নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশে আমদানির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বাড়ছে না রপ্তানি। ফলে বহির্বিশ্বের সঙ্গে দেশের বাণিজ্য ঘাটতি রেকর্ড পরিমাণ বাড়ছে। বিদায়ী অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৮১ কোটি ডলার। গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংক বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যের (ব্যালান্স অব পেমেন্ট) যে হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে এ তথ্য উঠে এসেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সদ্যসমাপ্ত ২০২১-২২ অর্থবছরের জুলাই থেকে মে পর্যন্ত পণ্য বাণিজ্যে বাংলাদেশের ঘাটতি পরিমাণ দাঁড়িয়েছে তিন হাজার ৮১ কোটি ৬০ লাখ ডলার। বর্তমান বিনিময় হার হিসেবে (প্রতি ডলার ৯৩.৪৫ টাকা) দেশীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ দুই লাখ ৮৭ হাজার কোটি টাকার বেশি।
তার আগে ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৭০ কোটি ডলার। আর গেল অর্থবছরের পুরো সময়ে এই ঘাটতি ছিল ২ হাজার ২৮০ কোটি ডলার।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে মে পর্যন্ত সময়ে রপ্তানি বেড়েছে ৩২ দশমিক ৯৮ শতাংশ। অন্যদিকে আমদানি বেড়েছে ৩৯ দশমিক ০৩ শতাংশ। আলোচিত ১১ মাসে রপ্তানি থেকে দেশ আয় করেছে চার হাজার ৪৫৮ কোটি ডলার। এ সময় পণ্য আমদানির পেছনে ব্যয় করেছে ৭ হাজার ৫৪০ কোটি ডলার। আমদানি ব্যয় থেকে রপ্তানি আয় বাদ দিলে বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়ায় ৩ হাজার ৮১ কোটি ডলার।
আলোচিত সময়ে সেবা খাতের বাণিজ্য ঘাটতিও বেড়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে সেবা খাতে বাংলাদেশ আয় করেছে ৮৮২ কোটি ডলার। অন্যদিকে সেবা খাতে দেশের ব্যয় হয়েছে ১২৩৪ কোটি ডলার। সেবা খাতের ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৩৫২ কোটি ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ে ঘাটতি ছিল ২৫৩ কোটি ডলার।
চলতি হিসাবে ভারসাম্যে (কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ব্যালেন্স) বড় ঘাটতিতে পড়েছে বাংলাদেশ। গেল অর্থবছরের ১১ মাসে এই ঘাটতির (ঋণাত্মক) পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৭২৩ কোটি ৩০ লাখ ডলার। আগের অর্থবছরে একই সময়ে ঘাটতি ছিল ২৭৮ কোটি ৩০ লাখ ডলার।
সামগ্রিক লেনেদেনে (ওভারঅল ব্যালান্স) ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৩০ কোটি ডলার। যা গত অর্থবছরের একই সময়ে এই সূচকে ৮৫২ কোটি ডলারের উদ্বৃত্ত ছিল।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, জুলাই থেকে মে পর্যন্ত দেশে ১ হাজার ৯৭৯ কোটি ৫০ লাখ ডলারের সমপরিমাণ রেমিট্যান্স দেশে এসেছে। যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১৫ দশমিক ২৫ শতাংশ কম। গত অর্থবছরে একই সময় এসেছিল দুই হাজার ২৮৩ কোটি ৭০ লাখ ডলার।
দেশে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের (এফডিআই) বাড়েছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে জুলাই-মে সময়ে ৩১৩ কোটি ডলারের এফডিআই পেয়েছিল বাংলাদেশ। গেল অর্থবছরের একই সময়ে তা বেড়ে ৪২৭ কোটি ডলারে পৌঁছেছে।
বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে সরাসরি মোট যে বিদেশি বিনিয়োগ আসে তা থেকে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান মুনাফার অর্থ নিয়ে যাওয়ার পর যেটা অবশিষ্ট থাকে সেটাকে নিট এফডিআই বলা হয়। আলোচিত সময়ে নিট বিদেশি বিনিয়োগও আগের বছরের চেয়ে ৫৯ দশমিক ৬৬ শতাংশ বেড়ে ২০৫ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে। গত বছর একই সময়ে নিট বিদেশি বিনিয়োগ ছিল ১২৮ কোটি কোটি ডলার।