আগামী রমজানে জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) কঠোরভাবে বাজার তদারকির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন। গতকাল সোমবার মন্ত্রিসভা বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। এর আগে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভা বৈঠক হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী কোন নির্দেশনা দিয়েছেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আজকে এ বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। তবে সরকারের তরফ থেকে এটা সব সময়ের জন্য বলা আছে। রমজানে যাতে দ্রব্যমূল্য ও সরবরাহ স্বাভাবিক থাকে, এ জন্য সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে এখন মনিটরিং কার্যক্রম চলছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে করা হচ্ছে, আমাদের এখান থেকে করছি, আমাদের জেলা পর্যায় থেকেও করা হচ্ছে। তিনি বলেন, গতকাল এ বিষয় নিয়ে দেশের সব জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নিয়ে আড়াই ঘণ্টার বেশি সময় ধরে বৈঠক করেছি। আমাদের পক্ষ থেকে মাঠ পর্যায়ে যারা কাজ করেন তাদের এ ব্যাপারে সংবেদনশীল করা, অ্যাক্টিভ করার জন্য কাজ করছি। বাজারে সরকারের সিদ্ধান্তের প্রতিফলন নেই এবং মাঠ প্রশাসন সচরাচর বাজার মনিটরিং করছে না এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, করবে সামনে। এখনো তো রমজান শুরু হয়নি। তিনি বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে একটি মনিটরিং থাকবে। যদি একেবারে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি কোথাও কিছু হয়, সেখানে যেন আমরা আইন প্রয়োগ করতে পারি। একেবারে আমাদের প্রত্যেক জেলা প্রশাসককে (ডিসি) বলা আছে। তারা খুব কঠোরভাবে এটা মনিটরিং করবে।
বাংলাদেশ পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অথরিটির আইনের খসড়া অনুমোদন ॥ মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন,বাংলাদেশ পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অথরিটি আইন ২০২৩-এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এখন সিপিটিইউ (সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিট) আছে একটি ইউনিট হিসেবে। এই ইউনিটের পরিবর্তন হয়ে অথরিটি হবে। এখন একটি আলাদা অফিস হবে। সিপিটিইউ গণ খাতে পাবলিক সেক্টরের ক্রয়ের ক্ষেত্রে আইন, বিধি প্রনয়ন করে। আমাদের টেকনিক্যাল সাপোর্ট দেয়, পরামর্শ দেয়। অথরিটিও এই কাজগুলো অব্যাহত রাখবে। তিনি বলেন, ২০০১-০২ সালের দিকে আমাদের সরকারি খাতে সবমিলিয়ে ক্রয় হতো ১৮-১৯ হাজার কোটি টাকার। এখন এক বছরে গড়ে দুই লাখ ২০ হাজার থেকে ২ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা। ১১ থেকে ১২ গুণ বেড়েছে। ওই অফিস দিয়ে, ওখানে যারা স্টাফ আছেন, তাদের টেকনিক্যাল সাপোর্ট দিয়ে এটা করা এখন খুবই কষ্টকর। প্রাথমিকভাবে অথরিটির অফিস ঢাকাকেন্দ্রিক হবে। প্রয়োজন হলে তারা ঢাকার বাইরে অফিস করতে পারবে। তিনি বলেন, পরিকল্পনামন্ত্রীকে চেয়ারম্যান করে এই কর্তৃপক্ষের একটি পরিচালনা পর্ষদ থাকবে। পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের মেয়াদ হবে তিন বছর। পরিচালনা পর্যদকে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত নীতি, কৌশল ও আইনি কাঠামো প্রণয়ন, কর্তৃপক্ষ পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ক নীতি প্রণয়ন, উন্নয়ন সংক্রান্ত কর্মপরিকল্পনা অনুমোদন করতে হবে। এই আইন হলে বাংলাদেশ পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অথরিটিকে দেশের সরকারি ক্রয় প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ, সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত আইনের প্রতিপালন নিশ্চিতকরণ, পরিবীক্ষণ, সমন্বয়, ব্যবস্থাপনা ও তত্ত্বাবধান করতে হবে। বাংলাদেশ ই-গভর্নমেন্ট প্রকিউরমেন্ট (ই-জিপি) বিধিমালার প্রয়োজনীয় সংশোধনী প্রস্তাব আনা, ই-জিপি পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনা এবং ই-জিপি সংক্রান্ত তথ্য, উপাত্ত ও তথ্যভাণ্ডার সংরক্ষণ, আদর্শ দরপত্র প্রস্তাব বা দলিল এবং সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত অন্যান্য দলিলের নমুনা প্রস্তুত করে তা অনুমোদন দিয়ে বিতরণও করতে হবে এই কর্তৃপক্ষকে।
খসড়ায় বলা হয়েছে, যে ক্রয়কারীদের ওপর পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইন প্রযোজ্য, তাদের কাছ থেকে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত তথ্য, দলিল ও নথিপত্র তলব করতে পারবে এই কর্তৃপক্ষ। এছাড়া সরকারি কেনাকাটায় কোনো ব্যত্যয় হলে তা সংশোধনে কোনো ক্রয়কারীকে ক্রয় প্রক্রিয়ার পরিবর্তন ও সংশোধন করার পরামর্শ, সুপারিশ অথবা প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনাও দিতে পারবে এই কর্তৃপক্ষ। একজন অতিরিক্ত সচিবকে এই কর্তৃপক্ষের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হবে।
বাংলাদেশের সড়ক-বন্দর ব্যবহার করতে পারবে ভুটান॥ মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আমদানি ও রপ্তানির ক্ষেত্রে প্রতিবেশী দেশ ভুটানকে বাংলাদেশের সড়ক ও বন্দর ব্যবহারের সুযোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে চুক্তি করতে অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। তিনি বলেন, ভুটান একটি ল্যান্ড লক (ভূমিবেষ্টিত) দেশ। আমদানি-রপ্তানিতে তাদের নিজস্ব কোনো নদী বা সমুদ্রবন্দর নেই। সেক্ষেত্রে তারা ভারতের কাছেও একই ধরনের সুবিধা নিয়ে থাকে। এখন বাংলাদেশের বন্দর ও সড়ক ব্যবহার করে আমদানি-রপ্তানির কাজ চালানোর একটি সুযোগ তারা পাচ্ছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, এর আওতায় ভুটান বাংলাদেশের ভূখণ্ড আমদানি-রপ্তানির প্রয়োজনে ব্যবহার করতে পারবে। বন্দরও ব্যবহার করতে পারবে। এই চুক্তি অনুমোদনের পর এখন বিষয়টি এনবিআরের (জাতীয় রাজস্ব বোর্ড) কাছে যাবে। এর জন্য তারা কী পরিমাণে বা কী হারে রাজস্ব দেবে সেটা এনবিআর ঠিক করবে। সবকিছু শেষে চূড়ান্ত একটি চুক্তি হবে। এ সময় তিনি জানান, বর্তমানে প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গেও ট্রানজিট চুক্তি আছে। ট্রানজিট চুক্তির আলোকে ভারত বাংলাদেশের কয়েকটি বন্দর ও সড়ক ব্যবহার করছে।