আগুন লেগেছে ফলের বাজারেও

আগুন লেগেছে ফলের বাজারেও

দেশে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার পর থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় সব জিনিসের দাম একে একে বাড়তে শুরু করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় বেড়েছে দেশি-বিদেশি সব ফলের দামও। বিভিন্ন ফলের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে গেছে। ফলভেদে দাম বেড়েছে ৩০ থেকে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত। খোলাবাজারে আপেল ও কমলার কেজি তিনশ ছুঁই ছুঁই। আপেল কমলা ছাড়াও ড্রাগন, মালটা ও ডাবের দামও বেশ চড়েছে।

চলতি মাসের শুরুর দিকে কেজিপ্রতি আড়াইশ থেকে তিনশ টাকায় বিক্রি হওয়া ড্রাগন এখন বিকোচ্ছে পাঁচশ টাকায়। আবার কিলোমিটার ব্যবধানের দূরত্বের বাজারে এসব ফলের দামে কেজিপ্রতি ৫০ টাকারও বেশি ব্যবধান দেখা গেছে। এদিকে দাম বাড়ায় ফলের বেচাবিক্রি খুচরা পর্যায়ে আগের চেয়ে অনেক কমেছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

গতকাল শনিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার, বাইতুল মোকাররম ও নয়াপল্টন এলাকার পাইকারি ও খুচরা বাজার ঘুরে এসব তথ্য পাওয়া যায়।

ফলের দাম বাড়ার কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় পরিবহন খরচ বেড়েছে। এ ছাড়া ডলারের দাম বেশি থাকায় আমদানিতে খরচ বেড়েছে। সবমিলিয়ে যার প্রভাব পড়ছে ফলের খুচরা দামে।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, খুচরা পর্যায়ে কমলা, মাল্টা, নাটফল, আনার ও আনারসের দাম ৩০-৮০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। খোলাবাজার ও ভাসমান হকাররা প্রতি কেজি ড্রাগনের মূল্য হাঁকাচ্ছে মাঝারি ৩০০-৩৫০ এবং বড় ৫০০-৫৫০ টাকা। এ ছাড়া আপেল ও কমলার কেজি ২৪০-২৭০, মাল্টা ২৩০, মাঝারি আকারের আনারস জোড়া ১০০, ল্যাংড়া আম ২৭০-২৮০, বারি-৪ আম ২৫০, ঝিনুক আম ১০০-১২০, আঙুর ৩৫০-৪৫০ এবং আনার ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা দরে বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা।

আপেলের দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী মোর্শেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আড়তে আপেলের অস্বাভাবিক দাম। ফল ব্যবসার ৫ বছরের জীবনে এর আগে কখনো আপেলের এত দাম দেখিনি। আড়তদাররা যেভাবে দাম চাইবে সেইভাবেই আমাদের কিনে আনতে হয়। দরদাম করতে গেলে আড়তদার খারাপ ব্যবহার করছে অনেক সময়।’

জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের পেছনের গেটের ফুটপাতের ফল ব্যবসায়ী মুরসালিন বলেন, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর আগে সবধরনের ফলের দাম সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যেই ছিল। কিন্তু তেলের দাম বাড়ার পর বর্তমানে গালা আপেলের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৭০-২৯০, যা আগে ছিল ২২০-২৪০ টাকা। ফুজি আপেল প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৪০-২৬০, যা আগে ছিল ১৮০-২০০ টাকার মধ্যে।

নয়াপল্টন মোড়ে সর্বনিম্ন ১০০ টাকায় প্রতিটি ডাব বিক্রি করছিলেন আমিনুল ইসলাম। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এই গরমে গত কয়েক দিন আগেও ডাব বিক্রি করে ভালোই আয় রোজগার হতো। কিন্তু জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার পর থেকে ডাবের দামটাও বেড়ে যায়। আর আমার বিক্রি কমে আয় রোজগারেও ভাটা পড়ে।’

তিনি জানান, বর্তমানে পাইকারদের কাছ থেকে প্রতি পিস ছোট আকারের ডাব ৮০ টাকায় কিনে ১০০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। আকারে বড় ডাব ১০০ টাকায় কিনে ১২০-১৩০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর আগে দেশীয় ফলের মধ্যে ঝিনুক আম বিক্রি হচ্ছিল কেজিপ্রতি ৭০-৮০, ল্যাংড়া ২২০-২৪০ এবং আশ্বিনী ১০০ টাকায়।

এদিকে বাজারে দাম বাড়ায় ফল ব্যবসায়ীদের ওপর ক্রেতাদের ক্ষোভ প্রকাশ করতেও দেখা গেছে। তারা বলছেন, দেশের প্রতিটি সংকটকে একটা ইস্যু হিসেবে ব্যবহার করে বরাবরের মতো ব্যবসায়ীরা সব জিনিসের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। ফলের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। এবারও তারা জ্বালানি তেলের খরচের নাম করে সব ধরনের ফলের দাম ৫০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত বাড়িয়ে দিয়েছে।

জ্বরাক্রান্ত শান্ত কারওয়ান বাজারে গতকাল আনারস কিনতে এসেছিলেন। প্রতি পিস আনারসে ২০ টাকা করে বাড়তি দেখে তিনি এক হালি আনারসের বদলে দুটি নিয়ে বাসায় ফিরছিলেন। পথে এই প্রতিবেদককে তিনি বলেন, ‘আমার পরিবারের ৪ সদস্যের সবাই পর্যায়ক্রমে জ্বরাক্রান্ত হয়েছে। প্রথমে স্ত্রীর জ্বর হলে তার জন্য আনারস কিনেছি ৩০ টাকা করে। কিন্তু এক সপ্তাহের কম সময়ে বাজারে এসে দেখছি একই আনারসে ২০ টাকা বেড়েছে।’

বায়তুল মোকাররমের সামনে কথা হয় বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মো. আজিমের সঙ্গে। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ফলের বাজারে আগুন লেগেছে। মনে হচ্ছে ডলার ও তেলের বাজারের মূল্যবৃদ্ধির মিশ্রণের ফলের বাজার পুড়ে ছাই হয়েছে। ব্যবসায়ীদের কাছে থাকা সব ফল পুড়ে গেছে। যার কারণে ব্যবসায়ীরা আমাদের আয়ের ক্ষমতার বাইরে ফলের মূল্য হাঁকাচ্ছে। বর্তমান নৈরাজ্যের বাজার ব্যবস্থায় দরকার হলে ফল কেনা বন্ধ করে দেব। যেদিন আয় বাড়বে বা ফলের বাজার মধ্যবিত্ত পরিবারের ক্রয়ক্ষমতায় মধ্যে আসবে সেদিন থেকে আবার ফল কেনা শুরু করব।’

অর্থ বাণিজ্য