প্রচলিত হিন্দু আইনের পরিবর্তন বা সংস্কারের প্রয়োজন নেই বলে মনে করে এ সম্প্রদায়ের একটি অংশ। এ ধরনের কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকতে বাংলাদেশ হিন্দু আইন সংস্কার পরিষদের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে তারা।
আজ শুক্রবার সকালে রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন থেকে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিভিন্ন সংগঠনের জোট সম্মিলিত সনাতন পরিষদ এ হুঁশিয়ারি দিয়েছে।
‘হিন্দু আইন সংস্কারের নামে হিন্দু ধর্মীয়, তথা শাস্ত্রীয় বিধিবিধান-সংবলিত পারসোনাল ল পরিবর্তন বা সংস্কার করার চক্রান্ত’-এর প্রতিবাদ ও প্রতিরোধে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে বলা হয়, হিন্দুসম্প্রদায়ের বিয়েতে এক পুত্রের সমান সম্পত্তির অর্থমূল্য কন্যাকে উপঢৌকন হিসেবে দেয় তাঁর পরিবার। আবার মৃত স্বামীর সম্পত্তির মালিক হতে পারেন স্ত্রী। এ অবস্থায় প্রচলিত হিন্দু আইনের পরিবর্তন বা সংস্কারের প্রয়োজন নেই।
এর আগে ৩ সেপ্টেম্বর ডিআরইউতে এক আলোচনা সভায় সনাতন সম্প্রদায়ের আরেকটি অংশ বাংলাদেশ হিন্দু আইন সংস্কার পরিষদ সনাতন হিন্দু আইন সংস্কারের দাবি জানিয়েছিল। সংগঠনটির নেতারা বলেছিলেন, দেশের প্রচলিত হিন্দু আইনে নারীরা নানাভাবে বৈষম্যের শিকার। সনাতন ধর্মে ছেলেরা বাবার সম্পত্তি পেলেও মেয়েরা পান না।
সম্পত্তিতে হিন্দুসম্প্রদায়ের নারীদের নিরঙ্কুশ উত্তরাধিকার না থাকা, সন্তানের অভিভাবকত্ব ও অধিকার না থাকা, শত নির্যাতনেও বিচ্ছেদের বিধান না থাকার মতো বৈষম্য দূর করতে দেশে প্রচলিত হিন্দু আইনগুলো সংস্কারের দাবি করেছিলেন তাঁরা।
ওই অনুষ্ঠানে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য এবং সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথও হিন্দু আইন সংস্কারের পক্ষে মত দেন।
আজকের সংবাদ সম্মেলন থেকে প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য ও বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথের দেওয়া বক্তব্যের নিন্দা ও প্রতিবাদ এবং ওই বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলন থেকে বাংলাদেশ হিন্দু আইন সংস্কার পরিষদকে এ ধরনের কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকারও হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।
লিখিত বক্তব্যে সনাতন পরিষদের প্রধান সমন্বয়কারী শ্যামল কুমার রায় বলেন, প্রচলিত হিন্দু উত্তরাধিকার আইন, তথা পারসোনাল ল বর্তমান পরিবেশ-পরিস্থিতিতে পরিবর্তন করা হলে হিন্দু নারী ও হিন্দু সম্পত্তি উভয়ের বিপদাপন্নতা অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে আরও বহুগুণ বেড়ে যাবে। হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে তিনি বলেন, তারপরও যদি সরকার ও সুবিধাভোগী মহলটি অতি উৎসাহী হয়ে হিন্দু আইন পরিবর্তনে অনাকাঙ্ক্ষিত হস্তক্ষেপ করা থেকে বিরত না হয়, তাহলে তারা যেকোনো উদ্ভূত পরিস্থিতির জন্য দায়ী থাকবে।
সংবাদ সম্মেলনে সনাতন পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক হীরেন্দ্রনাথ বিশ্বাস বলেন, দেশের হিন্দুসম্প্রদায়ের অনেক সমস্যা রয়েছে। সেসব সমস্যার সমাধান না করে সরকার ও একটি মহল হিন্দু আইন পরিবর্তন করতে ওঠেপড়ে লেগেছে। তিনি বলেন, শাস্ত্রীয় বিধানের জন্য সম্প্রীতিপূর্ণ পারিবারিক বন্ধনে হিন্দুসম্প্রদায় শান্তিতে ঘরসংসার করে আসছে। তাই প্রচলিত হিন্দু আইন পরিবর্তন করে এ-সংক্রান্ত নতুন আইনের কোনো প্রয়োজন নেই।
এ সময় বক্তব্য দেন আইনজীবী জে কে পাল, প্রবীর হালদার, চৈতালী চক্রবর্তী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাড সুমন কুমার রায়, হিন্দু মহাজোটের সাধারণ সম্পাদক ডা. এম কে রায়, সাংগঠনিক সম্পাদক উওম কুমার দাস, জাগো হিন্দু পরিষদের পৃষ্ঠপোষক দেবব্রত সরকার দেবু প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পলাশ কান্তি দে।