করোনার প্রকোপ কমে আসার পর অর্থনীতি পুনরুদ্ধার যখন গতি পাচ্ছিল, তখন সরবরাহ ব্যবস্থায় বিপর্যয় ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যের অস্বাভাবিক দাম বেড়ে যায়। এ কারণে জীবনযাত্রার ব্যয় নিয়ে নাকাল অবস্থায় রয়েছেন দেশের সাধারণ মানুষ। ব্যয় সামাল দিতে না পেরে ভোগ কমিয়ে কোনোরকমে জীবন টিকিয়ে রাখতে হিমশিম খাচ্ছেন স্বল্প ও নিম্নআয়ের মানুষ। এমন পরিস্থিতির মধ্যেই জ্বালানি তেলের রেকর্ড মূল্যবৃদ্ধি কষ্টে থাকা মানুষের দুর্ভোগ আরও বাড়াবে।
এক ধাক্কায় জ্বালানি তেলের প্রায় ৫০ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধির কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যের দাম বেড়ে গিয়ে অসহনীয় পরিস্থিতি তৈরি করবে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। এর ফলে সাম্প্রতিক সময়ে বাড়তে থাকা মূল্যস্ফীতির পারদ এবার দুই অঙ্কের ঘরে যাওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করছেন তারা। এ ছাড়া উৎপাদন ব্যয় আরও বেড়ে গিয়ে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে শিল্পকারখানায়। পণ্য মূল্য বেড়ে গিয়ে দেশের রপ্তানি খাত প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়বে বলেও মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।
জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব সম্পর্কে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) চেয়ারম্যান ড. গোলাম রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, মূল্যস্ফীতি তো বাড়ছে, এখন ১০ শতাংশ বা তার চেয়ে বেশি হবে। স্বাভাবিকভাবেই যাদের আয় সে হারে বাড়বে না, তাদের অবস্থার দ্রুত অবনতি হবে। বিশেষ করে নিম্নবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত, নির্ধারিত আয়ের মানুষ ও পেনশনভোগীরা এ দুর্ভোগে পড়বে। যারা সঞ্চয়পত্র ও স্থায়ী আমানতের আয় দিয়ে চলেন, তাদের জীবনমান ও জীবন ধারণে ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এর ফলে সরকারের যে অনেক বড় বড় অর্জন আছে তা মøান হয়ে যাবে। একটা অশান্ত, অস্বস্তিকর পরিস্থিতি অর্থনীতি এবং রাজনীতিতে পড়াটাও বিচিত্র কিছু হবে না।
তিনি আরও বলেন, ‘কাদের সন্তুষ্ট করার জন্য তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে বুঝতে পারছি না। সম্ভবত আইএমএফকে সন্তুষ্ট করার জন্য করা হয়েছে। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো কোনোভাবেই যৌক্তিক বলে মনে হয় না। পর্বতসম ভুল সিদ্ধান্ত। এর আগে সারের দাম বাড়ানো হয়েছে। সব সিদ্ধান্তই হচ্ছে সাধারণ মানুষের ভোগান্তির জন্য। কোনো সিদ্ধান্তই সাধারণ মানুষকে স্বস্তির সংবাদ দিচ্ছে না।’
বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম যখন কমছে, তখন হঠাৎ করে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ দাম বাড়িয়ে সাধারণ মানুষকে চাপের মুখে ঠেলে দিয়েছে সরকার। পাল্টে দিয়েছে অর্থনীতির সব হিসাবনিকাশ। এর প্রভাব নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীরা। জীবনযাত্রা ও অর্থনীতির এমন কোনো খাত নেই, যেখানে এর প্রভাব পড়বে না। সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়বে কৃষি, পরিবহন ও শিল্পে। মাত্র কয়েক দিন আগেই সারের মূল্য বাড়ানো হয়েছে। এখন ডিজেলের মূল্য প্রায় ৪৩ শতাংশ বাড়ায় কৃষির উৎপাদন ব্যয় ব্যাপক হারে বাড়বে। আবার পরিবহন ব্যয় বাড়ায় সব ধরনের পণ্যমূল্য নতুন করে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ বাড়তে পারে বলে ধারণা করছেন অর্থনীতিবিদরা।
