খারাপ আবহাওয়া ও এর জেরে বজ্রপাতে ভারতে একদিনে ৩০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে এক বিহার রাজ্যেই মৃত্যু হয়েছে ১৭ জনের। এছাড়া ছত্তিশগড়, মহারাষ্ট্র, গুজরাট ও উড়িষ্যাতেও রোববার (১৯ জুন) ঘটেছে প্রাণহানির ঘটনা।
এদিকে বজ্রপাতে নিহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণের ঘোষণাও দিয়েছে একাধিক রাজ্য। সোমবার (২০ জুন) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য কুইন্ট।
ভারতীয় বার্তাসংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, শুধুমাত্র বিহারে গত শনিবার রাত থেকে বজ্রপাত এবং বজ্রঝড়ে ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। রাজ্যটির পৃথক আটটি জেলায় প্রাণহানির এই ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে ভাগলপুর জেলা থেকে ছয়জন, বৈশালী থেকে তিনজন, বাঁকা ও খাগরিয়া থেকে যথাক্রমে দুইজন এবং মুঙ্গের, মাধেপুরা, কাটিহার এবং সহরসা থেকে একজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
এদিকে বজ্রপাত এবং বজ্রঝড়ে এতো মানুষের মৃত্যুর ঘটনায় বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার শোকপ্রকাশ করেছেন। একইসঙ্গে নিহতদের জন্য তাদের নিকটাত্মীয়কে ৪ লাখ টাকা রুপি করে আর্থিক সহায়তা প্রদানের ঘোষণাও দিয়েছেন তিনি।
অন্যদিকে ভারতের আরেক রাজ্য ছত্তিশগড়ের বিভিন্ন জেলায় বজ্রপাতের পৃথক ঘটনায় তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া বজ্রপাতে ৫২টি ছাগলও মারা গেছে রাজ্যটিতে।
সংবাদমাধ্যম বলছে, ২২ বছর বয়সী চিন্তামণি ধনকড় নামে একজন রাখাল তার ছাগলের পাল-সহ ছত্তিশগড়ের গড়িয়াবন্দ জেলার সহসপুর গ্রামের কাছে বজ্রপাতে মারা যান। তিনি তার পশুদের আশ্রয়ের জন্য একটি বিশাল গাছের নিচে নিয়ে গিয়েছিলেন বলে জানা গেছে।
পিটিআইয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রোববার বজ্রপাতের কারণে নিজের ৫২টি ছাগল-সহ চিন্তামণি ধনকড় নামের ওই রাখাল ঘটনাস্থলেই নিহত হন বলে নিশ্চিত করেছেন গড়িয়াবন্দ জেলার পুলিশ সুপার জে আর ঠাকুর।
বজ্রপাতে প্রাণ হারানো বাকি দু’জনের একজন নারী ও একজন যুবক। সংবাদমাধ্যম বলছে, বৃষ্টির মধ্যে জমিতে ধান রোপনের সময় ৪০ বছর বয়সী এক নারী এবং ২৩ বছর বয়সী এক ব্যক্তি ক্ষেত থেকে আগাছা অপসারণের সময় বজ্রপাতের কারণে মারা যান। তারা যথাক্রমে ছত্তিশগড়ের বালোদাবাজার-ভাটাপাড়া ও মুঙ্গেলি জেলার বাসিন্দা।
ছত্তিশগড়ের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বাঘেল বজ্রপাতে নিহতদের জন্য শোক প্রকাশ করেছেন এবং প্রত্যেক নিহতের পরিবারকে রেভিনিউ বুক সার্কুলার (আরবিসি) বিধানের অধীনে ৪ লাখ রুপি ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন।
এদিকে বজ্রপাতের পৃথক ঘটনায় রোববার ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য মহরাষ্ট্রের নাগপুর এবং পালঘরে চারজন প্রাণ হারিয়েছেন। নিহতদের মধ্যে একজন অল্পবয়সী শিশুও রয়েছে।
সংবাদমাধ্যম বলছে, রোববার মহরাষ্ট্র রাজ্যের পালঘর জেলায় বজ্রপাতে দুই বছরের এক ছেলে শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে। ঘটনার সময় ওই শিশু ও তার বোন বাড়ির বাইরে খেলছিল। অন্যদিকে, রাজ্যে দু’টি কৃষকের কুঁড়েঘরে বজ্রপাত হলে দু’জন নিহত হন।
তারা হলেন- দীনেশ কাম্বলে (৩২) এবং বাবারাও ইঙ্গলে (৬০)। এছাড়া তৃতীয় ঘটনায় ২৩ বছর বয়সী যোগেশ পাটিল নামে এক ব্যক্তি নাগপুর জেলার হিওয়ারমাথ গ্রামের খামারে বজ্রপাতে মারা যান।
এদিকে গুজরাটে ভারী বৃষ্টিপাত এবং বজ্রপাতের কারণে এক নাবালক-সহ দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় আরও একজন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। রোববার রাজ্যটির মতি জগধর গ্রামে এই ঘটনা ঘটে।
সংবাদমাধ্যম বলছে, রোববার গুজরাটের ভাবনগর জেলায় বজ্রপাতে ভূপতি মাভজি এবং তার ১০ বছর বয়সী ভাতিজা রবি মারা যায়। তারা একই পরিবারের সদস্য। এসময় একজন আহত হন।
গুজরাটের মহুয়া থানার এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ‘বজ্রপাতের ঘটনায় গুরুতর আহত এক নারীকে চিকিৎসার জন্য মহুয়ার একটি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে।’
এদিকে রোববার বজ্রপাতের কারণে উড়িষ্যার নুয়াপাড়া জেলার ভুবনেশ্বরে চারজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আরও দু’জন আহত হয়েছেন বলে পুলিশ জানিয়েছে।
বার্তাসংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, নুয়াপাড়ার মল্লিকামুন্ডা গ্রামে একটি বাড়ি নির্মাণের কাজ করছিলেন ছয়জন। একপর্যায়ে সেখানে বজ্রপাত হয়। তাদের সবাইকে তাৎক্ষণিকভাবে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চারজনকে মৃত ঘোষণা করা হয়।