আন্দোলনের নামে সহিংসতা করলে ছাড় দেবে না আ. লীগ

আন্দোলনের নামে সহিংসতা করলে ছাড় দেবে না আ. লীগ

রাজনৈতিক সমস্যা রাজপথে সমাধান করতে অভ্যস্ত ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। আর এজন্যই তারা বিএনপি ও তার সহযোগীদের রাজপথে জবাব দেয়ার জন্য প্রস্তুত রয়েছে। বিএনপির পাশাপাশি তাদের মিত্রদের নিয়ে গঠিত ‘গণতন্ত্র মঞ্চের’ আন্দোলন কর্মসূচির বিষয়ে আওয়ামী লীগের কোনো আপত্তি নেই। তবে আন্দোলনের নামে কোনো সহিংসতা করলে ছাড় দেবে না তারা। সরকারবিরোধী দলগুলোর কর্মসূচির ওপর তীক্ষè নজর রাখা হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা।

সোমবার দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ৯২তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানীর বনানী কবরস্থানে তার সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা রাজপথের পুরাতন খেলোয়াড়, বিএনপি তো এই পথে নতুন। আসুন, রাজপথে মোকাবিলা হবে, ফয়সালা হবে।’ বিএনপিকে হুঁশিয়ারি দিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘রাজপথ কাউকে ইজারা দেয়া হয়নি। আওয়ামী লীগ রাজপথে ছিল, রাজপথে আছে। আপনারা (বিএনপি) রাজপথে আসুন, মোকাবিলা হবে, ফয়সালা হবে। তবে আগুন নিয়ে খেলতে গেলে পরিণাম হবে ভয়ংকর।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিএনপিসহ বিরোধী দলকে রাজপথেও শক্ত জবাব দিতে এবারও মাঠে থাকবেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। এছাড়া আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের শরিকদেরও এ ধরনের কর্মসূচিতে অংশ নেয়ার অনুরোধ করা হয়েছে। কারণ তারা বিএনপিসহ বিরোধী দলকে মোকাবিলায় একা দায়িত্ব নেবে না। দেশের রাজনীতির মাঠ ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। এতে করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের পাশাপাশি তাদের নেতা-কর্মীদের মধ্যে কমবেশি অস্থিরতা বিরাজ করছে। সারা দেশে শীর্ষ নেতারা এখন দলের নেতা-কর্মীদের বিভিন্ন প্রশ্নের মুখে পড়ছেন যে আসলে রাজনীতিতে কী হচ্ছে। কী করছে সরকার ও তাদের বিভিন্ন থিংকট্যাঙ্ক। বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের সঙ্গেও আলাপচারিতায় জানা গেছে তারা রাজপথে শক্তভাবেই থাকতে চান।

জানা গেছে, এমন পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগ তার দলের নেতা-কর্মীদের প্রয়োজনে রাজপথে নামার ডাক দেবে। দলের নীতিনির্ধারকরা চান বিরোধীরা অনৈতিক কিছু করলেই তা প্রতিরোধ করতে তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা যেন সঙ্গে সঙ্গে রাজপথে নেমে আসে। সরকারের পাশাপাশি আওয়ামী লীগ মাঠে তাদের রাজনৈতিক সামর্থ্য দেখানোর জন্যও প্রস্তুত বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। দলের শীর্ষ পর্যায়ের নীতিগত সিদ্ধান্ত হচ্ছে, রাজনৈতিক ময়দানে নেমে বিরোধী দল বিশেষ করে বিএনপির মতো এবং আরো যারা বিরোধিতা করবে তাদের মোকাবিলা করা।
আওয়ামী লীগের মতে, এটি তাদের সম্পূর্ণ রাজনৈতিক পদক্ষেপ। রাজনৈতিকভাবেই তারা বিরোধী দলকে মোকাবিলা করবে। যাবে জনগণের আরো কাছাকাছি। করা হবে দেশজুড়ে নানা ধরনের গণসংযোগ কর্মসূচি। জেলা-উপজেলায় সভা-সমাবেশ।

রাজপথে বিএনপিসহ বিরোধী দলকে মোকাবিলার সিদ্ধান্ত আওয়ামী লীগ এমনিতেই নেয়নি। দেশে-বিদেশে নানা কারণে সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে প্রশাসনিক ক্ষমতা ব্যবহার করে বিরোধী মত ও দলকে মোকাবিলার। এমন চাপ যেমন আছে তেমনি আওয়ামী লীগ ও তার শরিকরা কেন রাজনৈতিক ময়দানে একেবারে চুপ তা নিয়ে কথা উঠেছে। এসব বিষয়ে শীর্ষ পর্যায় থেকে কঠোর হুঁশিয়ারির দলের সাংগঠনিক কর্মকা-ে নতুন গতি এসেছে। দলের তৃণমূল নেতা-কর্মীরা চাইছেন বিরোধী দল বিশেষ করে বিএনপি যেমন নানা ধরনের কর্মসূচি দিচ্ছে, আওয়ামী লীগও মাঠপর্যায়ে পাল্টা ব্যবস্থা নিক।

এসব বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম বলেন, যেকোনো আন্দোলন রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করবে তার দল। তবে আন্দোলনের নামে হামলা, নৈরাজ্য, মানুষের জানমালের ক্ষতি, লাশের রাজনীতি, মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা তথা সন্ত্রাসী কর্মকা- সহ্য করা হবে না।

সম্প্রতি গঠিত গণতন্ত্র মঞ্চের আন্দোলন কর্মসূচির প্রসঙ্গে দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল বলেন, কেউ যদি মনে করে আবারও ২০১৪ ও ২০১৫ সালের মতো পরিস্থিতি তৈরি করবে, তারা বোকার স্বর্গে বাস করছে। ওই সময়ের মতো কাউকে আর অরাজকতা করতে দেবে না এ দেশের মানুষ।

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মানুষের মধ্যে যে প্রভাব পড়ছে এ সুযোগ বিএনপিসহ অন্য দলগুলো নিতে পারে কি না এমন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি তো সরকারের সৃষ্ট সমস্যা নয়। বিশ্ববাজারে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশেও বেড়েছে। মিডিয়ায় দেখলাম, আগামী জানুয়ারির মধ্যে যুক্তরাজ্যেও দুই-তৃতীয়াংশ লোক দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যাবে।’ তিনি আরো বলেন, ‘উন্নত দেশগুলোতে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি তেলের সংকট দেখা দিয়েছে। তাই দেশের মানুষকে সে রকম সংকটের হাত থেকে রক্ষার জন্য সরকার দেশে জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়েছে। কিন্তু যারা কোনো রকম বোধ-বিবেচনা না করে আন্তর্জাতিক বাজারের খোঁজ না নিয়ে সস্তা স্লোগান দিচ্ছে, তাদের কথা জনগণ শুনবে না।’

রাজনীতি