নিজস্ব প্রতিবেদক
আজ ১০ মহররম, পবিত্র আশুরা। ধর্মপ্রাণ মুসলমান, ইহুদি ও খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের কাছে আজকের দিনটি বিশেষভাবে মহিমান্বিত। হিজরি ৬১ সনের এ দিনে আল্লাহর প্রিয় নবী ও রসুল হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রিয় দৌহিত্র হজরত ইমাম হোসাইন (রা.) পবিত্র ইসলামের বিধান সমুন্নত রাখতে গিয়ে কারবালা প্রান্তরে সপরিবারে শাহাদাতবরণ করেন। কারবালার শোকাবহ ঘটনার কারণে ত্যাগ ও শোকের প্রতীক হিসেবে দিনটি পালন করা হয় মুসলিম বিশ্বে। শান্তি ও সম্প্রীতির ধর্ম ইসলামের মহান আদর্শকে সমুন্নত রাখতে এই আত্মত্যাগ মানবতার ইতিহাসে সমুজ্জ্বল হয়ে রয়েছে। এ ছাড়া ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক নানা ঘটনাবলির কারণে এ দিনের তাৎপর্য বহুমুখী। মদিনায় হিজরত করার পর থেকেই আল্লাহর প্রিয় নবী ও রসুল হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর নির্দেশে পবিত্র আশুরা উপলক্ষে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা আশুরার রোজা রেখে আসছেন। তবে আশুরার দিন ইহুদিরাও রোজা রাখে বলে নবীজি (সা.) তাদের সঙ্গে পার্থক্য করতে আশুরার আগের দিন বা পরের দিন মিলিয়ে দুই দিন রোজা রাখার আহ্বান জানান। উম্মতে মোহাম্মদী আশুরা উপলক্ষে রোজা রাখাসহ নফল ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে দিনটি পালন করে থাকেন। সৌদি আরবে এ উপলক্ষে ৯, ১০ ও ১১ মহররম রোজা পালনের নির্দেশনা জারি করেছেন হারামাইন কর্তৃপক্ষ। বিশে^র অন্যান্য মুসলিম দেশের মতো বাংলাদেশও যথাযোগ্য মর্যাদা ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভির্যের সঙ্গে দিনটি পালনে নানা কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। পবিত্র আশুরা উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। এ উপলক্ষে আজ সরকারি ছুটি। ইসলামিক ফাউন্ডেশনসহ দেশের বিভিন্ন ধর্মীয় সংগঠন আলোচনা সভাসহ নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। প্রতিবছর কারবালার শোকাবহ ঘটনা উপলক্ষে রাজধানী ঢাকাসহ দেশব্যাপী তাজিয়া বা শোক মিছিল বের করা হয়। এবার রাজধানীর হোসনি দালানসহ বিভিন্ন স্থান থেকে তাজিয়া মিছিল বের হবে। এ মিছিলে নিরাপত্তা নিশ্চিত ও চলাচল নির্বিঘ্ন করতে তাজিয়া মিছিলে দা, ছোরা, কাঁচি, বর্শা, বল্লম, তরবারি, লাঠি ইত্যাদি নিয়ে অংশ গ্রহণের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।
ইতিহাস মতে, হিজরি ৬১ সনের আশুরার দিনেই কারবালা প্রান্তরে সংঘটিত হয় মর্মান্তিক কারবালা ট্র্যাজেডি। ইসলামের বিধান সমুন্নত রাখতে গিয়ে শাহাদতবরণ করেন আল্লাহর প্রিয় নবী ও রসুল হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রিয় দৌহিত্র হজরত ইমাম হোসাইন (রা.)। কারবালা প্রান্তরে সমবেত আহলে বাইতের সদস্যদের ১০ দিন ধরে অবরুদ্ধ করে রাখে মদ্যপ ও ব্যভিচারী এজিদের বাহিনি। খাদ্য ও পানিবিহীনভাবে অবরুদ্ধ থেকেও পবিত্র কোরআনের শিক্ষা ও ইসলামের আহকাম রক্ষায় হজরত ইমাম হোসাইন (রা.) কোনো আপস করেননি। এজিদকে ইসলামের খলিফা হিসেবে স্বীকৃতি না দেওয়ার অপরাধে নির্মমভাবে সপরিবারে হত্যা করা হয় হজরত ইমাম হোসাইনকে (রা.)। সেদিন তাঁর সঙ্গে শাহাদাতবরণ করেন শিশুপুত্র আলী আজগর, নিকটাত্মীয়, আহলে বাইতের সদস্য ও অনুরাগীসহ ৭২ জন ধর্মানুরাগী। ইতিহাস বলে, পবিত্র আশুরার দিনে আদি পিতা আদম (আ.) ও মা হওয়া (আ.) আরাফার ময়দানে আল্লাহর ক্ষমা লাভ করেছিলেন। এই ১০ মহররম আল্লাহর হুকুমে নীলনদ বিভাজিত হয় ও ফেরাউনের কবল থেকে অনুসারীদের নিয়ে হজরত মুসা (আ.) পরিত্রাণ লাভ করেন। হজরত ইউনূস (আ.) মাছের পেট থেকে উদ্গিরণের মাধ্যমে পরিত্রাণ লাভ করেন। ষড়যন্ত্রকারীরা হজরত ঈসা (আ.) কে হত্যা করতে উদ্যত হলে আল্লাহ হুকুমে তাঁকে আকাশে তুলে নেওয়া হয়। আল্লাহর হুকুমে এদিনেই তিনি পৃথিবীতে ফিরে আসবেন। বিশ্বাস করা হয়, আশুরার দিনেই কিয়ামত সংঘটিত হবে।