প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে কোনো বাধা নেই পুনর্ব্যক্ত করে বলেছেন, এমনকি তারা যদি প্রধানমন্ত্রীর অফিসও ঘেরাও করতে আসে, গণতন্ত্রে বিশ্বাসী হিসেবে তিনি বিএনপি নেতাদের চা পানে আপ্যায়িত করবেন এবং ধৈর্য্য ধরে তাদের কথা শুনবেন।
‘আমি তাদের বসাবো, চা খাওয়া। কথা বলতে চাইলে শুনবো। কারণ, আমি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের সম্পাদকমন্ডলীর সঙ্গে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনসমূহের যৌথসভার শুরুতে এ কথা বলেন।
আজ বিকেলে বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এ সভায় গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী ভার্চুয়ালি যুক্ত হন।
কারও নাম উচ্চারণ না করে বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমিতো বলে দিয়েছি- তারা (বিএনপি) যদি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘেরাও করতে আসে, তাদের পুলিশ যেন বাধা না দেয়। বিশেষ করে বাংলামটরে যে বাধা দেওয়া, সেটা সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিয়েছি। আসুক না হেঁটে হেঁটে যতদূর আসতে পারে। কোনো আপত্তি নেই।’
বিএনপির মিছিলে লোক হয় না মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘আমি মনে করি, কারও না কারো তো কথা বলা উচিত। কথা যত পারে বলুক। যদিও সারাদিন কথা বলে, তথাপি তারা বলে আমাদের কথা বলতে দেয়নি। মিছিল করে লোক হয় না, বলে আমাদের লোক আসতে দেয় না। এ রকম অভিযোগ তো তারা করে। তাদের কাছে আসবে কেন? কোন আশায় আসবে। সেটা হলো বাস্তব কথা। সেটা একটু চিন্তা করতে হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ সব সময় যেকোন দুর্যোগ-দুর্বিপাকে মানুষের পাশে আছে। আওয়ামী লীগ সব সময় মানবতার সেবা করে যাচ্ছে। আর কিছু লোক সারাক্ষণ আমাদের দোষ-খুত ধরার চেষ্টায় থাকে।
তিনি বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় থাকা মানেই হচ্ছে দুর্নীতি, সন্ত্রাস, অর্থ-পাচার, মানবপাচার এই সব। যারা এসবের সঙ্গে যুক্ত থাকে তারা তো দেশের জন্য কাজ করবে না।
আজকে যারা নির্বাচন নিয়ে কথা বলে তাদের ব্যাপারেও বলতে চাই। বাংলাদেশে যদি নির্বাচনের ক্ষেত্রে কোন ডিসিপ্লিন এসে থাকে সেটাও আওয়ামী লীগেরই অর্জন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পর পর তিনবার ক্ষমতায় এসে আজকে আওয়ামী লীগের দেশ পরিচালনায় বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। ’৭৫ থেকে ২১ বছর যারা ক্ষমতায় ছিল তারা বাংলাদেশের মানুষকে কি দিয়েছে? আর দেশের জন্য কি করেছে? সেটা বাংলাদেশের মানুষের উপলব্ধি করা উচিত। এরা সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদ, দুর্নীতি, দুঃশাসন, মিলিটারি শাসন, গণতন্ত্র হরণ করেছে, জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। যত রকমের অপকর্ম করা যায় সবই করে গেছে।
তিনি বলেন, একমাত্র আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরই এদেশের জনগণ সেবা পেয়েছে। জনগণকে সেবা দিয়েছে, জনগণের সমর্থন পেয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে করোনার কারণে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা। সেই সাথে সাথে আরেকটা মন্দা দেখা দিয়েছে সমগ্র বিশ্বে সেটা হলো ইউক্রেন আর রাশিয়ার যুদ্ধ এবং আমেরিকার নিষেধাজ্ঞা। যে কারণে ডলারে কেনা-বেচা করা যাচ্ছে না। ডলারের দাম বেড়ে যাচ্ছে। জ্বালানির দাম বেড়ে যাচ্ছে, ভোজ্য তেলের দাম বেড়ে যাচ্ছে। উন্নত দেশগুলোতেও ঠিকমতো খাদ্য পাওয়া যাচ্ছে না। তারা সব জিনিসপত্র কেনার ক্ষেত্রে লিমিট করে দিচ্ছে যে, এর বেশি কিনতে পারবে না। সেখানে মূল্যস্ফীতি যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। তো এই অবস্থা সমগ্র বিশ্বব্যাপী। সেই ক্ষেত্রে আজকে আমরা সমগ্র বাংলাদেশে শতভাগ বিদ্যুৎ দিয়েছি। যেটা আমাদের ওয়াদা ছিল, আমরা রক্ষা করেছি।
তিনি বলেন, প্রতিটি উন্নত দেশ আজকে বিদ্যুৎ সাশ্রয় করছে। সেখানে লোডশেডিং হচ্ছে। ইউরোপ-আমেরিকা সব জায়গায় একই অবস্থা। সেটা কেউ দেখছেন না। কিন্তু আমাদের সমালোচনা করে যাচ্ছেন, এ কথা বলছেন, ও কথা বলছেন।
সরকার প্রধান বলেন, আওয়ামী লীগ সব সময় এদেশের জনগণের ভোটে বিশ্বাসী। আমরা সেটাই বিশ্বাস করি। সে জন্য নির্বাচন ব্যবস্থায় যতটা উন্নতি হয়েছে, সেটা আওয়ামী লীগের উদ্যোগেই হয়েছে।
আওয়ামী লীগের সমালোচনা যারা করে তাদের এই কথাই বলবো যে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত হয়, গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিত হয়। অর্থনৈতিক উন্নতি হয়। আর্থ-সামাজিক উন্নতি হয়।
যারা বলার তারা বলুক আমাদের কাজ আমরা করে যাবো। কারণ দেশের উন্নতিই আমাদের লক্ষ্য। সেই উন্নয়নের কাজটাই আমরা করবো। সেই কাজটিই আমরা করে যাচ্ছি। আমরা দেশটাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। সেটা ধরে রেখে এগিয়ে নিয়ে যাবো।
আজকে সবাই মিলে সঞ্চয় করতে হবে, কৃচ্ছতা সাধন করতে হবে। বিদ্যুৎ ব্যবহার সীমিত করতে হবে, উল্লেখ করেন তিনি।