আন্দোলনের পথেই হাঁটছে বিএনপি

আন্দোলনের পথেই হাঁটছে বিএনপি

সরকারের পদত্যাগ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারসহ দশ দফা দাবির বিষয়ে কোনো ছাড় দেবে না বিএনপি। এজন্য দাবি আদায়ে আন্দোলনের পথেই হাঁটছে দলটি। এবার সফলতা পেতে আটঘাট বেঁধে নেমেছেন নেতারা। চলছে নানামুখী তৎপরতাও।

 

একই সঙ্গে জনসম্পৃক্ততা বাড়ানোর কৌশলও নিয়েছেন তারা। যে কারণে দশ দফার সঙ্গে গ্যাস, বিদ্যুৎসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ইস্যুতে কর্মসূচি দিচ্ছেন। ইউনিয়ন ও মহানগরের পর সব সাংগঠনিক জেলায় পদযাত্রার মাধ্যমে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সাংগঠনিক শক্তি পরীক্ষার পাশাপাশি সাধারণ মানুষকেও আন্দোলনে সম্পৃক্ত করতে চায় দলটি। এছাড়া দাবি বাস্তবায়নে সরকারের ওপর আরও চাপ তৈরি করতে কূটনৈতিক তৎপরতাও বাড়ানো হয়েছে। বিএনপির একাধিক নীতিনির্ধারক জানিয়েছেন এসব তথ্য।

জানা যায়, এবার দল ‘ডু অর ডাই’ নীতিতে-এমন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের। চূড়ান্ত আন্দোলনের জন্য সেভাবেই প্রস্তুতিও নেওয়া হচ্ছে। নেতাদের ধারণা, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কেন্দ্র করে সংলাপ বা আলোচনার প্রস্তাব দেওয়া হতে পারে। কিন্তু অতীত অভিজ্ঞতা-এ ধরনের আলোচনায় কোনো ফল আসেনি। যে কারণে এবার তারা কোনো প্রস্তাবেই সাড়া দেবেন না। যদি সরকারের পদত্যাগ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন, এ দুই দফা মেনে নেওয়া হয়, তবেই সংলাপ বা আলোচনার বিষয় বিবেচনা করা হবে।

জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘দাবি না মানলে রাজপথেই ফয়সালা হবে। বিএনপির দশ দফার সঙ্গে জনগণও যে একমত, এর প্রমাণ পেয়েছি বিভিন্ন পদযাত্রায়। ভালো সাড়া পাচ্ছি। জনগণ অংশগ্রহণ করছে। সারা দেশে জনগণ আওয়াজ দিয়েছে-যারা গণতন্ত্র হত্যা করেছে, অর্থনীতি ধ্বংস করেছে, তারা দেশ মেরামত করতে পারবে না। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মানুষ আজ বিপন্ন, এ সরকার থেকে জনগণ মুক্তি চায়। অবৈধ সংসদ বাতিল করে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিয়ে এ সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। বিএনপির দাবির পক্ষে আস্তে আস্তে স্বতঃস্ফূর্ত গণজাগরণ হবে-আমরা সেটাই প্রত্যাশা করছি।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক মহল বলছে, বাংলাদেশে গণতন্ত্র নেই। দেশের জনগণের পাশাপাশি বিশ্বও বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার দেখতে চায়। আমরা দশ দফা দিয়েছে। এ দশ দফা মেনে সরকার যদি সংলাপ বা আলোচনার আহ্বান করে, নিশ্চয় আমরা যাব। এটা দশ দফার ওপর এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করবে।’

এদিকে আগামী শনিবার সব সাংগঠনিক জেলায় পদযাত্রা কর্মসূচি সফলে নানা প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে বিএনপি। কেন্দ্রীয় নেতারা জানান, ইউনিয়ন পর্যায়ের কর্মসূচি সফল হয়েছে। জেলায়ও সফল হবে। ইতোমধ্যে সাংগঠনিক ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকরা জেলাভিত্তিক প্রস্তুতি সভা শুরু করেছেন। সেখানে জেলা ছাড়াও সংশ্লিষ্ট সব ইউনিটের শীর্ষ পাঁচ নেতাকে নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক হচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলটির একাধিক সাংগঠনিক সম্পাদক যুগান্তরকে বলেন, জেলা পর্যায়ের পদযাত্রা কর্মসূচিতে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মীর সমাগম হবে। পাশাপাশি সাধারণ মানুষ অংশ নেবেন। এজন্য লিফলেট বিতরণসহ নানা ধরনের প্রচারণা চলছে। এছাড়া কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী, জেলা ও এর অধীনে থাকা ইউনিটের পদধারী সব নেতার পদযাত্রায় অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক। ইচ্ছাকৃতভাবে বা মিথ্যা তথ্য দিয়ে কর্মসূচিতে অংশ না নিলে তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্যও বলা হয়েছে। এছাড়াও সব বিভেদ ভুলে নেতাকর্মীদের জেলার পদযাত্রায় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে দায়িত্বপ্রাপ্তদের কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

