অমর একুশে বইমেলায় প্রতি বছর সহস্রাধিক কবিতার বই প্রকাশ হয়। মেলা শেষে দেখা যায়, বই প্রকাশের দিক থেকে গল্প, উপন্যাসসহ সাহিত্যের অন্যান্য ধারার চেয়ে কবিতার বই বেরিয়েছে বেশি। কবিদের এই আধিক্যে খুশি হওয়ার কথা থাকলেও বিষয়টি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন অনেকে। লেখক ও প্রকাশকরা বলছেন, মেলা উপলক্ষে অনেকেই কবিতার বই লেখেন। কিন্তু ক’জনের লেখা সত্যিকারের কবিতা হয়ে উঠল, তা নিয়ে তাঁদের কেউ মাথা ঘামান না। কবিতার মধ্যে যে আবেগ ও কাব্যভাব থাকা দরকার, সেটি অনেকের লেখার মধ্যে নেই। অথচ শামসুর রাহমান, আল মাহমুদ, সৈয়দ শামসুল হক, হেলাল হাফিজ, মহাদেব সাহা, নির্মলেন্দু গুণদের লেখা কবিতা আজও মানুষকে আলোড়িত করে। কবিতার বইয়ের নামে কিছু মানহীন লেখার আধিক্যে পাঠকের মনে এক ধরনের বিরূপ প্রভাব পড়ছে। কবিতা ঘিরে মানুষের মধ্যে হারিয়ে যাচ্ছে উচ্ছ্বাস।
জানা গেছে, গত ২২ দিনে মেলায় নতুন বই এসেছে ২৬৪৮টি। এর মধ্যে কবিতার বই সবচেয়ে বেশি; ৮০৭টি। এ ছাড়া গল্পের বই এসেছে ৩৩৫টি, উপন্যাস ৩৯১টি। অভিযোগ আছে, মেলা এলে প্রতি বছর অনেকেই নিজের টাকা খরচ করে বিভিন্ন প্রকাশনী থেকে কবিতাসহ নানা বিষয়ে বই বের করেন। এসব বইয়ের লেখার মান নিয়ে তাই মাথা ঘামান না প্রকাশকরা। আবার কবিতার বইয়ের বিক্রি কেমন- এ প্রশ্নের সরাসরি কোনো উত্তর মেলেনি প্রকাশকদের কাছ থেকে। অন্বেষার প্রকাশক শাহাদাত হোসেন বলেন, মেলায় কবিতার বই বেশি আসে। কিন্তু বেশি বিক্রি হয় গল্প ও উপন্যাস। অনেকের আসলে বই আসে ঠিক, কিন্তু কবিতা হয়ে ওঠে না। নবীন লেখকরা লিখতে লিখতে একদিন ভালো করবেন।
অনন্যা প্রকাশনীর প্রকাশক মনিরুল হক বলেন, এক সময় একাডেমি প্রাঙ্গণের মেলায় কবিরা আসতেন। তাঁরা কবিতার আসর জমাতেন। এখন আর আগের মতো কবিরা মেলায় আসেন না। এ ছাড়া এখন অনেক নবীন কবিতা লেখেন। মেলায় সবচেয়ে বেশি কবিতার বই প্রকাশ হলেও তেমন বিক্রি হয় না।
এত বইয়ের ভিড়ে প্রতিশ্রুতিশীল অনেক কবিও যে উঠে আসছেন না, এমন নয়। নতুন প্রজন্মের অসংখ্য ভালো কবি দারুণ সব কবিতায় পাঠকদের মন জয় করেছেন। শুধু বই প্রকাশ করে নয়; লিটল ম্যাগে অসংখ্য ভালো কবিতা প্রকাশ হচ্ছে। নতুনদের পাশাপাশি স্বনামধন্য লেখক-কবিদের বইও বের হচ্ছে। আগামী প্রকাশনী থেকে এবার আনোয়ারা সৈয়দ হকের ‘৫০ প্রেমের কবিতা’ বইটি প্রকাশ হয়েছে। অনন্যা থেকে এসেছে মহাদেব সাহার ‘অন্তরে কে বাঁশি বাজায়’। ঐতিহ্য প্রকাশ করেছে হাসনাত আবদুল হাইয়ের কাব্যগ্রন্থ ‘হাজার বছরের নির্বাচিত কবিতা’। সময় প্রকাশনী থেকে এসেছে মুহম্মদ নূরুল হুদার ‘প্রেমের কবিতা’। গতকাল আনোয়ারা সৈয়দ হক বলেন, ‘মেলায় কবিতার বইয়ের সংখ্যা অনেক। তবে কবিতা লিখলেই কবিতা হয় না। কবিতা আবেগের ব্যাপার। অনেকে কবিতা লেখার সময় বোঝেন না- কতটুকু আবেগ দিতে হবে। কবিতা লিখতে লিখতে কবিদের এ সম্পর্কে ধারণা হয়। কবিতায় বেশি আবেগ থাকলেও সে কবিতা চলে না; আবার আবেগহীন কবিতাও চলে না।’
এদিকে গতকাল বিকেলে মেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘জন্মশতবর্ষে বঙ্গবন্ধুকে নিবেদিত কবিতা ও ছড়া’ এবং ‘জন্মশতবর্ষে বঙ্গবন্ধুকে নিবেদিত লোকায়ত সাহিত্য’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মতিন রায়হান ও সুমন কুমার দাশ। আলোচনায় ছিলেন তপন বাগচী, মোস্তাক আহমাদ দীন এবং অনুপম হীরা মণ্ডল। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কামাল চৌধুরী। ‘লেখক বলছি’ অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন রফিকুর রশীদ, আহমাদ মাযহার, অদ্বৈত মারুত এবং মামুন খান।