রাজউক (রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ) যেন কোটিপতি বানানোর এক কারখানায় পরিণত হয়েছে। এখানে চাকরি করলে রাতারাতি ঘুরে যায় ভাগ্যের চাকা। বড় পদ নয়, একেবারে কেরানি পদে চাকরি করেও কোটিপতি বনে গেছেন অনেকে। স্বল্প বেতনের চাকরি করে যাদের সাধারণ জীবনযাপনের কথা, তাদের কেউ কেউ রীতিমতো রাজা-বাদশাহ হিসাবে আবির্ভূত হয়েছেন। খোদ রাজধানীতে তাদের একাধিক বাড়ি ও ফ্ল্যাটের সন্ধান মিলেছে। আছে নামিদামি ব্র্যান্ডের একাধিক বিলাসবহুল গাড়ি।
তবে অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, তাদের অনেকেই অবৈধ অর্থের জোরে এখন সমাজপতিও বটে। হতে চান এমপি-মন্ত্রীও। তাই চাকরির পাশাপাশি রাজনীতির মাঠেও সক্রিয় তাদের কয়েকজন। যুগান্তরের দীর্ঘ অনুসন্ধানে রাজউকের এসব সৌভাগ্যবান কর্মচারীর অঢেল অর্থবিত্তের চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসে।
লাগামহীন অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি এবং কোটিপতি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পর্কে জানতে চাইলে রাজউক চেয়ারম্যান মো. আনিছুর রহমান মিঞা ১২ মার্চ তার কার্যালয়ে যুগান্তরকে বলেন, দুর্নীতিবাজ হিসাবে পরিচিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চিহ্নিত করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে গণমাধ্যমে যাদের নাম এসেছে, তাদের তদন্তের মুখে পড়তে হবে। এছাড়া দুর্নীতিবাজদের অনেকে দুদকের অনুসন্ধানের আওতায় আছেন। ফলে অবৈধ পথে যারা অঢেল অর্থসম্পদের মালিক হয়েছেন, তারা স্বস্তিতে নেই। তাদের অনেকেই আর বেশি দিন রাজউকে টিকে থাকতে পারবেন না।
ধনকুবের মিল্কি : উত্তরা এস্টেট শাখায় কর্মরত সহকারী পরিচালক সামসুল আলম ওরফে মিল্কির অর্থবিত্তের হিসাব কষতে দীর্ঘ সময় প্রয়োজন। শুধু রাজধানীতেই শতকোটি টাকার সম্পদ রয়েছে তার। মিল্কির পুরো পরিবার অভিজাত জীবনযাপন করে। ব্যবহার করেন কোটি টাকা মূল্যের বিলাসবহুল গাড়ি।
যুগান্তরের অনুসন্ধানে তার সম্পদের একটি ক্ষুদ্র অংশের সন্ধান মেলে। উত্তরা ৯ নম্বর সেক্টরের ৪ নম্বর রোডের ২৭ নম্বর হোল্ডিংয়ের ৬ তলা বাড়িতে বসবাস করেন মিল্কি। ২৬ ফেব্রুয়ারি সেখানে হাজির হন যুগান্তর প্রতিবেদক। এ সময় দেখা যায়, লেকপাড় ঘেঁষে নির্মাণ করা হয়েছে ৭ তলা আলিশান ভবন। বর্তমানে প্লটসহ বাড়ির মূল্য ২০ কোটি টাকারও বেশি। সিসি ক্যামেরা নিয়ন্ত্রিত ভবনে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা প্রহরী ছাড়াও সার্বিক ব্যবস্থাপনার জন্য একজন ম্যানেজার আছেন। ভবনের সামনে ঝুলছে ‘টু-লেট’ সাইনবোর্ড।
ভাড়াটিয়া পরিচয়ে ভবনে ঢুকতেই গ্যারেজে তিনটি বিলাসবহুল গাড়ি দেখা যায়। একটি টয়োটা হ্যারিয়ার (ঢাকা মেট্রো ঘ-১৫-২৪৪৬), একটি কালো টয়োটা ল্যান্ডক্রুজার প্রাডো জিপ (ঢাকা মেট্রো ঘ-১৩-৬৪০৩) এবং রাজউকের স্টিকার লাগানো একটি সাদা টয়োটা সেডান কার (ঢাকা মেট্রো গ-১৩-৭২৩৫)। এসব গাড়ির একেকটির মূল্য কয়েক কোটি টাকা।বিস্তারিত