কী থাকছে নির্বাচনী রোডম্যাপে

কী থাকছে নির্বাচনী রোডম্যাপে

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে সর্বোচ্চ ১৫০ আসনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট গ্রহণের প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এজন্য ২ লাখ নতুন ইভিএম কেনায় প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকার নতুন প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। আজ আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচন কমিশনের বৈঠকে এ প্রকল্পের ডিপিপি উপস্থাপন করা হবে।

এদিকে কাল দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করবে ইসি।সকাল ১০টায় নির্বাচন ভবনে আনুষ্ঠানিকভাবে এ রোডম্যাপ ঘোষণা করা হবে। রোডম্যাপে সংসদ নির্বাচনে ইভিএমের ব্যবহার, সীমানা নির্ধারণ, ফলাফল সংগ্রহে প্রযুক্তির ব্যবহার, প্রশিক্ষণ ও দক্ষ জনবল তৈরি, আইন সংস্কার, নতুন দল নিবন্ধন, চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রণয়নসহ সব কাজের প্রস্তুতিমূলক সময়সূচি থাকছে। এ ছাড়া সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা ও তফসিল ঘোষণা-পরবর্তী কাজগুলোর তালিকাও থাকছে রোডম্যাপে।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাকি ১৫ মাস।২০২৪ সালের জানুয়ারিতে এ নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে ইসি। এ ক্ষেত্রে ২০২৩ সালের নভেম্বরে তফসিল ঘোষণা হতে পারে।

এ বিষয়ে গতকাল ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেছেন, মঙ্গলবার (আজ) কমিশনের সামনে নতুন করে আরও ইভিএম কেনার জন্য প্রকল্প প্রস্তাব উপস্থাপন করার কথা রয়েছে। এরপর এ নিয়ে পর্যালোচনা করবে ইসি।

আগামীতে এ প্রস্তাব ইসির অনুমোদন পেলে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হবে। চলতি মাসে ডিপিপি আকারে পাঠানো সম্ভব হলে সব প্রক্রিয়া শেষ করে ডিসেম্বরে ইভিএমের দ্বিতীয় প্রকল্পটি সরকারের অনুমোদন পাওয়ার প্রত্যাশা করা হচ্ছে। এই কর্মকর্তা জানান, প্রস্তাবিত প্রকল্পটির অধীনে প্রায় ২ লাখ ইভিএম কেনা হতে পারে। সেই সঙ্গে যন্ত্রের যথাযথ সংরক্ষণ, রক্ষণাবেক্ষণ ও জনবল তৈরি করা হবে। সব মিলিয়ে প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকার সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে।
ইভিএমসংক্রান্ত বর্তমান প্রকল্পটি ২০২৩ সালের জুনে শেষ হচ্ছে। এ ছাড়া ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, বুধবার সকাল ১০ টায় আনুষ্ঠানিকভাবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করা হবে।রোডম্যাপের বিষয়ে এর আগে ইসির এই অতিরিক্ত সচিব বলেন, ‘ইভিএম ও সিসি ক্যামেরা ব্যবহারের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কিছু রোডম্যাপে থাকবে না। তবে প্রযুক্তির আরও ব্যবহার বাড়ানো, প্রশিক্ষণ, দক্ষ জনবল বাড়ানো, সচেতনতা বৃদ্ধির বিষয়টি তুলে ধরা হবে। ’ তিনি বলেন, ‘অনেকটা আগের মতোই সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এ রোডম্যাপে সব কাজের সম্ভাব্য সময় ধরে বাস্তবায়নসূচি থাকবে। আগের চেয়ে কয়েকটি কাজের তালিকা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাড়ানো হয়েছে। ’

