সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বাংলাদেশকে ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ সহায়তা দিয়েছে। এ ঋণের শর্তগুলোর মধ্যে অন্য তম একটি শর্ত হলো বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি কমিয়ে আনা। ইতোমধ্যেই বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি কমিয়ে আনতে কাজ শুরু করেছে সরকার।
আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে এ খাতে চলতি বাজেটের চেয়ে কম ভর্তুকি বরাদ্দ রাখার পরামর্শ রয়েছে সংস্থাটির। আগামী বাজেটে বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকির একটা সীমা বেঁধে দিতে পারে আইএমএফ। ভর্তুকি ও অন্যান্য বিষয়ে আলোচনা করতে আইএমএফের একটি প্রতিনিধি দলের আগামী এপ্রিলে ঢাকায় আসার কথা রয়েছে।
এদিকে চলতি অর্থবছরের বাজেটে বিদ্যুতে ভর্তুকি বাবদ রাখা ১৭ হাজার কোটি টাকার প্রায় পুরোটাই শেষ হয়ে গেছে গত অর্থবছরের দেনা মেটাতে। চলতি অর্থবছরের জন্য বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) থেকে যে পরিমাণ ভর্তুকি দাবি আসছে তাতে বছর শেষে তা ৫০ হাজার কোটি টাকা কিংবা তারও বেশি হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে আগামী অর্থবছরে এ খাতে ভর্তুকি কমাতে হলে অধিক হারে বিদ্যুতের দাম বাড়াতে হবে। এতে করে মূল্যস্ম্ফীতির চাপ আরও বাড়তে পারে।
অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, পিডিবি থেকে প্রতি মাসে ভর্তুকির দাবি আসছে। বাজেটে যে বরাদ্দ রাখা হয় তা দিয়ে চাহিদা মিটছে না। পরবর্তী বাজেটের অর্থ দিয়ে আগের বাজেটের চাহিদা মেটাতে হয়। সারা বছরের আয় ও ব্যয়ে প্রাক্কলন করেই বাজেট প্রণীত হয়। কোনো খাতে অতিরিক্ত অর্থ দিতে হলে তখন বাজেট ব্যবস্থাপনায় চাপ বাড়ে।
গত নভেম্বরে পাইকারি পর্যায়ে ১৯ দশমিক ৯২ শতাংশ বিদ্যুতের দাম বাড়ায় বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। এর পর নির্বাহী আদেশে গত জানুয়ারিতে গ্রাহক পর্যায়ে প্রতি ইউনিটে গড়ে ৫ শতাংশ দাম বাড়িয়েছে সরকার। আগামীতে আরও দাম বাড়ানো হবে বলেও আইএমএফকে জানানো হয়েছে।
আইএমএফ বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ অনুমোদন করে গত ৩০ জানুয়ারি। ঋণের প্রথম কিস্তি ৪৭ কোটি ডলার ২ ফেব্রুয়ারি ছাড় করা হয়েছে। সংস্থাটির প্রকাশিত ‘কান্ট্রি রিপোর্টে’ জ্বালানি খাতে ভর্তুকি কমানোর কথা বলেছে আইএমএফ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট আগামী জুনে জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী। এ বাজেট প্রণয়নের কাজ ইতোমধ্যে শুরু করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। বাজেটের জন্য নিজেদের পরামর্শ দিতে আগামী এপ্রিল মাসে আইএমএফ প্রতিনিধি দল ঢাকায় আসবে।
অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আইএমএফ বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি কমাতে বললেও কোন সময়ে কী পরিমাণ কমাতে হবে তা এখনও বলেনি। তবে আগামী এপ্রিলে তাদের প্রতিনিধি দল পরবর্তী বাজেটের জন্য এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট পরামর্শ দেবে। বর্তমানে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম নিম্নমুখী হওয়ায় ভর্তুকির চাহিদা কিছুটা কমতে পারে বলে তাঁরা ধারণা করছেন।