নিজস্ব প্রতিবেদক
দেশে করোনায় আক্রান্ত হয়ে শনিবার সকাল ৮টা থেকে গতকাল রবিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় দুজন মারা গেছে। এ নিয়ে দেশে করোনায় মোট মৃত্যু হয়েছে ২৯ হাজার ১৪০ জনের। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে শনাক্ত হয়েছে এক হাজার ৬৮০ জন। নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ১৫.৬৬ শতাংশ।
গতকাল রবিবার বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে এসব তথ্য জানানো হয়।
এদিকে একই সময় ভারতে নতুন করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে ১১ হাজার ৭০৩ জন এবং মারা গেছে ২৫ জন। আগের ২৪ ঘণ্টার হিসাব তুলে ধরে গতকাল রবিবার ভারতের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ তথ্য জানায়। দুই সপ্তাহ আগেও ভারতে শনাক্ত রোগী ছিল সাড়ে আট হাজার আর মারা গেছে kalerkanthoমাত্র চারজন। ভারতেও বাড়ছে করোনার সংক্রমণ এবং মৃত্যু। বিশেষজ্ঞ পর্যায় থেকে বলা হচ্ছে, গত বছর জুনে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ও মৃত্যুর তুলনায় এবারের পরিস্থিতি এখনো নিয়ন্ত্রণে আছে। তবে গত বছর করোনা প্রতিরোধে স্থাস্থ্যবিধি মেনে চলার এবং মানানোর যে প্রবণতা ছিল, এবার তা নেই। অনেকের মধ্যে করোনার লক্ষণ দেখা দিলেও পরীক্ষা করাচ্ছে না।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও করোনা মোকাবেলায় গঠিত জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যে মনে হচ্ছে গত বছরের তুলনায় দেশে করোনা সংক্রমণ এখনো কম। এবার এপ্রিল, মে ও জুনের প্রথম সপ্তাহে করোনা সংক্রমণ কম ছিল। কিন্তু জুনের দ্বিতীয় সপ্তাহে সংক্রমণ বাড়তে থাকে। মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে। এভাবে নতুন করে সংক্রমণ কেন শুরু হলো তা জানা দরকার। আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকেও এ বিষয়ে তেমন তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না। দেশে যে কয়েকটি ল্যাবরেটরি রয়েছে, সেগুলো থেকেও এ বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। ’
তিনি আরো বলেন, ‘হতে পারে দেশে প্রায় ১৩ কোটি মানুষকে করোনার প্রথম ডোজের টিকা দেওয়া হয়েছে। এদের মধ্যে দ্বিতীয় ডোজের টিকা নিয়েছে ১২ কোটির মতো। বুস্টার ডোজ নিয়েছে প্রায় তিন কোটি মানুষ। এর প্রভাবে হয়তো সংক্রমণ এবং মৃত্যু এখনো কম। কিন্তু স্বাস্থ্যবিধি যেভাবে উপেক্ষিত হচ্ছে তাতে পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে পারে। দেশের বেশ কয়েকটি জেলায় বন্যা পরিস্থিতি এবং আসন্ন ঈদুল আজহা করোনার ঝুঁকি বাড়াতে পারে। ঈদের সময় অনেক মানুষের যাতায়াত, ভিড় করে শহর ছাড়া—এসব কারণে আগামী কয়েক মাস করোনা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। এ পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কোনো বিকল্প নেই। ’
এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৮৮০টি ল্যাবে ২৪ ঘণ্টায় নমুনা সংগ্রহ করা হয় ১০ হাজার ৭৭৮টি এবং মোট নমুনা পরীক্ষা করা হয় ১০ হাজার ৭২৮টি। নমুনা পরীক্ষায় শনাক্তের হার ১৫.৬৬ শতাংশ। ওই ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া দুজনের মধ্যে একজন পুরুষ ও একজন নারী। তাঁদের বয়স ৬১ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে একজন এবং ৯১ থেকে ১০০ বছরের মধ্যে অপর একজন। মারা যাওয়া দুজনই ঢাকা বিভাগের। তাঁরা দুজনই বেসরকারি হাসপাতালে মারা যান। ওই সময় আইসোলেশনে এসেছে ৪১ জন এবং আইসোলেশন থেকে ছাড়া পেয়েছে চারজন। বর্তমানে আইসোলেশনে আছে ২৯ হাজার ৪৬১ জন।
গতকাল রবিবার ওয়ার্ল্ডোমিটারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, আগের দিন শনিবার বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের দৈনিক সংক্রমণ সংখ্যা ছিল চার লাখ ৪২ হাজারের ওপরে। মারা গেছে আট শতাধিক। মহামারির শুরু থেকে এ পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয় ৫৪ কোটি ৮৭ লাখ ৮৩ হাজারের ওপর এবং মারা গেছে ৬৩ লাখ ৫০ হাজারের বেশি। আর আক্রান্ত হওয়ার পর সুস্থ হয়েছে ৫২ কোটি ৩৭ লাখ ১৭ হাজারেরও বেশি মানুষ।
বাংলাদেশ লাগোয়া ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে গতকাল পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় ২৩৫ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে এবং মারা গেছে দুজন। দুই সপ্তাহ আগে রাজ্যে ১৩৯ জন রোগী শনাক্ত হলেও কোনো মৃত্যু হয়নি।