বার্সেলোনায় মোবাইল ওয়ার্ল্ড কংগ্রেস শুরু যন্ত্র-মানুষে সম্পর্ক তৈরির উদ্যোগ

বার্সেলোনায় মোবাইল ওয়ার্ল্ড কংগ্রেস শুরু যন্ত্র-মানুষে সম্পর্ক তৈরির উদ্যোগ

‘যন্ত্র যেন মানুষকে যন্ত্রিক করে না ফেলে, যন্ত্রের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক হবে মানবিক’—এই ধারণা সামনে নিয়েই স্পেনের বার্সেলোনা শহরে শুরু হয়েছে ওয়ার্ল্ড মোবাইল কংগ্রেস-২০২৩। এবারের স্লোগান ‘দারিদ্র্যমুক্ত বিশ্বের জন্য মানুষকে ক্ষমতায়িত করতে আগামী দিনের প্রযুক্তি উন্মোচিত হোক আজ’। গতকাল সোমবার স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ৮টায় স্পেনের রাজা ফিলিপে এই সম্মেলনের উদ্বোধন করেন। এ সময় স্পেনের প্রেসিডেন্ট প্রেডো সানচেজসহ মোবাইল কংগ্রেসের ঊর্ধ্বতনরা উপস্থিত ছিলেন। আগামী ৩ মার্চ শেষ হবে পাঁচ দিনের এই প্রযুক্তির মহাসম্মেলন।

 

উদ্বোধনী বক্তব্যে স্পেনের রাজা ফিলিপে বলেন, ‘বার্সেলোনা শহরে আপনাদের স্বাগত জানাই। আপনারা এখানে যারা এসেছেন, সবাই প্রযুক্তির সঙ্গে সম্পৃক্ত মানুষ। আমি আপনাদের আহ্বান জানাই, প্রযুক্তি যেন মানুষের সভ্যতাকে ধ্বংস করে না ফেলে। যন্ত্র যেন মানুষকে যন্ত্রিক করে না দেয়। মায়া, মমতা, ভালোবাসা যেন মানুষের জীবন থেকে হারিয়ে না যায়। প্রযুক্তির সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক যেন হয় মানবিক। প্রযুক্তি এগিয়ে যাবে, সেই প্রযুক্তিকে যেন মানুষ মানবিকভাবে ব্যবহার করে। প্রযুক্তির সঙ্গে সভ্যতাও যেন এগিয়ে যায়। মানবিকতা হারিয়ে গেলে মানুষ হয়ে যাবে যান্ত্রিক।’

পাঁচ দিনের এই সম্মেলনে ১০ হাজারেরও বেশি প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠান তাদের প্যাভিলিয়ন তৈরি করেছে। বিশ্বের ১৫২টি দেশের দেড় লাখেরও বেশি মানুষ অংশ নিচ্ছে এই মহাসম্মিলনে। গতকাল কয়েকটি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের প্যাভিলিয়ন ঘুরে দেখা গেছে, স্মার্ট সিটি নির্মানে গুরুত্ব দিচ্ছেন তারা। চীনের প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠান জেএডটিইর প্যাভিলিয়নে মিলল স্মার্ট সিটির ধারণা। তারা বলছে, বিশ্বের সব শহরকে তারা একইভাবে তৈরি করতে চায়, যেটা গড়ে উঠবে স্মার্ট সিটির আদলে।

ফাইভজি কতটা বদলে দেবে বিশ্বকে, সেই ধারণাও পাওয়া গেল জার্মানির টি-মোবাইলের স্টলে। তারা একটি হেলিকপ্টার এনেছে, যেটা উড়বে কোনো পাইলট ছাড়াই। এমনকি মার্সিডিজ বেঞ্জ গাড়ি পাওয়া গেল মার্সিডিজের স্টলে, যে গাড়ি চলবে চালক ছাড়াই। পশ্চিমা দেশগুলোয় এই গাড়ি রাস্তায় নামানোর প্রস্তুতি চলছে। তবে এই কংগ্রেসে বাংলাদেশের কোনো প্রতিষ্ঠানের স্টল নেই। আন্তর্জাতিক যে প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশে কাজ করে, তারা অংশ নিচ্ছে এখানে। ওয়ার্ল্ড মোবাইল কংগ্রেসে মূলত নতুন নতুন প্রযুক্তিপণ্যের সঙ্গে পরিচয়ের পাশাপাশি বিশ্বের নামকরা প্রতিষ্ঠানগুলো বাণিজ্যিক চুক্তিও সম্পাদন করে।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আসা উদ্যোক্তারা জানালেন, যন্ত্র মানবসভ্যতাকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে এমন আশঙ্কা করছেন অনেকেই। ফলে এবার মানবসভ্যতাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। যন্ত্রকে কীভাবে মানবিকভাবে ব্যবহার করা যায়, সেই প্রচেষ্টাকে প্রধান্য দিয়েই প্রযুক্তির জায়ান্টরা কাজ করছেন বলে সম্মেলনে অংশ নেওয়া সবাইকে আশ্বস্ত করেছেন। প্রযুক্তি কীভাবে মানুষের জীবন বদলে দিচ্ছে, কাজের ধরন বদলে দিচ্ছে, সেই ধারণাও দেওয়া হচ্ছে। পঞ্চম শিল্পবিপ্লবে মানুষের কর্মসংস্থান কমে যাবে কি না—এমন প্রশ্নও সামনে এসেছে। তবে উদ্যোক্তারা বলছেন, যন্ত্র মানুষের কর্মসংস্থান কমাবে না। তবে কাজের ধরন বদলে যাবে। এখন থেকে প্রত্যেক কর্মীকে হতে হবে প্রযুক্তিবান্ধব। প্রযুক্তি মানুষের কাজ করবে না, মানুষের কাজ সহজ করবে।

তথ্য প্রুযুক্তি