ভূতাত্ত্বিকভাবে রাজধানী ঢাকাও ‘মাঝারি’ ধরনের ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে। এতে অপরিকল্পিত নগরায়ন এবং বিল্ডিং কোড না মেনে ভবন তৈরির কারণে ঢাকায় বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. জিল্লুর রহমান বলেন, ভূমিকম্পের উৎসগত দিক দিয়ে ঢাকা ‘মধ্য’ ঝুঁকিতে রয়েছে। তবে ঝুঁকিটা বাড়িয়েছে এখানকার অবকাঠামোগত উন্নয়ন। ঢাকার ভবনগুলো ভূমিকম্প ঝুঁকি বিবেচনায় গড়ে ওঠেনি। এখানে সাড়ে ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
তুরস্ক ও সিরিয়ার ভূমিকম্পের পরে ক্ষয়ক্ষতির বড় কারণ হিসেবে বিল্ডিং কোড না মেনে ভবন তৈরির বিষয়টি সবার সামনে আসে। সেদিক বিবেচনায় রাজধানী ঢাকায় বেশির ভাগ ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে বিল্ডিং কোড না মানার অভিযোগ রয়েছে। এতে সাড়ে ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হলেই বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, ভূমিকম্প বা বড় দুর্যোগে অপ্রশস্ত রাস্তার কারণে দুর্যোগ-পরবর্তী উদ্ধারকাজ চালানো কঠিন হয়ে পড়বে। এতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি বাড়বে। তারা বলছেন, বহু পুরোনো ভবন, অপরিকল্পিত নির্মাণ, ভবন নির্মাণে বিল্ডিং কোড অনুসরণ না করায় ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকি কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেবে। নগর পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ভূমিকম্পের ঝুঁকি কতটা তা নির্ভর করে ভূমিকম্পের মাত্রা এবং অবকাঠামো কতটা ভূমিকম্প সহনশীল তার ওপর।
ঢাকার বেশির ভাগ ভবনের ভূমিকম্প প্রতিরোধ ব্যবস্থা দুর্বল। পাশাপাশি ২০০০ সালের পর থেকে গড়ে ওঠা নতুন আবাসিক এলাকাগুলো ঝুঁকি আরো বাড়িয়েছে। বিশেষ করে পুরান ঢাকায় গা ঘেঁষাঘেষি করে গড়ে ওঠা ভবন বা বসিলা, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা, বনশ্রী, আফতাবনগরসহ এসব এলাকা জলাশয়, জলাভূমি ভরাট করে বালি বা কাদামাটির ওপর করা হয়েছে। যার কারণে এসব এলাকা বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে।
সমন্বিত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মসূচি (সিডিএমপি) ও জাইকা ২০০৯ সালে এক যৌথ জরিপ থেকে জানা যায়, ঢাকায় ৭ বা তার বেশি মাত্রার ভূমিকম্প হলে শহরের ৭২ হাজার ভবন ভেঙে পড়বে; ১ লাখ ৩৫ হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এরপর কেটে গেছে ১৪ বছর। এই সময়ে নিয়ম না মেনে গড়ে তোলা ভবনের সংখ্যা বেড়েছে। ভূমিকম্পের মতো দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এতে আরো বাড়বে। বিশেষজ্ঞরা ভূমিকম্পে ক্ষতির বিষয়ে বারবার বললেও এ নিয়ে তেমন বড় ধরনের পরিবর্তন দেখা যায়নি।
এ বিষয়ে রাজউকের নগর পরিকল্পনাবিদ মো. আশরাফুল ইসলাম বলেন, ঢাকায় ৭-এর বেশি মাত্রার ভূমিকম্প হলে পুরোনো ঝুঁকিপূর্ণ ভবন এবং শুধু ব্রিকের তৈরি যেসব ভবন সেগুলো ধসে পড়ার আশঙ্কা আছে। তাছাড়া বালু দিয়ে জলাশয় ভরাট করে তৈরি ভবনগুলোও ঝুঁকিতে রয়েছে। বিশেষ করে প্রগতি সরণি থেকে পূর্ব দিকের এলাকা এবং মোহাম্মদপুর, বসিলা, বেড়িবাঁধ এলাকাও ঝুঁকিতে রয়েছে। যেসব ভবন বিল্ডিং কোড না মেনে বানিয়েছে তারা আরো বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। বিশেষ করে যেসব ভবন ১০ তলা ফাউন্ডেশন নিয়ে ১২ তলা বা ১৪ তলা উঠিয়েছে এসব ভবন ভূমিকম্প এলে ঝাঁকুনি সহ্য করতে পারবে না। এতে ক্ষতির পরিমাণ বাড়বে। রাজধানীর এফআর টাওয়ার দুর্ঘটনার পরে ১ হাজার ৮১৮টি নকশাবহির্ভূত নির্মাণ করা ভবন চিহ্নিত করে রাজউক। এসব ভবনগুলোই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।