তেলের মূল্যবৃদ্ধির এ চাপ দেশের অর্থনীতি নিতে পারবে কি-না, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। ভর্তুকি কমাতে সরকারের এমন পদক্ষেপ বুমেরাং হয়ে দেখা দিতে পারে। আইএমএফের ৪৫০ কোটি ডলারের ঋণ পেতে জ্বালানি তেলের এমন মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব দেশের অর্থনীতির কয়েকগুণ বেশি ক্ষতির কারণ হতে পারে।
ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, শিল্পের উৎপাদন ব্যয় বেড়ে গিয়ে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা হারাতে পারে রপ্তানি খাত, যা উল্টো দেশের বিদেশি মুদ্রা আয়ের খাতটি সংকুচিত করতে পারে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বাড়তে থাকা নিত্যপণ্যের দামের সঙ্গে বেড়েছে নিত্যব্যবহার্য পণ্য, পানি, গ্যাস ও শিক্ষা উপকরণের দাম। সব মিলিয়ে জীবনযাত্রার ব্যয় ইতিমধ্যেই অনেকটা বেড়ে গেছে। কিন্তু অনেকের আয়ই বাড়েনি। ফলে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন সীমিত আয়ের মানুষ। গত আড়াই বছরে মোটা চালের দাম ৩০ টাকা থেকে ৪৮ টাকায় উঠেছে। ২৮ টাকার খোলা আটা ৪৮ থেকে ৫০ টাকা। ৮৬ টাকা লিটারের খোলা সয়াবিন তেল কিছুটা দাম কমে এখন ১৮৫ টাকা। মসুর ডাল এখন ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকা। ৬২ টাকার চিনি এখন বিক্রি হচ্ছে ৮৫ টাকায়। এখন ডিজেলের দাম বাড়ায় এসব পণ্যের দাম নতুন করে বাড়তে শুরু করেছে, যা জীবনধারণ আরও কঠিন করে তুলবে।
উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে ব্যয় সামলাতে গিয়ে দেশের মানুষের সঞ্চয়ও কমে গেছে। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০২২ অনুযায়ী, মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) তুলনায় দেশজ সঞ্চয় কমে আসছে। অর্থাৎ জিডিপি যে হারে বাড়ছে, সঞ্চয় সেভাবে বাড়ছে না। ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশজ সঞ্চয় ছিল ২৭ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ, গত ২০২১-২২ অর্থবছরে তা কমে হয়েছে ২১ দশমিক ৫৬ শতাংশ।
মূল্যস্ফীতি চলতি বছর ধারাবাহিকভাবে বাড়তে থাকার পর গত জুলাইতে মূল্যস্ফীতি সামান্য কমে ৭ দশমিক ৪৮-এ নেমেছে। এ ছাড়া বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যগুলোর দামও কিছুটা কমতে শুরু করেছে। কিন্তু মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার বড় ধরনের অবমূল্যায়নের কারণে সে সুফল পাচ্ছেন না দেশের মানুষ। এখন দেশে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যমূল্য কমলেও দেশে বাড়তি মূল্যেই সব ধরনের পণ্য কিনতে হবে। অর্থনীতিবিদদের ধারণা, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির প্রভাবে সবধরনের পণ্যের দাম যে হারে বাড়বে, তা মূল্যস্ফীতি ২ থেকে ৩ শতাংশ বাড়িয়ে দেবে।
এদিকে মূল্যস্ফীতি বাড়তে থাকলে তা দেশের ব্যাংকিং খাতকেও ঝুঁকিতে ফেলবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, যদি মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করা হয়, তবে যে সর্বোচ্চ সীমা আছে তা তুলে দিতে হবে। ফলে ঋণের সুদহারও বাড়াতে হবে। এটিও শিল্পের উৎপাদন ব্যয় বাড়াবে।
কৃষি জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির বহুমুখী প্রভাব পড়বে কৃষি খাতে। মাত্র কয়েক দিন আগেই ইউরিয়া সারের দাম প্রতি কেজিতে ৬ টাকা বাড়িয়েছে সরকার। এখন ডিজেলের প্রায় ৪৩ শতাংশ দাম বাড়ানোয় সেচের খরচ ব্যাপক হারে বাড়বে, যা কৃষির উৎপাদন ব্যয় বাড়িয়ে তুলবে। এ ছাড়া পরিবহন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদিত পণ্য হাতবদল হয়ে বাজারে পৌঁছাতেও আগের চেয়ে অনেক বেশি অর্থ গুনতে হবে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই কৃষিপণ্যের দাম অনেক বেশি বাড়বে।
