রাজনৈতিক অঙ্গনের প্রধান ইস্যু আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন। গত ডিসেম্বর থেকে কার্যত নির্বাচনী কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। আসন্ন নির্বাচনে মাঠের বিরোধী দল বিএনপি নির্বাচনে আসবে কি না- এখনো পরিস্কার নয়, তবে ক্ষমতাসীন দল নির্বাচনের সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। আগামী নির্বাচনে কাদের কপালে জুটবে নৌকার মনোনয়ন তা নিয়ে দলটির মধ্যে কানাঘুষা শুরু হয়ে গেছে। আবার বর্তমান এমপি হয়েও ব্যর্থতার কারণে নৌকা থেকে কারা ছিটকে পড়তে পারেন, তা নিয়েও চলছে জল্পনাকল্পনা।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, দ্বাদশ নির্বাচন ঘিরে দলের হাইকমান্ড যোগ্য প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়া শুরু করেছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে মূলত দুভাবে তালিকা করা হচ্ছে। প্রথমে এমপিদের ওপর জরিপ চালানো হচ্ছে। যে সব এমপি বিতর্কিত, তাদের স্থলে কাদের মনোনয়ন দেওয়া যেতে পারে, সেই তালিকাও করা হচ্ছে। বিকল্প হিসেবে এক আসনে কয়েকজনের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। এ ধরনের কাজে যুক্ত একজন কর্মকর্তা বলেন, বর্তমান সংসদ সদস্য যারা আছেন তাদের বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। যারা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িতে থাকায় মাঝে মধ্যে আলোচনায় আসছেন তাদের বিষয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বর্তমান এমপিদের মধ্যে কাদের সন্তানরা দেশের বাইরে অবস্থান করছেন, কোন দেশে অবস্থান করছেন, সেসব বিষয়েও তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।
আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ডের সদস্যদের সঙ্গে আলাপে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। তবে, প্রকাশ্যে কেউ এ বিষয়ে মুখ খুলছেন না। জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ বলেন, আগামী নির্বাচনের জন্য যথাযত প্রস্তুতি রয়েছে দলের। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে জাতীয় সম্মেলনের পর আমরা নির্বাচনের জন্য মাঠে নেমে গেছি। তৃণমূল পর্যায়েও আমরা কাজ শুরু করেছি। দলীয় প্রার্থী নির্বাচনে আমরা বিগত সময়ের মতো বেশ কয়েকটি বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি। যাদের জনপ্রিয়তা আছে, এলাকায় যাদের গ্রহণযোগ্যতা ভালো, তাদের ওপর দল আস্থা রাখবে।
আওয়ামী লীগের মাঠ পর্যায়ের সম্পাদক নেতারা জানান, প্রার্থীর পাশাপশি দলীয়ভাবেও জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মাঠ পর্যায়ের প্রস্তুতি শুরু করেছে আওয়ামী লীগ। দল ও সহযোগী সংগঠনকে তৃণমূল পর্যন্ত সুসংগঠিত করার পাশাপাশি নির্বাচনকেন্দ্রিক কাজগুলো এগিয়ে নিচ্ছে দলটি। তৃণমূলের সব পর্যায়ে ভোটের আমেজ তৈরি করতে কাজ করছের দলের নেতারা। নিজ দলের নেতাদের সক্রিয় করতে সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্তরা মাঠে অবস্থান করছেন। নিজ নিজ কর্মসূচির পাশাপাশি বিরোধী দলের কর্মসূচির দিকেও নজর রাখছেন ক্ষমতাসীনরা। কর্মসূচির পাশাপাশি মাঠে মিছিল, মিটিং কিংবা জনসভা ছাড়াও ভেতরে ভেতরে দলকে গুছিয়ে নিচ্ছেন দলের উচ্চ পর্যায়ের নেতারা।
জানা যায়, আগামী নির্বাচনে কারা দলীয় প্রার্থী হবেন তা নিয়েও কাজ শুরু হয়েছে। আপাতত একাদশ জাতীয় সংসদের এমপিদের আমলনামা নিয়েই কাজ চলছে। সরকারের বিশেষ ৩টি সংস্থার পাশাপাশি সাংগঠনিকভাবে খতিয়ে দেখা হচ্ছে এমপিদের সার্বিক কর্মকাণ্ড। আগামী নির্বাচনে যাদের ওপর আস্থা রাখা যায় তাদের তালিকা আলাদাভাবে তৈরি করা হচ্ছে। যারা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন, তাদেরও তালিকা তৈরি করছে দলটি। এখানেই শেষ নয়, বিতর্কের কারণে যারা বাদ পড়তে পারেন তাদের আসনে বিকল্প প্রার্থীও খুঁজে দেখা হচ্ছে।
চলতি বছরের ১৩ জানুয়ারি জাতীয় সংসদ ভবনে সরকারি দলের সভাকক্ষে আওয়ামী লীগের সংসদীয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি সংসদ সদস্যদের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ‘জনগণ যাদের চায় তাদেরই মনোনয়ন দেওয়া হবে। জনগণের সঙ্গে সম্পর্কহীন কিংবা অনেক ক্ষমতাধর মনে করা কেউই মনোনয়ন পাবেন না- তা পরিষ্কার করেই বলছি আমি।’
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের অধিকাংশ সংসদ সদস্য নির্বাচনী আসনে নিয়মিত আসেন না। বেশির ভাগ সময় ঢাকায় অবস্থান করেন তারা। ফলে স্থানীয় ভোটাররা তাদের জনপ্রতিনিধিদের কাছে পান না। অন্যদিকে, পারিবারিক দ্বন্দ্বে যারা সামাজিক মর্যাদা খুইয়েছেন; ভাইয়ে ভাইয়ে দ্বন্দ্ব কিংবা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যাদের আপত্তিকর ক্লিপ নেতিবাচকভাবে উপস্থাপিত হয়েছে তাদের বিষয়ও গুরুত্বসহকারে দেখা হচ্ছে। এ ধরণের সংসদ সদস্যদের বিষয়ে এবার কঠোর হবে দলের হাইকমান্ড।
আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের এক সদস্য নাম প্রকাশ না করে বলেন, ‘প্রতি ছয় মাস পরপর সংসদ সদস্যদের ব্যাপারে তদন্ত করা হয়। সেই রিপোর্ট দলের হাইকমান্ডের কাছে রয়েছে। অতীতের কর্মযজ্ঞ আর জনসম্পৃক্ততাই আগামীর নৌকার টিকিট। আর যারা মাঠে যাননি, ভোটারদের খোঁজখবর নেননি, তারা এবার ছিটকে পড়বেন।’
যে নেতাকর্মীরা দলের সুনাম নষ্ট করছেন, তারা কখনো আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাবেন না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন দলের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সম্প্রতি এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, দলকে সুনামের ধারায় ফিরিয়ে আনতে হবে। আওয়ামী লীগের নামে অপকর্ম করবেন না। যারাই অপকর্ম করছে তাদের এসিআর কিন্তু নেত্রীর কাছে জমা আছে। শেখ হাসিনার কাছে নমিনেশন চাইবেন, হিসাব আছে।