ফরাসি ফরোয়ার্ড কিলিয়ান এমবাপ্পের আয় আসলে কত!
২০২২ সালে অর্থ ও বাণিজ্যবিষয়ক সাময়িকী ফোর্বস জানিয়েছে, ২০২১ সালের মে থেকে ২০২২ সালের মে মাস পর্যন্ত পিএসজির এই তারকার আয় ৪ কোটি ৩০ লাখ ডলার। এই সময়ে অবশ্য তিনি ফুটবলারদের মধ্যে আয়–রোজগারে পঞ্চম স্থানে ছিলেন। তাঁরই ক্লাব–সতীর্থ লিওনেল মেসি এই সময় সাড়ে ১৩ কোটি ডলার আয় করে ছিলেন শীর্ষে। ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর আয় ছিল সাড়ে ১১ কোটি ডলার। নেইমারের আয় ৯ কোটি ৫০ লাখ ডলার। লিভারপুলের মোহাম্মদ সালাহও এগিয়ে এমবাপ্পের চেয়ে—তাঁর আয় ৪ কোটি ৫০ লাখ ডলার।এই হিসাব অবশ্য উল্টে গেছে ফোর্বসের এই সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পরপরই। জুনের দলবদলে এমবাপ্পের রিয়াল মাদ্রিদে যাওয়ার ব্যাপারটি চাউর হয়েছিল। ফরাসি তারকা নিজেও চলে যেতে চাচ্ছেন, এমন খবরই ছিল। তাঁকে পিএসজি অবশ্য শেষ পর্যন্ত রাখতে পেরেছে। সেটি অর্থকড়ি বাড়ানোর পরই। পিএসজির সঙ্গে এমবাপ্পের যে নতুন চুক্তি হয়েছে, সেটিতে তাঁর আয় অনেক বেশি। স্কাই স্পোর্টসের এক প্রতিবেদনে জানা যায়, ফরাসি ক্লাবের সঙ্গে এমবাপ্পে যে তিন বছরের নতুন চুক্তি করেছেন, তাতে প্রতি মাসেই তিনি পাবেন ৪ কোটি ৯০ লাখ ডলার। সেই সঙ্গে পিএসজিতে তাঁর সাইনিং বোনাস ছিল ১ কোটি ২৩ লাখ ডলার।ফোর্বসের তথ্যানুযায়ী খেলার বাইরে থেকেই এমবাপ্পের আয় আরও ১ কোটি ৫০ লাখ ডলার। তিনি এ মুহূর্তে বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের শুভেচ্ছা দূত হিসেবে কাজ করছেন। এর মধ্যে আছে ক্রীড়াসামগ্রী প্রস্তুতকারী নাইকি, সানগ্লাসের ওকলে, ঘড়ি নির্মাতা উবলো ও কম্পিউটার গেম তৈরির ইএ স্পোর্টস।৪৮৮ পিস্তাছবি: ইনস্টাগ্রাম
নিজের আয়ের অর্থ কীভাবে খরচ করেন এমবাপ্পে
নিজের আয়ের অর্থ অনেকভাবেই খরচ করেন এমবাপ্পে। অন্য যেকোনো তারকার মতোই বিলাসবহুল বাড়ি আছে, আছে দামি গাড়ি। ২৪ বছর বয়সী এই তারকার আছে নানা ধরনের শখ। সেই শখের পেছনেও টাকা খরচ করেন প্রচুর। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মিডিয়াতে তাঁর অর্থ খরচের বিভিন্ন অনুষঙ্গের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে।
এমবাপ্পের বাড়ি ও গাড়ি
এমবাপ্পে নিজের অর্থ কীভাবে খরচ করেন, এ নিয়ে ফুটবলপ্রেমীদের আগ্রহ থাকতেই পারে। সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, এমবাপ্পে প্যারিসে যে ফ্ল্যাটে থাকেন, সেটির মূল্য ১ কোটি ৪ লাখ ডলার। ডুপ্লেক্স এই ফ্ল্যাটটি ৬ হাজার ৪৪৪ বর্গফুটের। ফ্ল্যাটটি প্যারিসের যে এলাকায় অবস্থিত, সেটি ২০১৭ সাল থেকে ফ্রান্সের সবচেয়ে দামি আবাসিক এলাকা হিসেবে পরিচিত। তাঁর এই ফ্ল্যাটে আছে ১২টি শয়নকক্ষ, একটি পূর্ণাঙ্গ বাস্কেটবল কোর্ট, একটি বিশাল লাইব্রেরি, স্বয়ংসম্পূর্ণ জিম, ছাদে জাকুজি ও সুইমিংপুল তো আছেই। জাকুজি থেকে প্যারিসের বিখ্যাত আইফেল টাওয়ার দর্শনেরও ব্যবস্থা আছে।