পরিবহন ব্যয় যাত্রী পরিবহনে সরকার ভাড়া নির্ধারণ করে দিলেও পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। স্থল ও নৌপথে পণ্য পরিবহনে ডিজেল প্রধান জ্বালানি এবং এই জ্বালানি দামের ওপর নির্ভর করেই পণ্য পরিবহনের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়। ডিজেলের দাম ৪৩ শতাংশ বাড়ায় এখন পরিবহন ব্যয় অন্তত ২০ শতাংশ বাড়বে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতির চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হোসেন।
বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান পণ্য পরিবহন মালিক সমিতির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. দেলোয়ার হোসেন দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, ‘ইতিমধ্যেই ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে আপ-ডাউনে কাভার্ড ভ্যানপ্রতি ৫ হাজার টাকা করে ব্যয় বেড়ে গেছে। এর সঙ্গে চাকা, মবিলসহ পরিবহনসংশ্লিষ্ট সব কিছুর ব্যয়ও বেড়ে গেছে। ভাড়া নির্ধারণের বিষয়ে আমরা আজ বৈঠকে বসব।’ ডিজেলের যে পরিমাণ দাম বেড়েছে, আনুপাতিক হারে ভাড়াও বাড়বে বলে জানান তিনি।
উৎপাদন ব্যয় বাড়বে শিল্পকারখানায় গ্যাস সংকটের কারণে গত কয়েক মাস ধরেই দেশের অনেক শিল্পকারখানায় বিদ্যুৎ উৎপাদনে ডিজেল ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এখন ডিজেলের ব্যয় বাড়ায় এসব শিল্পকারখানায় উৎপাদন ব্যয় বাড়বে। গত শুক্রবারের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিসহ গত নয় মাসে ডিজেলের দাম ৭৫ শতাংশ বেড়ে যাওয়ায় পরিবহন খরচ প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। এ কারণে অন্য সব কোম্পানির মতো কোম্পানির মালিকদের কপালেও চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। উৎপাদন ও বিপণন পর্যায়ে খরচ যতটুকু বাড়ছে, তা পণ্যমূল্য বাড়িয়ে সমন্ব^য় করা যাবে কি-না, সে বিষয়ে নিশ্চিত নন উদ্যোক্তারা।
এদিকে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির পর বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ানোর যে ইংগিত রয়েছে, তা শেষ পর্যন্ত কার্যকর হলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে বলে আশঙ্কা করছেন কোম্পানির উদ্যোক্তা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা। তারা জানান, শিল্পে জ্বালানি তেলের সরাসরি ব্যবহার কম। কারখানা ও অফিস চলে বিদ্যুৎ ও গ্যাসে। কিন্তু কাঁচামাল ও উৎপাদিত পণ্য ভোক্তা পর্যন্ত পৌঁছাতে পরিবহন ব্যবস্থা পুরোপুরি তেলনির্ভর। এর ফলে পণ্যমূল্য বাড়বে। এতে পণ্য বিক্রি কমবে এবং মুনাফায় নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। পণ্যের বাড়তি মূল্য ক্রেতাকেই বহন করতে হবে।
প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ার শঙ্কা রপ্তানি খাতের জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে শিল্পে ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় পণ্যের উৎপাদন খরচও বাড়বে। এতে করে রপ্তানি প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়তে পারে বাংলাদেশ। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে এমনিতেই দেশের রপ্তানি গন্তব্যের প্রধান দুই অঞ্চল আমেরিকা-ইউরোপ বড় ধরনের সংকটের মধ্যে রয়েছে। যুদ্ধের প্রভাবে ইতিমধ্যে সেসব দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি দেখা দিয়েছে। ওই অঞ্চলের মানুষ পোশাক কেনা কমিয়ে দিয়েছেন। রপ্তানি আদেশও কমছে। এতে দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্প এমনিতেই সংকটে রয়েছে। এরমধ্যে দেশে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় কাঁচামাল আমদানিনির্ভর পোশাক শিল্পের ব্যয় উল্লেখযোগ্য হারে বাড়বে। ফলে উৎপাদিত পোশাকের দাম বেড়ে যাওয়ায় প্রতিযোগী দেশের তুলনায় রপ্তানিতে পিছিয়ে পড়বে বলে জানিয়েছেন রপ্তানিকারকরা।
