গোলাম রাব্বানী
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ ও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের কেনাকাটা শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন। ইতোমধ্যে দুই নির্বাচনের ব্যালট পেপার ছাপতে প্রায় ৭০০ টন কাগজের অর্ডার দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া নির্বাচন কমিশনের হাতে থাকা দেড় লাখ ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভএম) প্রায় ৪০-৪৫ হাজারে ত্রুটি থাকায় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের জন্য ব্যালট পেপার ছাপার কাগজ সংগ্রহ শুরু করেছে ইসি। একই সঙ্গে আসন্ন পাঁচ সিটি নির্বাচনেও ইভিএমের পাশাপাশি ব্যালটে পেপারে ভোটের প্রস্তুতি রাখা হচ্ছে। চলতি বছরের ডিসেম্বর বা আগামী বছরের জানুয়ারিতে সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ইসি কেনাকাটা শুরু করেছে।
ইসির একটি সূত্র জানিয়েছে, মে-জুনের মধ্যে সংসদ ও নভেম্বরের মধ্যে উপজেলা নির্বাচনের ব্যালট পেপারের কাগজসহ প্রয়োজনীয় সামগ্রী কেনাকাটা শেষ করার পরিকল্পনা নিয়েছে কমিশন। বর্তমানে কাঁচামাল সংকটের কারণে রাষ্ট্রায়ত্ত কর্ণফুলী পেপার মিলের (কেপিএম) কাছে প্রায় ৭০০ টন কাগজ চেয়ে চিঠি দিয়েছে ইসি। জানা গেছে, সংসদ নির্বাচন ছাড়া উপজেলা-সিটি নির্বাচনে ব্যালট পেপার ছাপানোর জন্য তিন রঙের কাগজ প্রয়োজন হয়। সাধারণত হলুদ, নীল ও গোলাপি রঙের কাগজ দিয়ে ব্যালট পেপার ছাপানো হয়। চলতি বছরের মাঝামাঝিতে ইসির চাহিদা অনুযায়ী রঙিন কাগজ সরবরাহ করবে কর্ণফুলী পেপার মিল। অন্যদিকে নির্বাচনের ব্যালট পেপারের কাগজ কেনার পাশাপাশি অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী কেনাকাটার কার্যক্রমও চলছে। নির্বাচনী মালামালের মধ্যে- ব্যালট পেপারের কাগজ, স্ট্যাম্প প্যাড, অফিশিয়াল সিল, মার্কিং সিল, ব্রাস সিল, লাল গালা, আম কাঠের প্যাকিং বাক্স, অমোচনীয় কালি, বিভিন্ন ফরম, প্যাকেট, সুই-সুতা, খাম, মোমবাতি রয়েছে। ইতোমধ্যে এসব নির্বাচনী সামগ্রী কেনাকাটার প্রাথমিক প্রক্রিয়া চলছে কমিশনে। ইসির একজন কর্মকর্তা বলেছেন, নির্বাচনে ভোট গ্রহণের প্রয়োজনীয় উপকরণগুলো হচ্ছে- অমোচনীয় কালির কলম, ব্যালট বাক্সের সিল, স্ট্যাম্প প্যাড, রেড সিলিং ওয়াক্স, অফিসিয়াল সিল, মার্কিং সিল ও ব্রাশ সিল। চলতি বছরের ডিসেম্বর বা আগামী বছরের জানুয়ারির শুরুতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তাই নির্বাচন উপকরণ কেনার প্রক্রিয়া ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। এসব উপকরণ ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও ব্যবহার করা হবে। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পরই অনুষ্ঠিত হবে এ নির্বাচন। নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, স্ট্যাম্প প্যাড কেনা হবে প্রায় সাড়ে ৬ লাখ, রেড সিলিং ওয়াক্স প্রায় ১৮ হাজার কিলোগ্রাম, অফিসিয়াল সিল প্রায় ৬ লাখ, মার্কিং সিল প্রায় ১২ লাখ, ব্রাশ সিল কেনা হবে ১ লাখের বেশি। আর অমোচনীয় কালির কলম প্রায় ৭ লাখ এবং প্রায় ৩৫ লাখ ব্যালট বাক্সের সিল কিনবে কমিশন। গতকাল কর্ণফুলী পেপার মিল (কেপিএম) মহাব্যবস্থাপক গণমাধ্যকে জানিয়েছেন, ‘জাতীয় নির্বাচনে ব্যালট পেপার হিসেবে ব্যবহারের জন্য চাহিদা অনুযায়ী সময়মতো ইসিকে কাগজ দেওয়া হবে। নির্বাচনের এখনো অনেক সময় বাকি রয়েছে। নির্ধারিত সময়ের আগেই আমরা চাহিদা অনুযায়ী ইসিকে কাগজ দিতে পারব। নির্বাচনে ব্যালট পেপার ছাপানোর জন্য তিন রঙের কাগজ প্রয়োজন হয়। সাধারণত হলুদ, নীল ও গোলাপি রঙের কাগজ দিয়ে ব্যালট পেপার ছাপানো হয়। চলতি বছর ইসির চাহিদা অনুযায়ী রঙিন কাগজ সরবরাহ করবে কর্ণফুলী পেপার মিল। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন, উপজেলা নির্বাচন ও পাঁচ সিটি নির্বাচনসহ অন্যান্য নির্বাচনের জন্য প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার প্রয়োজন হতে পারে। নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা ও নির্বাচন পরিচালনা- এ দুই খাতে ব্যয় বরাদ্দ করে নির্বাচন কমিশন। ইসি সচিবালয়ের কর্মকর্তারা জানান, নির্বাচন পরিচালনা খাতে বরাদ্দের উল্লেখযোগ্য অংশ ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্টদের পারিশ্রমিক, নির্বাচনী মালামাল কেনায় ব্যয় হবে। এ ছাড়া ব্যালট পেপার, বিভিন্ন ফরম, প্যাকেট, নির্দেশিকা, ম্যানুয়াল, মনিটরিং সেল, প্রচারণা, ভোট কেন্দ্র-ভোটকক্ষ নির্মাণ, কক্ষ সংস্কার, ভোট কেন্দ্রের বেষ্টনী নির্মাণ, ভোট কেন্দ্রের মনোহারি দ্রব্য কেনা, পরিবহন খরচ, কর্মকর্তাদের ডাক, তার, বার্তাবাহক, জ্বালানিসহ বিভিন্ন নির্বাচনী সামগ্রী কেনায়ও অর্থ ব্যয় হবে। রিটার্নিং অফিসার, সহকারী রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে নির্বাচনী ফলাফল আদান-প্রদান, নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল ও মামলা পরিচালনা, বিচারিক ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের জ্বালানি খরচ, সহকারী রিটার্নিং অফিসারদের যাতায়াত ব্যয় রয়েছে। সব মিলিয়ে নির্বাচনী পরিচালনায় অন্তত ৬০-৭০টি খাত রয়েছে।