মায়ের পেট ফেটে বের হওয়া শিশুটির দায়িত্ব নিলেন জেলা প্রশাসক

মায়ের পেট ফেটে বের হওয়া শিশুটির দায়িত্ব নিলেন জেলা প্রশাসক

ত্রিশাল (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি

ময়মনসিংহের ত্রিশালে ট্রাকচাপায় মারা যাওয়া অন্তঃসত্ত্বা মায়ের গর্ভ ফেটে জন্ম নেওয়া সেই শিশুটি সুস্থ আছে। খোঁজ নিতে এসে শিশুটির দায়িত্ব নিলেন জেলা প্রশাসক।

জানা যায়, মেয়ে শিশুটি বর্তমানে ময়মনসিংহ নগরীর লাবীব হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।

শিশুটি আশঙ্কামুক্ত বলে জানিয়েছেন বেসরকারি মেডিকেল সিবিএমসিবির সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুজ্জামান। এ বিষয়টি নিশ্চিত করে তিনি বলেন, ‘শিশুটির সামগ্রিক অবস্থা আমরা পর্যবেক্ষণ করেছি। বর্তমানে শিশুটি ভালো আছে এবং আশঙ্কামুক্ত রয়েছে। বাচ্চাটির ডান হাতে দুইটি হাড় ভাঙা রয়েছে সেটির জন্য আলাদা চিকিৎসা করা হচ্ছে’।

এদিকে শনিবার রাতে শিশুটিকে দেখতে লাবীব হাসপাতালে যান ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এনামুল হক। এ সময় তিনি শিশুটির পাশে থাকার কথা জানিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় একই পরিবারের তিনজন মারা গেলেও আল্লাহর অশেষ রহমতে নবজাতকটি বেঁচে আছে এবং সুস্থ আছে। তার আপনজনদের হারালেও আমরা তার পাশে আছি।

শিশুটির বাবা নিহত জাহাঙ্গীর আলম যার সাথে থেকে তার ব্যবসা দেখাশোনা করতেন সেই শিপন রবিবার সকালে লাবীব হাসপাতালে থাকা অবস্থায় জানান, ‘শিশুটি এখন সুস্থ রয়েছে। এই শিশুর বাবা নিহত জাহাঙ্গীর শুধু আমার ব্যবসা দেখাশোনাই করতেন না, তিনি আমার ভাই ছিল। ব্যবসা আমার থাকলেও তিনিই সবকিছু সামাল দিতেন। আকিজ কোম্পানিতে বিভিন্ন মালামাল সাপ্লাই থেকে শুরু করে আমার বেশকয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তিনি দেখাশোনা করতেন।

তিনি আরও জানান, নিহত ওই দম্পত্তির আরও দুটি সন্তান জীবিত রয়েছে। তারা হলো সবার বড় মেয়ে জান্নাত (৭) ও ছেলে এবাদত (৫)। যে মেয়ে শিশুটি মারা গেছে তার নাম সানজিদা (৩)। গতকাল সবাই বড় মেয়ে মারা গেছে ভেবে তার বয়স ছয় বছর জানিয়েছিল।

শিপন আরও বলেন, এদের দেখাশোনা করার জন্য আমার পক্ষ থেকে যা করার প্রয়োজন সব করবো। এছাড়াও তার দাদা-দাদী, নানা-নানীরা রয়েছেন। এখানে যে মহিলাদের বাচ্চা হচ্ছে তাদের বুকের দুধ খাওয়ানো হচ্ছে এই শিশুটিকে।

শনিবার দুপুর আড়াইটার দিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ত্রিশাল কোট বিল্ডিং সংলগ্ন এলাকায় অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে নিয়ে ত্রিশাল উপজেলার রাইমনি গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম আল্ট্রাসনোগ্রাম করতে ত্রিশাল উপজেলা হাসপাতালের বিপরীতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক পাড়ি দিচ্ছিল। সাথে ছিল তার তিন বছরের এক মেয়ে। এসময় ট্রাকের চাপায় ঘটনাস্থলেই নিহত হয় তারা সবাই। অলৌকিক ভাবে বেঁচে যায় ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে মায়ের গর্ভ ফেটে বেড়িয়ে আসা নবজাতক শিশু।

মায়ের গর্ভ ফেটে স্বাভাবিক হিসেব করা সময়ের আগেই রাস্তায় জন্ম নেওয়া এই সন্তানের দায়িত্ব কে নেবে এটি নিয়েও চলছিল জল্পনা-কল্পনা।

নিহত এই দম্পতির একই পরিবারের এই তিন সদস্যের নামাজের জানাজা শনিবার রাত দশটায় অনুষ্ঠিত হয়। তাদের নিজ বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

সারাদেশ