আর মাত্র কয়েকদিন বাকি ঈদুল আজহার। ইতোমধ্যে রাজধানী ঢাকা থেকে বাড়ি ফেরা মানুষ ঢাকা ছাড়তে শরু করেছেন। আবার ঢাকার বিভিন্ন কোরবানির পশুর হাটে আসতে শুরু করেছে পশু। এসব পশুবাহী ট্রাক আসছে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে। আর পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর থেকে দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীবাহী বাস সরাসরি ঢাকায় প্রবেশ করছে। ঢাকার বিভিন্ন বাস স্টেশন থেকে যাচ্ছে দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায়। এতে রাজধানীতে প্রতিদিনই বাড়ছে গণপরিবহনের চাপ। যানজট সৃষ্টি হচ্ছে প্রায় সব সড়কে। তীব্র যানজটের কারণে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে নগরবাসীকে।
তীব্র যানজট ঠেকাতে হিমশিম খাচ্ছে রাজধানীতে কর্মরত ট্রাফিক পুলিশরা। এতো গাড়ির চাপ ও যানজটের ভয়াবহতার কারণে রাজধানীর ট্রাফিক ব্যবস্থা প্রায় ভেঙে পড়েছে। সড়কগুলোতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয় কর্মজীবী লোকজনকে। এই পরিস্থিতিতে ঈদযাত্রায় প্রবেশ ও বের হওয়ার পথে যানজটের শঙ্কা প্রকাশ করেছেন পরিবহন সংশ্লিষ্টরা।
রাজধানীর সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ি, পল্টন মোড়, গুলিস্তান, কাকরাইল, বিজয়সরণি, ফার্মগেট, বাংলামোটর, তেজগাঁও,মিরপুর, শেওড়াপাড়া, কাজীপাড়া, কল্যাণপুর, শ্যামলী, আসাদগেট, নিউমার্কেট, রামপুরা, বাড্ডা, মালিবাগ, হানিফ ফ্লাইওভারসহ প্রায় সব এলাকার রাস্তায় তীব্র যানজট দেখা গেছে। এসব রাস্তায় ধীরগতিতে যানবাহন চলতে দেখা গেছে। এক স্থানেই দীর্ঘ সময় গাড়িগুলোকে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে।
রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে দূরপাল্লার ও আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালের অভ্যন্তরে এবং বাইরের সড়কে বাস থামিয়ে যাত্রী ওঠানো করা হচ্ছে। যাত্রীরা টার্মিনালের বাইরে এসে বাসে ওঠছেন। কখনো কখনো যাত্রীদের রাস্তা থেকে টেনে টেনে বাসে ওঠানো হয়। আন্তঃজেলা ও দূরপাল্লার বাসগুলো টার্মিনাল সংলগ্ন প্রধান সড়কের অংশ দখল করে রাখছে। পিছনের বাসে যাতে যাত্রী ওঠতে না পারে সেজন্য সড়কের ওপরেই বাস তেরা করে যাত্রী ওঠা-নামা করানো হয়। ওয়েবিল বা টিকিট চেকিংয়ের নামে স্থানে স্থানে বাস দাঁড় কড়িয়ে রাখা হয়।
তবে বিআরটিএর চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার বলেন, পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে রুট পারমিট নেই এমন বাস চলতে পারবে না। মোটরসাইকেল ও লক্কড়-ঝক্কড় বাস চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা চ্যালেঞ্জিং। পুলিশকে এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। চেকপোস্টগুলো সচল রাখতে হবে। এছাড়া সিসি ক্যামেরা দিয়ে সড়কের যানজট পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হবে।
নগরবাসী জানান, বিমানবন্দর সড়কে চলছে উন্নয়ন কাজ। ওই সড়কে যানজট সৃষ্টি হয়। পদ্মা সেতুর কারণে সায়েদাবাদ ও আশপাশ এলাকায় গাড়ি চলাচল বেড়েছে। ঈদ উপলক্ষে এই সড়কে দিন দিন বাড়ছেই গাড়ির সংখ্যা। এতে বেড়ে যাচ্ছে যানজট। মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের বিভিন্ন স্থানে গাড়ি চলতে হয় ধীর গতিতে। আর ঈদ উপলক্ষে মেঘনা সেতু, বঙ্গবন্ধু সেতু ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মহাসড়কের টোলপ্লাজায় টোল দিতে গিয়ে গাড়ির দীর্ঘ সারি হতে পারে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) আয়োজিত সভায় কয়েকজন বক্তা এসব আশঙ্কার কথা জানান। সভায় রুট পারমিটবিহীন ও লক্কড়-ঝক্কড় বাস দূরপাল্লার রুটে চলাচল, পণ্যবাহী ট্রাকে যাত্রীবহন, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়, ঈদের আগে ও পরে সাত দিন পণ্যবাহী ট্রাক চলাচল বন্ধ রাখার বিষয়ও আলোচনা উঠে আসে। ঈদের বাড়তি যাত্রীর চাপ মোকাবিলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও পরিবহণ সংশ্লিষ্টদের সতর্ক থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়।
ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি বলছে, যানজট এখন নিয়মিত সমস্যায় পরিণত হয়েছে। সড়কের যে অবস্থা তাতে ঈদযাত্রায় ভয়াবহ যানজট তৈরি হবে। এখনই যানজট শুরু হয়েছে। টঙ্গী থেকে কলেজগেট পর্যন্ত রাস্তায় বড় বড় ভাঙা রয়েছে। এখনই ঈদের যাত্রী যেতে শুরু করেছে। বৃহস্পতিবার ভয়াবহ যাত্রী চাপ পড়বে। তিনি দ্রুত এ রাস্তা সংস্কারের দাবি জানান।
সায়েদাবাদ শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আবুল কালাম বলেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় সায়েদাবাদ এলাকায় গাড়ির চাপ বেড়েছে। যাত্রীবাহী ছাড়াও পণ্যবাহী গাড়ি আশপাশ এলাকায় পার্কিং করে। এতেও সড়কে যানজট হয়। এছাড়া সায়েদাবাদ টার্মিনালের কাছাকাছি সড়ক সংস্কারের কাজ চলছে জানিয়ে তা দ্রুত শেষ করার দাবি জানান।
পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি মোশাররফ জানান, অন্যবারের ঈদের মতো এবারও সাত দিন সাধারণ পণ্যবাহী ট্রাক চলাচল বন্ধ থাকবে। তবে পশুবাহী ট্রাক চলাচল করায় রাস্তায় গাড়ির চাপ থাকবে। মেঘনা সেতু, বঙ্গবন্ধু সেতু ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মহাসড়কের টোলপ্লাজায় টোল দিতে গিয়ে যানজটের তৈরি হতে পারে। সেখানে বুথ বাড়াতে হবে।
বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ঈদে গণপরিবহণের সঙ্কটের সুযোগে লক্কড়-ঝক্কড় বাসে যাত্রী বহন করা হয়। বাড়তি ভাড়া আদায় করা হয়। এসব গাড়ি যত্রতত্র থামিয়ে যাত্রী ডেকে তোলে। এসব গাড়ির কারণে টার্মিনালে যানজট তৈরি হয়।