বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে পরিবেশ অধিদপ্তরের কার্যক্রমে ক্ষুব্ধ হাইকোর্ট

বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে পরিবেশ অধিদপ্তরের কার্যক্রমে ক্ষুব্ধ হাইকোর্ট

ঢাকায় বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে পরিবেশ অধিদপ্তরের কার্যক্রমে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে যে ৯ দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল তা বাস্তবায়নে আবারও সময় দিয়েছেন হাইকোর্ট।

এসময় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের উদ্দেশে হাইকোর্ট বলেন, আপনাদের অনেকের স্ত্রী-সন্তান বিদেশে থাকেন, আপনাদের তো সমস্যা নাই। আমাদের এখানে থাকতে হয়। এই দূষণে আমাদের তো সমস্যা হয়।

 

আদালত আরও বলেন, মিটিং করে কী লাভ, যদি পরিবেশ দূষণ না কমে। এসব বন্ধ করেন। বায়ুদূষণে মানুষকে মেরে ফেলছেন।

আরও পড়ুন: একবছরে ঢাকায় গড়ে বায়ুদূষণ বেড়েছে ৯.৮ শতাংশ

 

রোববার (৫ ফেব্রুয়ারি) হাইকোর্টের বিচারপতি কেএম কামরুল কাদের ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এসব কথা বলে নতুন করে আদেশ দেন।

এতে অবৈধ ইটভাটা অপসারণসহ বায়ুদূষণ থেকে বাঁচাতে যে ৯ দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল তা বাস্তবায়নের জন্য আবারও সময় বেঁধে দেন হাইকোর্ট।

ফলে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে নির্দেশনা বাস্তবায়ন করে প্রতিবেদন দিতে হবে পরিবেশ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্টদের। এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানি হবে ২২ ফেব্রুয়ারি। এর আগে পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়েছিল।

 

আরও পড়ুন: বায়ুদূষণ যেসব কঠিন রোগের কারণ

শুনানিতে পরিবেশ অধিদপ্তরের আইনজীবী আমাতুল করিম প্রতিবেদন তুলে ধরে বলেন, আদালতের আদেশের পরই উচ্চপর্যায়ে মিটিং হয়েছে। এছাড়া বেশ কিছু কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ফলে এই মুহূর্ত পরিবেশ সূচক (ইনডেক্সে) অনুসারে ঢাকার অবস্থান ২৪ নম্বরে।

তখন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, এই সূচক তো ঠিক নেই। সকালে এক রকম থাকে বিকেলে আরেক রকম হয়। এটা তো সময় সময় পরিবর্তন হয়।

 

এসময় হাইকোর্ট বলেন, সুচকে এক নম্বরে থাকুক আর ২৪ নম্বরে থাকুক সব মিলিয়ে পরিবেশে সূচকে আমাদের অবস্থান তো ভালো না।

আরও পড়ুন: শিশুদের শরীর-মনে প্রভাব ফেলছে বায়ুদূষণ, বাড়ছে রোগবালাই

পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে কোর্ট বলেন, মিটিং করে কী লাভ, যদি পরিবেশ দূষণ না কমে। এসব বন্ধ করেন। বায়ুদূষণে মানুষকে মেরে ফেলছেন।

 

এসময় পরিবেশ অধিদপ্তরের আইনজীবী লোকবল সংকট, এবং অভিযান চালাতে ম্যাজিস্ট্রেট সংকটের কথা বলেন।

তখন আদালত বলেন, ম্যাজিস্ট্রেট না থাকলে জুডিসিয়ারি থেকে নেবেন। লোকবল সংকটের কথা জানিয়েছেন আইনজীবীকে? পাল্টা প্রশ্ন করেন আদালত।

২৫-৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে সাত লাখ ৩৩ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তরের আইনজীবী এ তথ্য দিলে আদালত ক্ষোভ প্রকাশ করেন। বলেন, এ সময়ের পরিবেশ দূষণের ফলে পরিবেশ এবং মানুষের যে ক্ষতি হয়েছে তাতে তো কয়েক মিলিয়ন ডলার হবে। আর আপনি বলছেন সাত লাখ টাকা জরিমানা করেছেন।

আরও পড়ুন: চোখ ও ফুসফুসের ক্ষতিসহ বায়ুদূষণ কঠিন যে রোগের ঝুঁকি বাড়ায়

আদালত আরও বলেন, যে পরিমাণ জরিমানা আদায় করেছেন তার থেকে বেশি বেতন নেন, সুযোগ-সুবিধা নেন। আদালত সিদ্ধান্ত দিয়েছে, বাস্তবায়নের নির্দেশ দিয়েছে। এখন বাস্তবায়নের দায়িত্ব আপনাদের। সেটি না করে আপনাদের কি মিটিং আর চা খেতে বলা হয়েছে?

‘ইটভাটার মালিকরা আপনাদের ম্যানেজ করেছে, ম্যাজিস্ট্রেট কেন থাকবে না? আপনাদের লজিস্টিক সমস্যা বলেননি কেন? আপনাদের কাজে সন্তোষ হওয়ার মতো কিছু নেই।’

সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তাদের আদালত বলেন, মুনিব না হয়ে দেশের সেবক হতে। শুধু হাই পাওয়ার মিটিং করলে হবে না।

আরও পড়ুন: জনবহুল এলাকায় ওয়েল্ডিং ওয়ার্কশপ, বাড়ছে শব্দ ও বায়ুদূষণ

এসময় আইনজীবী বলেন, দেশের বায়ুদূষণের প্রায় ৩০ শতাংশ পার্শ্ববর্তী দেশ হতে আসে।

তখন আদালত বলেন, ভারতের দিল্লিতে বায়ুদূষণ হয়, কিন্তু তার প্রভাব দেশে আসতে সময় লাগে। এছাড়া আমাদের পাশে আসাম, ত্রিপুরাসহ সীমান্ত ঘেঁষা রাজ্যগুলোতে পরিবেশ বা বায়ুদূষণ কম। এর প্রভাব তেমনটি আমাদের দেশে আসে না। চীনে বায়ুদূষণ বেশি থাকলেও হিমালয়ের কারণে তার প্রভাব আমাদের ওপর পড়ে না। হিমালায় আমাদের রক্ষা করে।

পরে আদালত ঢাকাসহ আশপাশের পাঁচ জেলায় অবস্থিত সব অবৈধ ইটভাটা দুই সপ্তাহের মধ্যে বন্ধ করে অপসারণের নির্দেশ দেন।

জাতীয় পরিবেশ শীর্ষ সংবাদ