রাজধানীর কারওয়ান বাজারে ছিনতাইকারীর হাতে মুঠোফোন হারানোর কিছুক্ষণের মধ্যে অপর দুই ছিনতাইকারীকে ধরেছিলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী। স্নাতকোত্তরের ওই ছাত্রীর গবেষণার জন্য সংগৃহীত তথ্য–উপাত্ত সংরক্ষিত ছিল মুঠোফোনে। সেটি না পাওয়া গেলে তাঁর পড়াশোনা বিঘ্নিত হবে জানিয়ে পুলিশের প্রতি মুঠোফোনটি উদ্ধারে জোরালো প্রচেষ্টার অনুরোধ জানিয়েছিলেন তিনি।
তাঁর অনুরোধে সাড়া দিয়ে কারওয়ান বাজার ও এর আশপাশের এলাকায় চুরি–ছিনতাইয়ে জড়িত অভিযোগে ২৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তবে এখনো ওই ছাত্রীর মুঠোফোনের হদিস করতে পারেনি তারা।
আলোচিত এ ঘটনায় তেজগাঁও থানা–পুলিশের পাশাপাশি ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশও তৎপর রয়েছে। তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেছেন, গ্রেপ্তার ২৭ জন কারওয়ান বাজার ছাড়াও ফার্মগেট, তেজগাঁও ট্রাকস্ট্যান্ড ও এফডিসি এলাকাকেন্দ্রিক চুরি-ছিনতাইয়ে জড়িত। সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে ওই ছাত্রীর মুঠোফোন ছিনিয়ে নেওয়া ব্যক্তিকেও শনাক্ত করতে পেরেছেন তাঁরা। তাঁকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। তবে মুঠোফোনটি বন্ধ থাকায় সেটার বিষয়ে কোনো কিছু জানা যায়নি।
২১ জুলাই গবেষণার কাজে সকালে রাজধানীর সদরঘাট থেকে মিরপুর চিড়িয়াখানা গিয়েছিলেন জগ্ননাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী পারিশা আকতার। সারা দিন কাজ করে তানজিল পরিবহনের একটি বাসে করে ফেরার সময় কারওয়ান বাজার এলাকা থেকে এক ছিনতাইকারী তাঁর মুঠোফোন ছিনিয়ে নেন। ওই ছিনতাইকারীকে ধাওয়া করে ধরতে পারেননি তিনি। তবে আরেকজনের মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে পালানোর সময় এক ছিনতাইকারীকে ধরে ফেলেন। কৌশলে ওই ছিনতাইকারীর এক সহযোগীকেও আটক করা হয়। পরে দুই ছিনতাইকারীকে পিটিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেন ওই শিক্ষার্থী। পরে গত রোববার ছিনতাইয়ের ঘটনায় থানায় মামলা করেন তিনি।
পারিশা আকতার আজ শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর মুঠোফোন ছিনিয়ে নেওয়া ব্যক্তিকে দ্রুত গ্রেপ্তার করা হবে বলে পুলিশ আশ্বাস দিয়েছে। বলেছে, মুঠোফোনটি উদ্ধার করে তাঁকে ফিরিয়ে দেওয়া হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে তেজগাঁও থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শাহ আলম আজ শনিবার বলেন, ‘সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে সন্দেহভাজন ছিনতাইকারীকে আমরা শনাক্ত করেছি। তাঁকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।’ মুঠোফোন উদ্ধার না হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মুঠোফোনটি বন্ধ করে রাখা হয়েছে। এ কারণে উদ্ধার করা যাচ্ছে না।
ডিবি সূত্র জানায়, কারওয়ান বাজার, ফার্মগেট, তেজগাঁও ট্রাকস্ট্যান্ড ও এফডিসি এলাকায় চুরি–ছিনতাই ও পণ্যবাহী ট্রাকে ডাকাতিতে তিনটি গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। এই গ্রুপগুলোয় অর্ধশতাধিক লোক রয়েছে। তাদের মধ্যে ১০–১২ বছর বয়সী শিশুরাও রয়েছে। তারা পথচারী, রিকশা আরোহী, সিএনজি অটোরিকশা ও বাসযাত্রীদের মোবাইল, টাকাসহ দামি জিনিসপত্র ছিনতাই করেন।
আরও পড়ুন
একাই দুই ছিনতাইকারীকে ধরেছি, পুলিশ কেন বাকিদের ধরতে পারবে না: বিশ্ববিদ্যালয়ছাত্রী
ছিনতাইকারীকে ধরার পর পুলিশ সদস্যের সঙ্গে কথা বলছেন বিশ্ববিদ্যালয়ছাত্রী
কারওয়ান বাজারকেন্দ্রিক চুরি–ছিনতাইয়ের একটি গ্রুপ পরিচালনা করেন লোকমান ওরফে ভোলা লোকমান। তাঁকে গ্রেপ্তার করেছে ডিবির তেজগাঁও বিভাগ। তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আরও আট ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়। ডিবি ছিনতাইকারীদের আরেকটি গ্রুপের পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে। তবে গ্রেপ্তারকৃত এই দুই দলের সদস্যরা ওই শিক্ষার্থীর মুঠোফোন ছিনতাই করেনি বলে তথ্য পেয়েছে ডিবি।
সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলেছেন, কারওয়ান বাজারকেন্দ্রিক তৃতীয় আরেকটি গ্রুপের কোনো সদস্য ওই শিক্ষার্থীর মুঠোফোন চুরি করে থাকতে পারেন। ওই দলের প্রধানসহ সাতজনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে। তাঁদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।