সয়াবিন তেলে নৈরাজ্য: বিশ্ববাজারে কমলেও দেশে কেন বাড়ল দাম

সয়াবিন তেলে নৈরাজ্য: বিশ্ববাজারে কমলেও দেশে কেন বাড়ল দাম

বিশ্ববাজারে গত তিন মাসের ব্যবধানে টনপ্রতি সয়াবিন তেলের দাম কমেছে ১৭৫ ডলার। অন্যদিকে গত তিন মাসের ব্যবধানে পাম অয়েলে দাম কেমেছে ৪১৭ ডলার। ভোজ্য তেলের বিশ্ববাজার পর্যালোচনা করে দেখা যাচ্ছে, তিন মাস ধরেই দাম কমে আসছে। তার আলোকেই গত ২ জুন রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছিলেন, ‘সহসা আর ভোজ্য তেলের দাম বাড়বে না।’

একদিকে বিশ্ববাজারে দাম কমে আসা, অন্যদিকে বাণিজ্যমন্ত্রী আশ্বাসে দেশের মানুষের প্রত্যাশা ছিল আপাতত হয়তো দাম আর বাড়ছে না ভোজ্য তেলের। কিন্তু হুট করেই গত বৃহস্পতিবার জাতীয় বাজেট পেশের দিন দেশের বাজারে সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানো হয় লিটারে ৭ টাকা। বিশ্ববাজারে যেখানে দাম কমে

আসছে, সেখানে দেশের বাজারে দাম বৃদ্ধিকে সম্পূর্ণ অনৈতিক বলে মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকরা।

বিশ্ববাজারে বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত মার্চ মাসে বিশ্ব বাজারে প্রতিটন সয়াবিন তেলের দাম ছিল ১ হাজার ৯৫৬ ডলার, এখন সেটি হয়েছে ১ হাজার ৭৮১ ডলার। অর্থাৎ তিন মাসের ব্যবধানে বিশ্ববাজারে প্রতিটন সয়াবিন তেলে দাম কমেছে ১৭৫ ডলার। এপ্রিল মাসে এসে আরও কিছুটা দাম কমে সয়াবিন তেলের। এপ্রিলে প্রতিটন সয়াবিন তেলের দাম হয় ১ হাজার ৯৪৭ ডলার।

গত তিন মাসে বিশ্ববাজারে সয়াবিনের চেয়ে পাম অয়েলের দাম কমেছে আরও বেশি। মার্চে বিশ্ববাজারে প্রতিটন পাম অয়েল বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৭৭৬ ডলারে। এখন অর্থাৎ গতকাল বিশ্ববাজারে প্রতিটন সয়াবিন তেল বিকিকিনি হয়েছে ১ হাজার ৩৫৯ ডলারে। অর্থাৎ তিন মাসের ব্যবধানে বিশ্ববাজারে পাম অয়েলের দাম কমেছে ৪১৭ ডলার। মার্চের পর এপ্রিলে কমে দাম হয় ১ হাজার ৬৮২ ডলার। মে মাসে এসে কমে ১৪৩০ ডলারে ঠেকে। বিশ্ববাজার পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা ইনডেক্স মুন্ডি ও বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

এই যখন অবস্থা, তখন দেশের বাজারে ভোজ্য তেলের দাম বেড়েই চলেছে। অথচ বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি গত ২ জুন দেশে ভোজ্য তেলের দাম কমার আভাস দিয়ে বলেছিলেন, ‘আপাতত ভোজ্য তেলের দাম আর বাড়ছে না।’ তবে বাণিজ্যমন্ত্রীর এই আশ্বাসের পরও দাম বাড়ল। জাতীয় সংসদে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট উত্থাপনের দিন ৯ জুন সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ৭ টাকা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত জানানো হয়।

গতকাল রোববার সরেজমিন দেখা যায়, রাজধানীর মোহাম্মদপুর টাউন হল মার্কেটে আগের দামেই তেল বিক্রি হচ্ছে। কারণ হিসেবে বিক্রেতারা বলেন, নতুন দাম নির্ধারণ হলেও বাজারে আগের দামের তেলই বিক্রি হচ্ছে। এই মার্কেটে খোলা সয়াবিন তেল পাওয়া যাচ্ছে না।

টাউন হল মার্কেটের ইসলাম জেনারেল স্টোরের মালিক শাফায়েত হোসেন বলেন, ‘আগে আনা সয়াবিন তেলই এখনও বিক্রি করছি। ২ লিটার সয়াবিন তেলের বোতল বিক্রি করছি ২৯৬ টাকা ও ৫ লিটার ৯৮৫ টাকা। এনা দামের তেল বাজারে যে পরিমাণ আছে তা দিয়ে এক সপ্তাহ চলবে। এরপর নতুন করে সরবরাহ পাওয়া তেলের বোতলে যে দাম উল্লেখ থাকবে সে অনুযায়ী বিক্রি করব।

তবে কারওয়ান বাজারের অধিকাংশ দোকানে বিক্রি হচ্ছে নতুন দামে, ২০৫ টাকায়। এই বাজারের ইউসুফ জেনারেল স্টোরের মালিক মো. ইউসুফ হোসেন বলেন, দাম বাড়ানোর পর দিন থেকেই কোম্পানির লোকেরা নতুন মূল্য সম্বলিত তেল বাজারে ছেড়েছে। আমরা বাড়তি দামের তেল কিনেছি, তাই আমরাও বাড়তি দামে বিক্রি করছি।

এদিকে বিশ্ববাজারে দাম কমার পরও দেশের বাজারে দাম বৃদ্ধিকে অনৈতিক বলে মনে করছেন কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান। সময়ের আলোকে তিনি বলেন, বিশ্ববাজারে দাম বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ব্যবসায়ীরা দেশের বাজারে দাম বাড়িয়ে দেয়, কিন্তু বিশ্ববাজারে দাম কমলে দেশের বাজারে তখন আর কমাতে চান না। বিশ্ববাজারে যখন দাম কমেছে তখন, দেশের বাজারে কেন আবার ভোজ্য তেলের দাম বাড়ানো হবে। এটি সম্পূর্ণ অনৈতিক। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উচিত ব্যবসায়ীদের কাছে এর ব্যাখ্যা চাওয়া।

অর্থ বাণিজ্য