কর্মপরিকল্পনায় এক ডজন কাজ : আইন সংস্কার; নির্বাচন প্রক্রিয়া সময়োপযোগী করতে সবার পরামর্শ; সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ; নির্ভুল ভোটার তালিকা প্রণয়ন ও সরবরাহ; বিধি মেনে ভোট কেন্দ্র স্থাপন; নতুন দল নিবন্ধন ও নিবন্ধিতদের নিরীক্ষা; সুষ্ঠু নির্বাচনে সক্ষমতা বৃদ্ধি সংশ্লিষ্টদের; ভোটে প্রযুক্তির ব্যবহার; দক্ষ নির্বাচন কর্মকর্তার প্যানেল তৈরি ও প্রশিক্ষণ; ভোটার শিক্ষণ, সচেতনতা; পর্যবেক্ষণ সংস্থা নিবন্ধন ও নবায়ন; গণমাধ্যমকে আইনি কাঠামোয় সম্পৃক্তকরণ। এ ছাড়া অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে আইন সংস্কার; সীমানা নির্ধারণ; প্রশিক্ষণ; দল নিবন্ধন; ভোট কেন্দ্র নির্ধারণ ও ভোটার তালিকা প্রণয়নের কাজকে।আসছে  হাজার কোটি টাকার নতুন প্রকল্পবৈঠকে বসছে ইসি : দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে সর্বোচ্চ ১৫০ আসনে ইভিএমে ভোট গ্রহণের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। এজন্য প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকায় ২ লাখ নতুন ইভিএম কেনার নতুন প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। আজ আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচন কমিশনের বৈঠকে এ প্রকল্পের ডিপিপি উপস্থাপন করা হবে। এ প্রকল্পের আওতায় কেনা হবে নতুন ২ লাখ ইভিএম। প্রতিটি ইভিএমের দাম হবে আড়াই লাখ টাকার বেশি। এ ছাড়া ইভিএম সংরক্ষণে প্রকল্পের অধীনে ১০ অঞ্চলে ৬০-৬৫ হাজার স্কয়ার ফিটের ওয়্যারহাউস নির্মাণ; ১ হাজার থেকে ১২০০ জন জনবল নিয়োগ; গাড়ি কেনা, ইভিএম পরিচালনায় দুই থেকে আড়াই লাখ দক্ষ জনবল তৈরির প্রশিক্ষণ ও দেশব্যাপী ইভিএমের ব্যাপক প্রচারের জন্য বরাদ্দ রাখা হচ্ছে এ প্রকল্পে।

ইসির কর্মকর্তারা বলছেন, বিগত সময়ে প্রতিটি ইভিএম কেনা হয়েছিল ২ হাজার ৩৮৭ ডলারে। তখন ডলারের মূল্য ৮৪ টাকা হিসেবে একটি ইভিএম ইউনিটের মূল্য ছিল ২ লাখ ৫ হাজার টাকা (ভ্যাট-ট্যাক্সসহ)। এ ছাড়া একটি ইভিএম ইউনিটের অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে হয়েছিল আরও ২৫ হাজার টাকায়। সব মিলে তখন একটি ইভিএমের মূল্য ছিল ২ লাখ ৩০ হাজার টাকার বেশি। এবারও প্রতিটি ইউনিটের সম্ভাব্য মূল্য ধরা হচ্ছে ২ হাজার ৩৮৭ ডলার। এ ক্ষেত্রে ডলারের মূল্য ৯৫-৯৬ টাকা হিসেবে প্রতি ইউনিটের মূল্য হতে পারে ২ লাখ ২৬ হাজার ৭৬৫ টাকা অথবা ২ লাখ ২৯ হাজার ১৫২ টাকা। আর প্রতিটি ইউনিটের সঙ্গে অন্যান্য জিনিস প্রয়োজন হবে আরও প্রায় ২৫ হাজার টাকার। এর বাইরে প্রতি ইউনিটের মূল্যের সঙ্গে যুক্ত হবে ভ্যাট-ট্যাক্স। সব মিলে একটি ইভিএম তথা প্রতিটি ইভিএম ইউনিটের মূল্য আড়াই লাখ টাকার বেশি হতে পারে। ইভিএমের নতুন প্রকল্পের সম্ভাব্য ব্যয় ধারা হচ্ছে প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ২ লাখ ইভিএম কেনায় খরচ হবে ৫ হাজার কোটি টাকার বেশি। এ ছাড়া ১০টি ওয়্যারহাউস নির্মাণের জন্য জমি অধিগ্রহণ, ভবন নির্মাণ, জনবল নিয়োগ, গাড়ি কেনা ও দেশব্যাপী ইভিএমের ক্যাম্পেইন, ইভিএম পরিচালনায় দক্ষ জনবল তৈরির প্রশিক্ষণ বাবদ খরচ হবে আরও প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা।

ইসির কর্মকর্তারা বলছেন, সংসদে মোট সাধারণ আসন রয়েছে ৩০০। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনে ছয়টি আসনে ইভিএমে ভোট গ্রহণ করা হয়েছিল। বর্তমানে নির্বাচন কমিশনের হাতে দেড় লাখ ইভিএম রয়েছে যা দিয়ে ৭০-৭৫টি আসনে ভোট গ্রহণ সম্ভব হবে। তবে ১৫০ আসনে ইভিএমে ভোট করতে হলে আরও ২ লাখ ইভিএম কিনতে হবে নির্বাচন কমিশনকে।

জাতীয়