নিজস্ব প্রতিবেদক
অনলাইন জুয়াড়ি, ক্রিপ্টো কারেন্সি ও অবৈধভাবে ফরেন ট্রেডিংয়ের সঙ্গে জড়িত অ্যাকাউন্টের কালো তালিকা করার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। পাশাপাশি অ্যাকাউন্টগুলোর লেনদেন কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
বুধবার বিকাশ, নগদ, রকেটসহ মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস প্রোভাইডারদের এই নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে মোবাইল সার্ভিস প্রোভাইডারদের এক বৈঠক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
বৈঠকে উপস্থাপন করা প্রতিবেদন অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে এমএমএসের সক্রিয় গ্রাহক সংখ্যা ৫ কোটি ৫৫ লাখ। এবং সক্রিয় এজেন্ট সংখ্যা ১৫ লাখ ২২ হাজার। বিপুল সংখ্যক সক্রিয় হিসাবের কারণে কিছু অসাধুচক্র স্বল্প সময়ে দ্রুত পদ্ধতিতে এম এফ এসের মাধ্যমে অনলাইন জুয়া পরিচালনা করছে।
পাশাপাশি ডিজিটালাইজড হওয়ার কারণে অনেক জোয়াড়ি ব্যাংকিং প্লাটফর্ম কেউ ব্যবহার করছে। এক্ষেত্রে যেসব ব্যক্তি বা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান এবং এজেন্ট এ ধরনের সন্দেহজনক লেনদেন করছে তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে তাদের অ্যাকাউন্ট বন্ধ করার এবং কালো তালিকা মুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ব্যাংক ও এমএফএস সমূহের ট্রানজেকশন প্রোফাইল হালনাগাদ করাসহ সব ধরনের লেনদেন তদারকি কার্যক্রম সুসংগঠিত করার জন্য নির্দিষ্ট ওয়েবসাইট ফ্রেমওয়ার্ক প্রণয়ন করার প্রয়োজনীয়তা সৃষ্টি হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক জানান, অনলাইন জুয়াড়ির বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করছে। এক অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দিলে পরক্ষণেই অন্য একাউন্ট দিয়ে তারা লেনদেন পরিচালনা করে। তাই তাদেরকে সনাক্ত করা এবং তাদের কার্যক্রম বন্ধ করা বেশ কঠিন। সর্বোপরি এমএফএসগুলোকে তাদের তদারকি বৃদ্ধি এবং সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তিনি বলেন, সন্দেহজনক অ্যাকাউন্টগুলোর তথ্য বিটিআরসি বাংলাদেশ ব্যাংক এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কাছে সংরক্ষণ করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এছাড়াও অবৈধ লেনদেনে জড়িত প্রমাণিত অপরাধীকে শাস্তির আওতায় আনার বিষয়ে চিন্তা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
দেশে বিকাশ, রকেট, এমক্যাশ, উপায়সহ বর্তমানে ১৩টি প্রতিষ্ঠান মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে আর্থিক সেবা দিচ্ছে। ডাক বিভাগের সেবা ‘নগদ’ একই ধরনের সেবা দিচ্ছে। মোবাইল ব্যাংকিং সেবা এখন আর শুধু টাকা পাঠানোতেই সীমাবদ্ধ নেই। এর মাধ্যমে এখন দৈনন্দিন কেনাকাটা, গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানিসহ বিভিন্ন পরিষেবা বিল পরিশোধ ও মোবাইল রিচার্জসহ নানা ধরনের সেবা মিলছে। শ্রমজীবীরাও এখন এমএফএস সেবার মাধ্যমে গ্রামে টাকা পাঠাচ্ছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মোবাইল আর্থিক সেবার হালনাগাদ পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, একক মাসের হিসাবে গত বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে ৯৬ হাজার ১৩২ কোটি টাকার লেনদেন হয়, যা এই সেবা চালুর পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ লেনদেন। এর আগে গত বছরের এপ্রিলে ১ লাখ ৭ হাজার ৪৬০ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছিল। নভেম্বর মাসে এমএফএসের মাধ্যমে টাকা পাঠানো, উত্তোলন, বেতন-ভাতা সবকিছু মিলিয়ে লেনদেন হয় ৯২ হাজার ১২৫ কোটি টাকা। পরের মাস ডিসেম্বরে লেনদেন বাড়ে চার হাজার সাত কোটি টাকা।
গত বছরের ছয় মাসের লেনদেন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, জুলাই মাসে ৮৯ হাজার ১৬৯ কোটি, আগস্টে ৮৭ হাজার ৪৪৬, সেপ্টেম্বরে ৮৭ হাজার ৬৮৫ কোটি ও অক্টোবরে ৯৩ হাজার ১৩ কোটি টাকা এমএফএসের মাধ্যমে লেনদেন হয়। মোবাইল ব্যাংকিংয়ে লেনদেন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে নিবন্ধিত গ্রাহক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য মতে, ডিসেম্বরে নিবন্ধিত হিসাব ছিল ১৯ কোটি ১০ লাখ ৬৩ হাজার ৫৭৩টি। নভেম্বরে তা ছিল ১৮ কোটি ৮৫ লাখ ৫৯ হাজার ৭৩৬। এক মাসের ব্যবধানে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে হিসাব বেড়েছে ২৫ লাখ ৩ হাজার ৮৩৭টি।