এমবাপ্পেরও অন্য তারকাদের মতো দামি গাড়ি কেনার বাতিক আছে। তাঁর সংগ্রহে আছে ১ লাখ ২৮ হাজার ডলারের ভক্সওয়াগন তোয়ারেগ, ১ লাখ ৪৪ হাজার ডলারের মার্সিডিজ বেঞ্জ ভি ক্লাস। অডি, বিএমডব্লুর বিভিন্ন মডেল তো আছেই। আছে রেঞ্জ রোভারও। তাঁর সংগ্রহের সবচেয়ে দামি গাড়ি হচ্ছে ফেরারির ৪৮৮ পিস্তা, যার দাম ৫ লাখ ৬৫ হাজার ডলার। যদিও এসব গাড়ি তিনি চালাতে পারেন না। চালক নিয়েই চড়তে হয়। এখনো গাড়ি চালানো শেখেননি ফুটবল দুনিয়া কাঁপানো এই ফরোয়ার্ড।দেশ–বিদেশ ঘুরতে পছন্দ করেন এমবাপ্পে। বিশ্বকাপ শেষে পিএসজিতে ফিরে লিগের দুটি ম্যাচ খেলেছেন। এর পরপরই তিনি তাঁর বন্ধু ও সতীর্থ মরোক্কান তারকা আশরাফ হাকিমিকে সঙ্গে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে ছুটি কাটাতে গেছেন। সেখানে দুই বন্ধুকে নানাভাবেই দেখা গেছে। দেখতে গেছেন এনবিএর ম্যাচ। স্নিকার্স কেনারও শখ আছে তাঁর। ২০১৮ সালে লস অ্যাঞ্জেলেসের একটি ব্র্যান্ডের স্নিকার্স শপ থেকে তিনি দুই জোড়া স্নিকার্স কিনেছিলেন, যে দুটির দাম ছিল ১ হাজার ২২৬ মার্কিন ডলার।২০২১ সালে প্রকাশিত কমিকসে তুলে ধরা হয়েছে তাঁর জীবন। কীভাবে প্যারিসের এক ছোট্ট অভিবাসী শিশু বিশ্বের অন্যতম সেরা ফুটবল তারকা হয়ে উঠল, সেটি গল্পে–ছবিতে বর্ণনা করা হয়েছে সেই কমিকস বইয়ে। নিজের নামে কমিকস থাকবে, এটা তাঁর জন্য ছিল স্বপ্ন পূরণের মতোই ব্যাপার। কমিকসটি প্রকাশিত হওয়ার পর তিনি ইনস্টাগ্রামে লিখেছিলেন, ‘আমার নিজের জীবনের গল্প নিয়ে কমিকস প্রকাশিত হবে, এটা আমার স্বপ্ন পূরণই।’নিজের বিলাসব্যসনেই শুধু অর্থ ব্যয় করেন না এমবাপ্পে, প্রচুর অর্থ তিনি মানুষের কল্যাণে ব্যয়ও করেন। ২০১৮ সালে বিশ্বকাপ জয়ের বোনাসের অর্থ তিনি দুস্থ ও সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের কল্যাণে ব্যয় করেছিলেন। বিশ্বকাপ জেতার পর তাঁর সেই বোনাসের পরিমাণ ছিল ৪ লাখ ৯০ হাজার ডলার। ২০১৯ সালে নতেঁ ও আর্জেন্টিনার ফুটবলার এমিলিয়ানো সালা যে মর্মান্তিক বিমান দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছিলেন, সেটি উদ্ধারের একটি বেসরকারি উদ্যোগে ৩২ হাজার ডলার দান করেছিলেন এমবাপ্পে। ২০২১ সালে গৃহহীনদের নিয়ে কাজ করা দাতব্য সংস্থা আব্বে পিয়েরে ফাউন্ডেশনে এমবাপ্পে ‘বড় অঙ্কের’ অর্থ দান করেছিলেন, যেটির পরিমাণ প্রকাশ করা হয়নি।
আছে নিজের দাতব্য সংস্থা
২০২০ সালের জানুয়ারিতে এমবাপ্পে নিজের দাতব্য সংস্থার উদ্বোধন করেন। তাঁর নামের দুই আদ্যক্ষর ‘কেএম’ দিয়ে দাতব্য সংস্থাটির নামকরণ করা হয়েছে। তিনি এই সংস্থার মাধ্যমে প্যারিসের ৯৮ জন দরিদ্র শিশুর ‘স্বপ্ন পূরণে’র দায়িত্ব নিয়েছেন। এ ব্যাপারে বলেছিলেন, ‘আমরা এই ৯৮ জন শিশুর সব দায়িত্ব নিয়েছি। তারা নিজেদের কর্মজীবনে প্রবেশের আগপর্যন্ত আমরা তাদের সব ধরনের সাহায্য করে যাব।’