ফের অনিশ্চয়তায় আবাসন ও নির্মাণ খাত করোনার পর কিছুদিন চাঙ্গাভাব ফিরে এলেও ফের অনিশ্চয়তায় পড়েছে আবাসন ও নির্মাণ খাত। আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের দাম বাড়ায় গত এক বছরে রড, সিমেন্ট, ইটসহ নির্মাণশিল্পের সব উপকরণের দাম বেড়েছে। ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নও এ খাতের কাঁচামালের দাম বাড়াতে ভূমিকা রেখেছে। এখন ডিজেলের দাম বাড়ায় পরিবহন ব্যয় বাড়বে। ফলে নির্মাণ ও আবসান খাত আরও ব্যয়বহুল হয়ে পড়বে। নির্মাণসামগ্রীর দাম বাড়ায় সরকারি প্রকল্পগুলোর ব্যয়ও বাড়বে।
সিমেন্ট কোম্পানিগুলো জানিয়েছে, ডিজেলের নতুন মূল্যবৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে প্রতি বস্তা সিমেন্টের দাম ৩০ থেকে ৪০ টাকা বাড়তে পারে।
রড উৎপাদক প্রতিষ্ঠান বিএসআরএম গ্রুপের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন সেনগুপ্ত দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের কারখানায় জেনারেটর চালাতে ডিজেল ব্যবহার হয়। তবে সবচেয়ে বেশি ডিজেল ব্যবহার হয় পণ্য সরবরাহে। এতে করে উৎপাদন ব্যয় বাড়ার পাশাপাশি পণ্য সরবরাহ ব্যয়ও বাড়বে। ঠিক কী পরিমাণে ব্যয় বাড়বে, তা আমরা এখন হিসাব করছি।’
জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার বিষয়ে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এটা দুই ধরনের প্রভাব ফেলবে। এগুলোর একটি হলো স্বল্পমেয়াদি প্রভাব, অন্যটি দীর্ঘমেয়াদি। দীর্ঘ মেয়াদে এটি ইতিবাচক হবে। স্বল্প মেয়াদের প্রভাব হবে নেতিবাচক। স্বল্প মেয়াদে যেটি হবে, অবশ্যই মূল্যস্ফীতি বাড়বে। জ্বালানি খাতের, বিশেষ করে পরিবহন খাতের ব্যয় বাড়বে। পণ্য পাঠানো থেকে শুরু করে সব খাতে ব্যয় বাড়বে। সার্বিক মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাবে।’ তিনি বলেন, পরিবহন খাতের ব্যয় ১৫ থেকে ২০ শতাংশ বেড়ে যেতে পারে। এটা বড় কস্ট ইম্প্যাক্ট হবে। মোটের ওপর ভোগ ব্যয় ২ থেকে ৩ শতাংশ বেড়ে যাবে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, বোঝা চাপবে কার ওপর। মাথাপিছু ঋণের ওপর অবশ্যই চাপ পড়বে।
আহসান এইচ মনসুর বলেন, মূল সমস্যা হবে নিম্ন মধ্যম আয়ের লোকদের জন্য, যারা প্রতিদিন বাস ব্যবহার করে অফিসে যান। তাদের বোঝাটা অনেক বেশি হবে। যাদের ছেলেমেয়েরা বাসে করে স্কুল-কলেজে যায় তাদের ওপর প্রভাব পড়বে। রিকশা ভাড়া থেকে শুরু করে সবকিছুই বাড়বে। আর ইতিবাচক দিকটা হলো, সরকারের ব্যয়টা সাশ্রয় হবে। ভর্তুকি কমবে। তেলের সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন থাকবে। তিনি বলেন, একই সঙ্গে রিজার্ভের ওপর যে চাপ আছে তা কমবে। তেলের আমদানিটা কমে যাবে, ফলে এটি সাশ্রয়ী হয়ে দেশের অর্থনীতিকে সুবিধা দেবে। সর্বসাকল্যে উপকার হবে সরকারের। সরকারকে টাকা ধার করতে হবে কম। শেষ পর্যন্ত আইএমএফের সঙ্গে যদি আলোচনায় বসতে চায় সরকার, এটা একটা বড় ইতিবাচক দিক হবে। ভবিষ্যতে যদি তেলের দাম বিশ্ববাজারে কমে, তবে বাজারের সঙ্গে মিল রেখে কমানোই ভালো বলে তিনি মনে করেন