ব্রাজিল যে ফুটবল খেলেছে দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে, তা দেখে আরও বেশি আশাবাদী হতে পারেন তাদের সমর্থকেরা। ঠিক এই ফুটবলই ব্রাজিলের কাছে আশা করেন ফুটবলপ্রেমীরা। ফুটবল বিশ্লষকের চোখ দিয়ে নয়, সমর্থকের চোখ যে ব্রাজিলকে খোঁজে, কোরিয়ার বিপক্ষে ব্রাজিল সেই ব্রাজিল। তারা নাচবে, খেলবে, গোল করবে; সেটা ছিল ষোলআনা।
প্রথমার্ধেই চার–চারটি গোল করার পর একটা সময় মনে হলো, ব্রাজিল আর গোল করতে চায় না। দ্বিতীয়ার্ধে দেখা গেল খুব কড়া চ্যালেঞ্জে যায়নি তারা, আক্রমণেও সাঁড়াশি মনোভাব ছিল না। খেলতে খেলতে যদি গোল আসে, আসুক। নিজেরা আর গোলের জন্য বাড়তি পরিশ্রম করেনি। প্রতিপক্ষকে চেপে ধরার মানসিকতটা কমে গেল দ্বিতীয়ার্ধে।কিন্তু প্রথমার্ধটা দুর্দান্ত। ব্রাজিল শুরু থেকেই এমন চাপ তৈরি করল কোরিয়ার রক্ষণে, যা একটা বার্তা দিয়ে দিল—তোমরা ওপরে আসার চেষ্টা করো না। এলেই তোমরা শেষ।
কোরিয়া ও জাপান সাধারণত প্রথম এবং শেষ পর্যন্ত একই গতিতে খেলে। তাদের রানিংও একই রকম। কিন্তু ব্রাজিল ম্যাচে কোথায় কোরিয়ার সেই গতি আর দৌড়। আসলে লাতিন পরাশক্তির সামর্থ্যের কাছেই উড়ে গেছে কোরিয়া। ম্যাচের গতির সঙ্গে কোরিয়া মানিয়ে নিতে পারেনি।
বল দখলের লড়াইয়ে কোরিয়ানরা চ্যালেঞ্জ করার আগেই দেখা গেল, বল আরেক জায়গায়, যা কোরিয়ানদের মানসিকভাবে আরও পিছিয়ে দিয়েছে, হতাশ করেছে। লাতিনদের এটাই আসলে মূল অস্ত্র। প্রতিপক্ষকে তারা পায়ের কারুকাজ দিয়ে, পাসিং ফুটবলের মেলা বসিয়ে নিরাশ করে তোলে। একধরনের লুকানো পাস খেলে তারা। এই জায়গায় প্রতিপক্ষ পেরে ওঠে না। যেমন পারেনি কোরিয়া।আগেই বলেছিলাম, জাপানের শুটিং একটু এলোমেলো, নিখুঁত নয়। যার প্রমাণ জাপানের তিনটি টাইব্রেকার শট মিস। আর সেই মিসেই জাপানের বিশ্বকাপ–দৌড় থেমে গেছে। অন্যদিকে কোরিয়ানদের শুটিং তুলনামুলক নিখুঁত। ব্রাজিলের বিপক্ষে কী অসাধারণ শটে একটি গোল করল কোরিয়া! ওই শুটিং অঞ্চলে কোরিয়ানদের যেতে দিতে চায়নি ব্রাজিল। কারণ, ব্রাজিল কোচ জানতেন কোরিয়ার শুটিং ক্ষমতা ভালো, কাজেই শুটিং অঞ্চলের জায়গা দিলে বিপদ হতে পারে। ঠিক সেভাবেই খেলেছে ব্রাজিলের রক্ষণ।কোরিয়া প্রতি আক্রমণের ওপর নির্ভর করছিল। সাধারণত কর্নার কিকের সময় দেখা যায় সব খেলোয়াড়ই নিজেদের বক্সে চলে আসে গোল আটকাতে। এমনকি ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর মতো খেলোয়াড়কেও দেখি ডি–বক্সে চলে আসে। অথচ কাল কোরিয়ার বিপক্ষে যখন কর্নার হলো, কোরিয়ার একজন খেলোয়াড় ঠিকই সেন্টার লাইনের ওখানে ছিল, যাতে প্রতি আক্রমণে দ্রুত যেতে পারে। কারণ, এমনিতে তারা ব্রাজিলের রক্ষণে যেতে পারছিল না।তাই কর্নারের সময়ে সেন্টার লাইনের ওখানে কাউকে না কাউকে রেখেছেন কোরিয়ার কোচ। অর্থাৎ কোরিয়া সজাগ ছিল তাদের সামর্থ্য নিয়ে।
বলা হচ্ছে, এশিয়ান ফুটবল এগিয়েছে। এই প্রথম এশিয়ার তিন প্রতিনিধি বিশ্বকাপের নকআউটে এসেছে। সেটা ভালো। ইউরোপ–লাতিনের সঙ্গে এশিয়ার পার্থক্য কমেছে। তবে ব্রাজিল, আর্জেন্টিনার মতো দলগুলোর সঙ্গে লড়াই করতে আরও সময় লাগবে। সেটা বোঝা গেছে এই ম্যাচে।
ও হ্যাঁ, আরেকটা কথা বলতে হবে। নেইমার চোট কাটিয়ে কোরিয়া ম্যাচ দিয়ে ফিরলেও পুরো ফিট মনে হয়নি তাঁকে। দলের জন্য উজ্জীবনী শক্তি হিসেবেই আসলে কোচ তিতে এদিন খেলিয়েছেন নেইমারকে। দল উজ্জীবিত হয়েছে। ব্রাজিলের বিশ্বকাপ জেতার বাজির দর বোধহয় আরও বাড়ল