ভারতের বেঙ্গালুরুতে গত জানুয়ারিতে এক দম্পতিকে আটক করে পুলিশ। ভারতের নাগরিক মুলায়ম সিং যাদব (২১) এবং পাকিস্তানের নাগরিক ইকরা জিওয়ানি (১৯) সম্পর্কে স্বামী-স্ত্রী হলেও তাদের জাতীয়তা ভিন্ন। তিন বছর আগে ২০২০ সালে কোভিড লকডাউনের সময় ‘বোর্ড গেম লুডু’ খেলতে গিয়ে অনলাইনে পরিচয় হয় তাদের। সেই পরিচয় থেকেই প্রেম। যদিও তারা জানত তাদের একসঙ্গে থাকা খুব একটা সহজ হবে না। তবু প্রেম মানে না কোনো বাধা। তাই সব প্রতিবন্ধকতা ভুলে একে অপরকে আপন করে নিতে বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হন তারা। কিন্তু সেই সুখ বেশি দিন সইল না। জিওয়ানিকে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশের জন্য এবং যাদবকে জালিয়াতি ও যথাযথ নথি ছাড়াই একজন বিদেশি নাগরিককে আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগে আটক করা হয়। যাদব বেঙ্গালুরুর একটি আইটি কোম্পানির নিরাপত্তা প্রহরী হিসেবে কাজ করতেন। জিওয়ানি পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশের হায়দ্রাবাদ শহরের ছাত্রী ছিলেন। খবর বিবিসি, হিন্দুস্তান টাইমসের।
গত সেপ্টেম্বর যাদব ও ইকরা নেপালে যান। সেখানে বিয়ে করেন। এরপর তারা ভারতের বেঙ্গালুরু শহরের কর্নাটক রাজ্যে বসবাস শুরু করেন। আটক হওয়ার পর গত সপ্তাহে জিওয়ানিকে পাকিস্তানে ফেরত পাঠানো হয়। যাদব এখনো কারাগারে। তার পরিবার ভারতের উত্তর প্রদেশে বসবাস করেন। যাদবের ভাই জিৎলাল বলেন, এই দম্পতির গল্পটি কেবলই প্রেমের। আমরা তাদের বাড়িতে চাই। তিনি আরও বলেন, আমরা ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার পরিস্থিতি বুঝতে পারি। কিন্তু তারা যা করেছে সেটি কেবল ভালোবাসার সম্পর্ক। মা শান্তিদেবী বলেছেন, আমরা আশা করি উভয় দেশের সরকার তাদের পুনরায় একত্র করতে সাহায্য করবে। তিনি আরও বলেন, সে মুসলিম না পাকিস্তানি তা আমরা চিন্তা করি না। সে আমাদের পুত্রবধূ। আমরা তার যত্ন নেব। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেঙ্গালুরুর এক সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, এটি একটি প্রেমের গল্প বলে মনে হচ্ছে।
তিনি বলেন, অনলাইনে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠার পর যাদবের পরামর্শে জিওয়ানি পাকিস্তান থেকে পালিয়ে দুবাই হয়ে নেপালে গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করেন। সেখানকার একটি মন্দিরে হিন্দুরীতিতে বিয়ে করে ভারতে আসেন। মিসেস জিওয়ানির কাছে ভারতে থাকার জন্য কোনো প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ছিল না, তাই যাদব তার জন্য একটি জাল আধার কার্ড এবং একটি ভারতীয় পরিচয়পত্রের নথি ব্যবস্থা করেছিলেন। বেঙ্গালুরু পুলিশের বরাত দিয়ে বিবিসি তার প্রতিবেদনে জানায়, যাদব যখন কাজের জন্য বাইরে যেতেন তখন তার স্ত্রী বাড়িতে একাই থাকতেন।
এ সময় তিনি মাঝে মাঝেই পাকিস্তানে তার মায়ের কাছে হোয়াটসঅ্যাপে কল করতেন। এই সূত্র ধরেই পুলিশ প্রথম টের পায়। কারণ ফেব্রুয়ারিতে ভারতে দুটি আন্তর্জাতির ইভেন্ট, অ্যারো ইন্ডিয়া এয়ার শো এবং জি২০ অর্থমন্ত্রীদের বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। যার জন্য পুলিশ বেশ সতর্কতায় ছিল। আরও তদন্তের পর, জিওয়ানিকে অবৈধ প্রবেশের জন্য আটক করা হয়। এরপর ২০ জানুয়ারি আঞ্চলিক নিবন্ধন অফিসে হস্তান্তরের মাধ্যমে ফেব্রুয়ারিতে পাকিস্তানে পাঠানো হয়। বেঙ্গালুরুর হোয়াইট ফিল্ড জেলার ডেপুটি পুলিশ কমিশনার এস গিরিশ বিবিসিকে বলেন, এখন পর্যন্ত শুধু অবৈধভাবে ভারতে আসা ছাড়া তার বিরুদ্ধে আর কোনো অপরাধ প্রমাণিত হয়নি। তবে তদন্ত চলছে। এদিকে বিবিসি মিসেস জিওয়ানি ও তার পরিবারের সাথে কোনো যোগাযোগ করতে পারেনি।