নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলায় চট্টগ্রামমুখী মহানগর প্রভাতী ট্রেনের সঙ্গে মাইক্রোবাসের ধাক্কা লাগে। ট্রেন মাইক্রোবাসটিকে প্রায় এক কিলোমিটার ঠেলে নিয়ে যায়। ঘটনাস্থলেই মারা যান ১১ জন। আহত হন ৯ জন। তাদের গুরুতর অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। রেলক্রসিংয়ের গেটম্যান সাদ্দামকে আটক করেছে পুলিশ। খৈয়াছড়া ঝরনা নামের পর্যটন স্পট থেকে ফেরার পথে গতকাল বেলা দেড়টায় মিরসরাই বড়তাকিয়া রেলস্টেশনের কাছে মাইক্রোবাসটি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে।
মিরসরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কবির হোসেন জানান, ট্রেনটি বড়তাকিয়া ক্রস করার সময় লাইনে উঠে যায় মাইক্রোবাসটি। এ সময় ইঞ্জিনের ধাক্কায় মাইক্রোবাসটি কিছুদূর চলে যায়। এতেই মর্মান্তিক এ দুর্ঘটনা ঘটে। ফায়ার সার্ভিসের লোকজন এসে উদ্ধার কাজ সম্পন্ন করেছেন। এর মধ্যে আহতদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। হতাহত সবাই মাইক্রোবাসের যাত্রী এবং হাটহাজারী উপজেলার বাসিন্দা। আরএনজে নামক একটি কোচিং সেন্টারের সঙ্গে জড়িত।
নিহতরা হলেন- হাটহাজারী আমানবাজার এলাকার মো. মহিউদ্দিন মনসুরের ছেলে মো. মাহিন (১৮), একই এলাকার আবদুর রহিমের ছেলে তানভীর হাসান (১৮), জিসান, সজীব, রাকিব, রেদোয়ান, কেএস নজুমিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী হিশাম, আয়াত, মারুফ, তাসফির ও মাইক্রোবাসচালক গোলাম মোস্তফা নিরু (২৮)। মর্মান্তিক এ দুর্ঘটনায় চট্টগ্রাম বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আহ্বায়ক করা হয়েছে বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা (ডিটিও) মো. আনছার আলীকে। কমিটির সদস্যরা হলেন- বিভাগীয় নির্বাহী প্রকৌশলী-১ আবদুল হামিদ, বিভাগীয় মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার (লোকো) জাহিদ হাসান, রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর (আরএনবি) কমান্ড্যান্ট রেজানুর রহমান এবং বিভাগীয় মেডিকেল অফিসার (ডিএমও) মো. আনোয়ার হোসেন। এই কমিটিকে বিস্তারিত তথ্য-উপাত্তসহ দ্রুত সময়ের মধ্যেই রিপোর্ট দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মো. জাহাঙ্গীর হোসেন। চট্টগ্রাম বিভাগীয় তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা (ডিটিও) মো. আনছার আলী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এই ঘটনাটি কীভাবে ঘটেছে, দোষী কারা সেই বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরা হবে। তবে তদন্ত রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দিষ্ট কোনো সময় বেঁধে না দিলেও যত দ্রুত সম্ভব রিপোর্ট দাখিল করা হবে। ইতোমধ্যে তদন্ত কাজ শুরু করেছি। চেষ্টা করছি তিন-চার দিনের মধ্যেই দাখিল করা হবে। শুনেছি, ‘ট্রেনটি বড়তাকিয়া ক্রস করার সময় লাইনে উঠে যায় মাইক্রোবাসটি। এ সময় ইঞ্জিনের ধাক্কায় মাইক্রোবাসটি কিছুদূর চলে যায়। লেভেল ক্রসিংয়ের বাঁশ ঠেলে মাইক্রোবাসটি লাইনে উঠে গেলে এ দুর্ঘটনা ঘটে।’ আরেকটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া চলছে বলে জানা গেছে।
এদিকে সব আইনি প্রক্রিয়া শেষে ১১টি লাশ পরিবারের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করেছে রেলওয়ে পুলিশ। রেলওয়ে পুলিশ সুপার হাছান চৌধুরী এ তথ্য নিশ্চিত করেন।