। আমরা সব সময় মনিটরিং করছি। এগুলো চোখে পড়লে বা অভিযোগ পেলে তৎক্ষণাৎ ব্যবস্থা নিই।’