ওষুধেরও বাড়তি দাম, দিশেহারা মানুষ

ওষুধেরও বাড়তি দাম, দিশেহারা মানুষ

লাগামছাড়া মূল্যবৃদ্ধিতে দিশেহারা মানুষ। রান্নার গ্যাস, ভোজ্যতেল, নিত্যপণ্য তো ছিলই, এরপর সার, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পর এবার ওষুধ নিয়েও উদ্বিগ্ন সাধারণ মানুষ। আশঙ্কা, আকাশ ছুঁতে চলেছে ওষুধের দাম। দৈনন্দিন ব্যবহারের জিনিসের মূল্যবৃদ্ধিতে স্বস্তি তো ছিলই না, এখন ওষুধের বাড়তি দামে বাড়ছে অস্বস্তি। গত একমাসে ১৫ থেকে ৭৫ শতাংশ হারে বেড়েছে ওষুধের দাম। যার ফলে পকেটে টান পড়ছে সাধারণ মানুষের। কার্যত এত দাম দিয়ে ওষুধ কিনতে গিয়ে নাভিশ্বাস উঠছে তাদের। ওষুধের বাড়তি দাম ওষুধ ব্যবসায়ীদের কপালেও চিন্তার ভাজ ফেলেছে। তারা জানাচ্ছেন বর্ধিত দামে ক্রেতারা সন্তুষ্ট হতে পারছেন না। ফলে তাদের ব্যবসাতেও একটা বড় ধরনের প্রভাব পড়ছে। এই মূল্যবৃদ্ধি অস্বস্তিতে ফেলেছে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়কেই।

গাইবান্ধার ডিবি রোডের ট্রাফিক মোড় এলাকার রেজিয়া মেডিকেল স্টোরের ওষুধ বিক্রেতা মিজানুর রহমান মির্জা জানান, গত এক মাসের বেশি সময় ধরে বেশকিছু ওষুধের দাম বেড়েছে। এর মধ্যে প্যারাসিটামল ছাড়াও লোসারটান পটাসিয়াম, এমলোডিপিন এটেনোললসহ ওমিপ্রাজল গ্রুপের বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ওষুধের ১৫ থেকে ৭৫ শতাংশ দাম বেড়েছে। এছাড়াও কোম্পানিগুলো বাজারে সরবরাহ সীমিত করে প্রায় সকল ওষুধেরই দাম বাড়ানোর ফন্দি আঁটছে।

একই এলাকার মন্ডল মেডিকেল স্টোরের শরিফুল কবির রনি জানান, দাম বাড়বে বলে গত মাসে বাজারে প্যারাসিটামল গ্রুপের কিছু ওষুধ পাওয়া যাচ্ছিল না। খুবই অত্যাবশ্যকীয় এ ওষুধের জন্য রোগীদের বেশ দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। এর কিছুদিন পর বর্ধিত দামে পুনরায় ওষুধগুলো বাজারে ছেড়েছে কোম্পানিগুলো। এর বাইরে আরও কিছু ওষুধের দামও বেড়েছে।

শহরের বিভিন্ন এলাকার ফার্মেসির ওষুধ বিক্রেতারা জানিয়েছেন, দাম বাড়ানোর আগে ওষুধ কোম্পানিগুলো প্রয়োজনীয় ওষুধের সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। পরে দাম বাড়লে এসব ওষুধ বাজারে ছাড়ে। এরকম কিছু ওষুধের সংকট এখনো আছে। ৮ টাকার এক পাতা নাপা এখন ১২ টাকা করেছে। ৫০ শতাংশ দাম বেড়েছে। নাপা সিরাপ ২০ টাকা, সেটা বিক্রি হচ্ছে ৩৫ টাকায়। এটাও ৭৫ শতাংশ দাম বেড়েছে। বেনজোডায়াজেপিন জেনেরিক নামের ঘুমের ওষুধ ডায়াজেপাম ইনজেকশন আগে ছিল ১১০ টাকা, এখন ৩৬ শতাংশ দাম বেড়ে হয়েছে ১৫০ টাকা।

অ্যাসপিরিন জেনেরিক নামের ইকোস্পিরিন ট্যাবলেটের দাম বাড়বে বলেও জানিয়েছেন দোকানিরা। চর্মরোগের মলম ৩৪ টাকার গ্যাকোজিমার ১৩ শতাংশ দাম বেড়ে হয়েছে ৪০ টাকা। এপিনেফ্রিন জেনেরিকের এ্যাড্রিন ইনজেকশনের দাম ছিল ১৬০ টাকা। ৩১ শতাংশ দাম বেড়ে সেটা বিক্রি হচ্ছে ২১০ টাকায়।

অন্যদিকে ক্রেতারা বলছেন, খাদ্য-শস্য, সব্জিসহ নিত্যপণ্যের দাম রীতিমতো নাভিশ্বাস তুলেছে তাদের। তার সঙ্গে যোগ হয়েছে ওষুধ। বাজারে প্রচলিত বহু ওষুধের দামই গত দুই বছরে বেশ কয়েকবার বেড়েছে। অত্যন্ত ধীরে ধীরে এই দাম ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় টনক হয়তো নড়েনি, কিন্তু মধ্যবিত্তের যাপিতজীবনে ঠিকই এর প্রভাব পড়েছে।

তারা বলছেন, উদ্বেগের বিষয় হলো, ওষুধের দাম বৃদ্ধির এই প্রবণতা কমার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। করোনাকালে ওষুধ এবং চিকিৎসার খরচ হু হু করে বেড়েছে। মাঝেমধ্যেই প্রয়োজনীয়, এমনকি জীবনদায়ী ওষুধও বাজার থেকে উধাও হয়ে গিয়েছে। কিনতে হয়েছে দ্বিগুণ-তিনগুণ দামে। সেই দাম কেউ আর কমায়নি। বরং দিনে দিনে ওষুধের দাম আরও বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

বাংলাদেশ কেমিস্টস্ এন্ড ড্রাগিস্টস্ সমিতির (বিসিডিএস) কেন্দ্রীয় পরিষদের পরিচালক ও গাইবান্ধা জেলার সিনিয়র সহসভাপতি সাইফুল ইসলাম জানান, গত কয়েক মাসে উচ্চরক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, গ্যাস্ট্রিকসহ বেশকিছু ওষুধের দাম বেড়ে গিয়েছে।

তিনি জানান, উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সুপারিশের ভিত্তিতে সম্প্রতি স্বাস্থ্যসেবায় বহুল ব্যবহৃত ২০টি জেনেরিকের ৫৩টি ব্র্যান্ডের ওষুধের নতুন দাম নির্ধারণ করেছে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর। মূলত বাজারে ওষুধের পুনঃনির্ধারিত দামের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।

সারাদেশ