নিজস্ব প্রতিবেদক
উদ্বোধনের পর আজ রোববার (২৬ জুন) সকাল ৬টা থেকে যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে পদ্মা সেতু। অবিস্মরণীয় এই মুহূর্তের সাক্ষী হতে দুই পাড় থেকেই ছুটে এসেছেন অসংখ্য মানুষ। ভোর থেকেই সেতুর দুই প্রান্তে ব্যক্তিগত গাড়ি, বাইক, ভাড়া করা গাড়ি, পণ্যবাহী ট্রাক ও যাত্রীবাহী বাসের দীর্ঘ সারি তৈরি হয়েছে। এতে টোল প্লাজাগুলোতে দেখা গেছে ব্যাপক চাপ।
প্রথমদিনে স্বপ্নের এই সেতু পাড়ি দেওয়ার স্মৃতি ধরে রাত থেকেই সেতুর কাছাকাছি এসে অপেক্ষা করছিলেন কেউ কেউ। অনেকেই মাওয়া ঘাটে রাতে এসে আড্ডা দিয়েছেন। পরখ করেছেন এখানকার ইলিশের স্বাদ। ভোরে সূর্যের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গেই টোল দিয়ে পাড়ি দিয়েছেন ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটারে দ্বিতল এই সেতু। প্রথম দিনে পদ্মা সেতু দিয়ে পার হচ্ছে বেশ কিছু পণ্যবাহী ট্রাকও।
দুই প্রান্তের ১৪টি টোল গেট চালু করেছে সেতু কর্তৃপক্ষ। সবকয়টিতে ম্যানুয়ালি আদায় করা হচ্ছে টোল। তবে প্রথম দিনে অনেকেই টোলের পরিমাণ না জানায় কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে বলে জানান টোল প্লাজার কর্মীরা।
জাজিরা প্রান্তের টোল ম্যানেজার কামাল হোসেন বলেন, ‘যানবাহনের চাপ কিছুটা বেশি। তবে এখন পর্যন্ত তেমন কোনও সমস্যা হয়নি। আসলে অনেকেই জানেন না টোল কত, সেকারণেও কিছুটা সময় লাগছে। দুই-একদিনের মধ্যে চাপ আরও কিছুটা কমে আসবে আশা করছি।’
পদ্মা সেতু প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী তোফাজ্জল হোসেন জানান, সেতু নিয়ে ব্যাপক আগ্রহ থাকায় যান চলাচল শুরুর দিন ভোর থেকেই ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রসওয়ে ভিড় জমায় শত শত যানবাহন। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চেষ্টা করা হচ্ছে। কর্তৃপক্ষও যথাযথ প্রস্তুতি রেখেছে, সেনাবাহিনীর পাশাপাশি অন্যান্য বাহিনীর সদস্যরাও কাজ করছেন।
পদ্মা সেতু পারাপারে সরকার নির্ধারিত টোল হার অনুযায়ী, পদ্মা সেতু পারাপারে মোটরসাইকেলে ১০০ টাকা, কার ও জিপে ৭৫০ টাকা, পিকআপে ১ হাজার ২০০ টাকা, মাইক্রোবাসে ১ হাজার ৩০০ টাকা টোল পরিশোধ করতে হবে।
বাসের ক্ষেত্রে ছোট বাস (৩১ আসন) ১ হাজার ৪০০ টাকা, মাঝারি বাস (৩২ আসন বা এর বেশি) ২ হাজার টাকা, বড় বাস (থ্রি-এক্সেল) প্রতি ৩ হাজার ৪০০ টাকা টোল দিতে হবে।
এছাড়া ছোট ট্রাককে (৫ টন পর্যন্ত) ১ হাজার ৬০০ টাকা, মাঝারি ট্রাকে (৫ টনের বেশি ও সর্বোচ্চ ৮ টন পর্যন্ত) ২ দুই হাজার ১০০ টাকা, মাঝারি ট্রাক (৮ টনের বেশি ও সর্বোচ্চ ১১ টন) ২ হাজার ৮০০ টাকা, ট্রাকে (থ্রি-এক্সেল পর্যন্ত) ৫ হাজার ৫০০ টাকা, ট্রেইলার (ফোর-এক্সেল পর্যন্ত) ৬ হাজার টাকা। আর ট্রেইলার (ফোর-এক্সেলের অধিক) ৬ হাজারের সঙ্গে প্রতি এক্সেলের জন্য ১ হাজার ৫০০ টাকা যুক্ত হবে।
এর আগে শনিবার (২৫ জুন) বেলা ১১টা ৪৮ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজ হাতে নির্ধারিত টোল দেন। ১১টা ৫৮ মিনিটে মাওয়া প্রান্তে পদ্মা সেতুর ফলক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী। দুপুর ১২টা ৬ মিনিটে সেতু দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর গাড়িবহর জাজিরার অভিমুখে রওনা করে। দুপুর সোয়া ১২টার দিকে বাংলাবাজার ঘাটের জনসভাস্থলে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। পরে তিনি সেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে ভাষণ দেন।
নিরাপত্তা ও স্থায়িত্ব রক্ষার্থে এ সেতু ব্যবহারকারীদের নির্দেশনা দিয়েছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ।
নির্দেশনায় বলা হয়, ২৫ জুন জাতির স্বপ্নের পদ্মা সেতু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করবেন এবং ২৬ জুন সকাল ৬টা থেকে সরকার নির্ধারিত টোল প্রদান সাপেক্ষে সেতু পারাপার হওয়া যাবে।
পদ্মা সেতুর নিরাপত্তা ও স্থায়িত্ব রক্ষার্থে এ সেতু ব্যবহারকারীদের নির্দেশনা:
১. পদ্মা সেতুর ওপর অনুমোদিত গতিসীমা ৬০ কিলোমিটার/ঘণ্টা।
২. পদ্মা সেতুর ওপর যে কোন ধরণের যানবাহন দাঁড়ানো ও যানবাহন থেকে নেমে সেতুর পরে দাঁড়িয়ে ছবি তোলা/হাঁটা সম্পূর্ণ নিষেধ।
৩. বিশেষভাবে জানানো যাচ্ছে যে, তিন চাকা বিশিষ্ট যানবাহন (রিক্সা, ভ্যান, সিএনজি, অটো রিক্সা ইত্যাদি), পায়ে হেঁটে, সাইকেল বা নন-মটোরাইজড গাড়ি যোগে সেতু পারাপার হওয়া যাবে না।
৪. গাড়ীর বডির চেয়ে বেশি চওড়া এবং ৫.৭ মিটার উচ্চতার চেয়ে বেশি উচ্চতার মালামালসহ যানবাহন সেতুর উপর দিয়ে পারাপার করা যাবে না।
৫. সেতুর ওপরে কোন ধরণের ময়লা ফেলা যাবে না।
পদ্মা সেতু একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় স্থাপনা বিধায় সেতু পারাপারে সর্বসাধারণকে উপরোক্ত নির্দেশনা মেনে চলার জন্য অনুরোধ হয়েছে। সড়ক ও সেতুর ক্ষতি কমাতে নির্ধারিত ওজন সীমা মেনে চলারও আহ্বান জানানো হয়েছে।