অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ন্যাশনাল সিকিউরিটি কলেজের জ্যেষ্ঠ গবেষণা ফেলো ডেভিড ব্রুস্টার। তাঁর গবেষণার মূল প্রতিপাদ্য ভারত মহাসাগর এবং ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের কৌশলগত বিষয়। গত বছর প্রকাশিত এক নীতি গবেষণাপত্রে ডেভিড ব্রুস্টার ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে অংশীদারত্ব কার্যকর করতে ভারতের পাশাপাশি বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে সহযোগিতা বাড়ানোর সুপারিশ করেছেন। ঢাকা–ক্যানবেরা সহযোগিতার পাশাপাশি তিনি ভূরাজনীতির বিষয়ে কথা বলেছেন। তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন প্রথম আলোর কূটনৈতিক প্রতিবেদক রাহীদ এজাজ।
- অস্ট্রেলিয়া সমরাস্ত্র বিক্রি নয়, প্রতিরক্ষা সহযোগিতায় আগ্রহী।
- ভারত–প্রশান্ত মহাসাগরীয় কৌশল বা আইপিএসের ধারণাটা যুক্তরাষ্ট্র নয়, জাপানই প্রথম সামনে আনে।
- অবশ্যই বাংলাদেশের নিজস্ব আইপিএস থাকা উচিত।
- বাংলাদেশকে রোহিঙ্গাদের নিয়ে অবশ্যই দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করা উচিত। মাদক পাচার ও সহিংস উগ্রপন্থার মতো ঝুঁকি রয়েছে।
ডেভিড ব্রুস্টার: অতীতে ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দিকে অস্ট্রেলিয়া যথেষ্ট নজর দেয়নি। অস্ট্রেলিয়ার মূল মনোযোগটা ছিল প্রশান্ত মহাসাগর ঘিরে। পরে ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার গুরুত্ব অস্ট্রেলিয়া বুঝতে পেরেছে। এ অঞ্চলের সবচেয়ে বড় দেশ হিসেবে গত ১০–১৫ বছরে ভারতের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার সম্পর্ক অনেক ঘনিষ্ঠ হয়েছে। দুই দেশের সফল অংশীদারত্বের অভিজ্ঞতার আলোকে এই অঞ্চলের (দক্ষিণ এশিয়ার) অন্য দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কের গুরুত্ব সামনে চলে এসেছে। আমার দৃষ্টিতে, ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের উদীয়মান অর্থনীতির দেশ বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক নিবিড় করা জরুরি। তিন থেকে চার দশক আগে পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে যেটা অস্ট্রেলিয়া করেছিল, সেটাই এখন বাংলাদেশসহ এ অঞ্চলের দেশগুলোর সঙ্গে করাটা জরুরি। অর্থনীতিসহ দুই দেশের পারস্পরিক স্বার্থেই এই সম্পর্ক গুরুত্বপূর্ণ। জ্বালানি ও মূল্যবান প্রাকৃতিক পদার্থের নির্ভরযোগ্য সরবরাহকারী হিসেবে অস্ট্রেলিয়া অনন্য। আবার বাংলাদেশের জন্য ভালো ক্রেতা অস্ট্রেলিয়া। এর পাশাপাশি সক্রিয় এবং মাঝারি শক্তির দেশ হিসেবে অনেকভাবে একে অন্যকে সহায়তা করতে পারে। এ অঞ্চলের স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধি নিশ্চিতের পাশাপাশি প্রধান শক্তিগুলোর প্রতিযোগিতা ঘিরে উত্তেজনা প্রশমনের চেষ্টা থাকাটা জরুরি।
ডেভিড ব্রুস্টার: এ অঞ্চল ঘিরে বিপুল নিরাপত্তার চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এই চ্যালেঞ্জেগুলোর মধ্যে একটির উৎপত্তি ভারত ও চীনের প্রতিযোগিতা ঘিরে। বিশেষ করে স্নায়ুযুদ্ধের সময় পরাশক্তির প্রতিযোগিতা ছোট দেশগুলোতে যেভাবে অস্থিতিশীলতা তৈরি করেছিল, তেমনটাই আমরা এখন দেখতে পাই।ডেভিড ব্রুস্টার: সাম্প্রতিক সময়ে মালদ্বীপ আর শ্রীলঙ্কার দিকে তাকালেই তো আমরা এই প্রতিযোগিতার স্পষ্ট প্রভাব দেখতে পাই। শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক সংকটের অন্যতম কারণ বড় এই দুই দেশের (ভারত ও চীন) প্রতিযোগিতার ফসল। সবার স্বার্থেই এই প্রতিযোগিতার প্রভাব এড়ানোটা জরুরি। এটি বাদ দিলে জলবায়ুর পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জটি সামনে আসে। এই অঞ্চলের জন্য আমি এটিকে প্রধান নিরাপত্তার ঝুঁকি মনে করি। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পুরো অঞ্চলেই অস্থিতিশীলতা দেখা দিতে পারে। এর ফলে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকটের পাশাপাশি বাস্তুচ্যুতির মতো নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। অস্ট্রেলিয়া চায় এ অঞ্চলের দেশগুলো এই সমস্যাগুলো দূর করার সক্ষমতা অর্জন করুক। বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকির ফলে বাস্তুচ্যুতির আশঙ্কা রয়েছে। আমরা একটি সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী বাংলাদেশ দেখতে চাই। ভৌগোলিক অবস্থানের পাশাপাশি বাংলাদেশ সত্যিকার অর্থেই এ অঞ্চলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পার। অংশীদারদের সংকটে বাংলাদেশ কী করতে পারে, ২০২০ সালে শ্রীলঙ্কাকে সহায়তার মাধ্যমে সেটা প্রমাণিত হয়েছে
।ডেভিড ব্রুস্টার: প্রতিরক্ষা সহযোগিতাকে কিছু দেশ সমরাস্ত্র কেনাকাটার নিরিখে দেখে। এটা হতেই পারে। আমি অস্ট্রেলিয়ার জন্য এই সুপারিশ করব না। প্রতিরক্ষা সহযোগিতাকে আমি সামুদ্রিক পরিসরে বাংলাদেশের সামর্থ্য বাড়ানোর পরিপ্রেক্ষিতে দেখি। কারণ, এর সঙ্গে সরাসরি অস্ট্রেলিয়ার স্বার্থ জড়িত। আমরা অস্ট্রেলিয়ার স্বার্থেই শক্তিশালী, সমৃদ্ধ ও স্থিতিশীল বাংলাদেশ দেখতে চাই।