জানা যায়, জেলার পর উপজেলা, থানা ও পৌরসভায় কর্মসূচি দেওয়া হবে। এরপর আবার জেলায় জেলায় কর্মসূচি শেষ করে মহানগরে কর্মসূচি পালন করা হবে। এভাবে কর্মসূচির সঙ্গে সাধারণ মানুষকে সম্পৃক্ত করে চূড়ান্ত আন্দোলনের পথে হাঁটতে চায় বিএনপি। পরে মে-জুনে কঠোর কর্মসূচি দেওয়ার কথা ভাবছেন নেতারা।

এদিকে দাবি আদায়ে আন্দোলনের পাশাপাশি বন্ধুরাষ্ট্রের সহায়তা প্রয়োজন বলে মনে করছে বিএনপি। এজন্য বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলার পাশাপাশি কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করেছে। গত এক মাসে বাংলাদেশে নিযুক্ত বেশ কয়েকটি প্রভাবশালী দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন দলটির সিনিয়র নেতা ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক কমিটির সদস্যরা। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের প্রতিনিধি হিসাবেও বেশ কয়েকজন নেতা প্রভাবশালী কয়েকটি দেশ সফর করেছেন।

বিএনপির আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান ও দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, ‘বাংলাদেশে গণতন্ত্র নেই। আইনের শাসন এবং মানুষের জীবনের নিরাপত্তা নেই। মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে, গুম-খুন হত্যা হচ্ছে। এসব কোনো অভ্যন্তরীণ বিষয় নয়, আন্তর্জাতিক বিষয়। সারা বিশ্ব এসব অবগত। বিশ্বের যে কোনো শক্তি এবং বাংলাদেশের ভেতর ও বাইরের আন্তর্জাতিক সংগঠন যারা গণতন্ত্রের পক্ষে, মানবাধিকারের পক্ষে, সুশাসনের পক্ষে; তারা বাংলাদেশে যা চলছে, সেই সম্পর্কে অবগত। বিএনপির সঙ্গে সবার যোগাযোগ আছে।’

খালেদা জিয়ার রাজনীতির বিষয়টি সামনে আনায় ‘সন্দেহ’ স্থায়ী কমিটির : এদিকে হঠাৎ করে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রাজনীতির বিষয়টি সামনে আনাকে সন্দেহের চোখে দেখছে স্থায়ী কমিটি। সোমবার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে এক ভার্চুয়াল সভায় এ প্রসঙ্গে কথা বলেন নেতারা। বিষয়টিকে সরকারের ‘কূটকৌশল’ বলে মনে করেন তারা। একই সঙ্গে এ নিয়ে কোনো কথা না বলার সিদ্ধান্তও হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থায়ী কমিটির এক সদস্য যুগান্তরকে বলেন, ‘আইনমন্ত্রী আনিসুল হক রোববার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, খালেদা জিয়া রাজনীতি করতে পারবেন না-তার মুক্তির সময় এমন কোনো শর্ত সরকার দেয়নি। তার এই বক্তব্যের প্রসঙ্গটি স্থায়ী কমিটির সভায় ওঠে। হঠাৎ করেই খালেদা জিয়ার রাজনীতির বিষয়টি সরকারের পক্ষ থেকে তোলাটা মানুষকে বিভ্রান্ত করার উদ্দেশ্য থাকতে পারে বলে মনে করেন নেতারা। নির্বাচন ও আন্দোলনকে সামনে রেখে এমন বক্তব্য ‘রাজনৈতিক ফাঁদ’ হতে পারে বলেও সভায় কয়েকজন মন্তব্য করেন। পরে এ বিষয়টি নিয়ে মাথা না ঘামানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।’

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট এবং জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত করে তাকে ২০২০ সালের ১৯ এপ্রিল মুক্তি দেয় সরকার। তখন দেশে করোনাভাইরাস মহামারি চলছিল। ওই সময় যে শর্তে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল, এর মধ্যে ছিল খালেদা জিয়া বিদেশে যেতে পারবেন না এবং দেশে থেকে বাসায় চিকিৎসা নেবেন। এরপর থেকে খালেদা জিয়ার পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ছয় মাস পরপর তার মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে।

রাজনীতি