নিজস্ব প্রতিবেদক
রাজধানীর মহাখালীর মধ্যপাড়া, হাজারীবাড়ি, দক্ষিণখান, কুড়িল, নুরের চালা, উত্তর বাড্ডা, মধ্য বাড্ডা এলাকায় দেখা দিয়েছে তীব্র পানি সংকট। কোথাও ১৫ দিন, কোথাও ১৯ দিনেও মিলছে না পানি। পানির জন্য রাস্তায় নেমেছে মানুষ। কয়েক দফা আন্দোলন করে, ওয়াসা অফিসে ধরনা দিয়েও মিলছে না পানি।
এ ব্যাপারে ঢাকা ওয়াসার পরিচালক (টেকনিক্যাল) এ কে এম শহীদ উদ্দিন বলেন, লোডশেডিংয়ের কারণে পানি উৎপাদনে সমস্যা হচ্ছে। ঢাকা ওয়াসায় প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ১০ হাজার লিটার পানি উৎপাদন করা হয়। কিন্তু এক ঘণ্টা লোডশেডিং হলে উৎপাদনে ঘাটতি হয়ে যায়। চার-পাঁচ ঘণ্টা পাম্প চলার পর আবার লোডশেডিং হয়ে যাচ্ছে। ফলে আমরা পাম্প চালাতে পারছি না। এ কারণে বেশ কিছু এলাকায় ঘাটতি দেখা দিয়েছে। আমরা জেনারেটর দিয়ে পাম্প চালিয়ে সংকট সমাধানের চেষ্টা করছি।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, মহাখালী, দক্ষিণখানের চালাবন, গণকবরস্থান এলাকা, কুড়িল, বিশ্বরোড, ভাটারা নুরের চালা, উত্তর বাড্ডা, মধ্য বাড্ডা, মেরুল ডিআইটি, কালাচাঁদপুর, মিরপুর, আগারগাঁও, রায়েরবাজার ও মোহাম্মদপুর এলাকায় পানি সংকট বেশি। এসব এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, কয়েক সপ্তাহ ধরে তারা পানির সংকটে ভুগছেন। কোরবানির ঈদের পর এ সমস্যা শুরু হলেও সম্প্রতি দেশব্যাপী এলাকাভিত্তিক লোডশেডিংয়ের ঘোষণার পর পরিস্থিতি অসহনীয় পর্যায়ে চলে গেছে। পানি কিনে চলছে রান্না, খাওয়া। গোলসের জন্য ছুটতে হচ্ছে অন্য এলাকায় আত্মীয়স্বজনের বাসায়। পানির জন্য আন্দোলন করেও মিলছে না সমাধান।
মধ্যপাড়া এলাকার বাসিন্দারা জানান, দোকান থেকে পানি কিনে পান করতে হচ্ছে। এ গরমে পানি ছাড়া দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে জীবনযাপন। গোসল, কাপড় ধোয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই। পানি কিনে আর কতদিন চলা সম্ভব। ওয়াসার কার্যালয়ে ধরনা দিয়েও মেলেনি সমাধান। ওই এলাকার বাসিন্দা সোয়েব আলী বলেন, তিন দিন ধরে গোসল করতে পারছি না। এর আগে অন্য এলাকায় বন্ধুদের বাসায় গিয়ে গোসল করে এসেছি। কিন্তু কতদিন আর মানুষের বাসায় গিয়ে গোসল, টয়লেট করে আসা যায়। আমাদের টিকে থাকা কঠিন হয়ে গেছে। ভাড়াটিয়া হলে এলাকা পাল্টানো যায় কিন্তু বাড়িওয়ালার তো সে উপায় নেই। তাই এর মধ্যেই থাকতে হচ্ছে। হাজারীবাড়ি এলাকার বাসিন্দা নূপুর আক্তার বলেন, ট্যাপে একফোঁটা পানি নেই। লাইনের চাপ কলেও পানি উঠছে না। আগে মাঝে মাঝে পানির সমস্যা হতো। এবার টানা ১৯ দিন ধরে পানি নেই। গতকাল পাশের বাড়িতে অল্প পানি আসছিল। সে পানিও ঘোলা, ব্যবহার করার উপযুক্ত না। পানির সমস্যায় আমরা অসুস্থ হয়ে পড়ছি। অন্য এলাকা থেকে বালতি, কলসিতে পানি টেনে নিয়ে আসছি। সমস্যা সমাধানে দল বেঁধে ওয়াসা কার্যালয়ে গিয়েছিলেন এলাকাবাসী। আশ্বাস মিললেও মেলেনি পানি। দক্ষিণখানের চালাবন এলাকার বাসিন্দা জাকির হোসেন বলেন, ১৫ দিন ধরে পানি আসে না এলাকায়। পাঁচজনের সংসারে রান্না, খাবার পানি কিনে আনছি। কিন্তু গোসল, টয়লেটের দুরবস্থার কথা কাউকে বলে বোঝানোর মতো না। এই দুর্মূল্যের বাজারে কতদিন আর পানি কিনে খাওয়া সম্ভব। লোডশেডিং শুরু হওয়ার পরে সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। একই পরিস্থিতি গণকবরস্থান এলাকার। এই এলাকার বাসিন্দা সাহিল শেখ বলেন, পানি না থাকায় রান্না, গোসল, কাপড় ধোয়ার পরিস্থিতি নেই বাসায়। কতদিন আর পানি কিনে খাওয়া সম্ভব। টয়লেটের জন্য পানি কি কিনে আনা সম্ভব। বাজারে তেল, সবজি সবকিছুর দাম বাড়তি। এর মধ্যে পানি কিনে খাওয়ার মতো সামর্থ্য আমার নেই। পানি না আসায় পরিবারকে গ্রামে পাঠিয়ে দিয়েছি। ভাটারার নুরের চালা এলাকার বাসিন্দা মারুফ হোসেন বলেন, ১০ দিন ধরে আমরা ঠিকমতো পানি পাচ্ছি না। বারবার ওয়াসার আঞ্চলিক কার্যালয়ে অভিযোগ জানিয়েও এর প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না। পানির সংকটের কারণে এ এলাকার প্রতিটি বাড়িতে মানুষ খুব কষ্টে আছে। তিনি বলেন, বাড়ির মালিকরা ওয়াসার গাড়ি থেকে অতিরিক্ত দামে পানি কিনে ব্যবহার করছেন। কিন্তু এ পানিও একবার আসে। তখন ভাড়াটিয়াদের জন্য একবার ছাড়া হয় পানি। ওই সময়ের মধ্যে আমাদের গোসল, বাথরুমসহ পানির সব কাজ করতে হয়। ভাটারার খন্দকার বাড়ির মোড় এলাকার বাসিন্দা খায়রুল মিয়া বলেন, খন্দকার বাড়ি মোড়ে রাতে আধা ঘণ্টার মতো পানি পাই। এর পর আর সারা দিন খবর থাকে না। মাঝে তিন দিন এক নাগাড়ে পানি আসেনি। কোরবানি ঈদের পর খেকে এ সমস্যা শুরু হয়েছে। এখনো সমাধান হয়নি।