নিজস্ব প্রতিবেদক
রমজান মাসেও টানা কর্মসূচি রেখেছে বিএনপি। আগামীকাল শনিবার বেলা ২টা থেকে ৪টা পর্যন্ত দেশের সব জেলা ও মহানগরে অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করেছে দলটি। ৮ এপ্রিল দেশের সব থানায় একই কর্মসূচি রেখেছে। এ ছাড়াও ১০ এপ্রিল বিকাল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত প্রচারপত্র বিলি ও মানববন্ধন করবে দলটি।
এসব কর্মসূচি পবিত্র রমজান মাসে মানুষের ভোগান্তি কয়েক গুণ বাড়াবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপির মানুষের কল্যাণে কোনো রাজনীতি নেই। নিজেদের অবস্থান জানান দিতেই এই কর্মসূচি। এতে যেমন মানুষের ভোগান্তি বাড়বে তেমনি রমজান মাসে নিরুত্তাপ রাজনীতিতে ‘উত্তাপ’ ছড়াতে পারে। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, জামায়াত-শিবির এখন সক্রিয় রাজনীতি করতে পারছে না। বিএনপির এসব কর্মসূচিতে তারা অংশ নেবে এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতা-কর্মীদের উসকানি দেবে। ফলে দেশে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।
এ প্রসঙ্গে রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. মীজানুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘রমজানে রাজনৈতিক কর্মসূচি মানুষের ভোগান্তি বাড়াবে। মানুষের জন্য রাজনীতি করতে হলে মানুষের সমস্যাগুলোও দেখা দরকার। মানুষের দুর্ভোগ হয়, জনভোগান্তি বাড়ে এমন কোনো কর্মসূচি পালন করা উচিত নয়।’
আওয়ামী লীগের একাধিক নীতিনির্ধারণী ফোরামের নেতা জানিয়েছেন, বিএনপি-জামায়াতের উসকানিতে পা দেবে না সরকার বা আওয়ামী লীগ। তবে দলটির নেতা-কর্মীরা সতর্ক থাকবে। পবিত্র রমজানে আওয়ামী লীগ যখন ইফতার পার্টি না করে সেই অর্থ গরিব-অসহায় মানুষকে দিচ্ছে, তখন বিএনপি ইফতারের আগমুহূর্তে কর্মসূচির নামে রাস্তায় জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজনৈতিক দলগুলো গণতান্ত্রিক কর্মসূচি পালন করবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু গণতান্ত্রিক অধিকার যদি জনগণের অধিকার হরণ করে সেটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। বর্ষায় তো অনেক রাজনৈতিক দলই জনগণের কাছে সেভাবে যায় না, শীতেও তেমন। তাহলে কেন রমজানে বিকালে বিএনপি কর্মসূচি পালন করছে সেটা বোধগম্য নয়। এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক জিয়া রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘যে কোনো কর্মসূচি পালন করা সব রাজনৈতিক দলে সাংবিধানিক অধিকার। রাজনৈতিক দলগুলো কর্মসূচি পালন করবে দেশে, এটাই গণতান্ত্রিক সৌন্দর্য। বিভিন্ন সময়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে দাবি আদায় করা হয়। এখন রমজানে কেন এমন কর্মসূচি ঘোষণা করল বিএনপি, তা বোধগম্য নয়। তারা জনগণের জন্যই যদি রাজনীতি করে তাহলে ঈদের পরও কর্মসূচি করতে পারত।’ জানা গেছে, আগামীকাল শনিবার বেলা ২টা থেকে ৪টা পর্যন্ত দেশের সব জেলা ও মহানগরে অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন দলটি। আগামী ৮ এপ্রিল দেশের সব থানায় একই কর্মসূচি রেখেছে। এ ছাড়া ১০ এপ্রিল বিকাল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত প্রচারপত্র বিলি ও মানববন্ধন করবে দলটি। ১১ এপ্রিল খুলনা ও কুমিল্লা বিভাগে সব ইউনিয়নে, ১২ এপ্রিল ঢাকা ও বরিশাল বিভাগে, ১৩ এপ্রিল ময়মনসিংহ ও ফরিদপুর বিভাগে, ১৬ এপ্রিল রংপুর ও চট্টগ্রামের সব ইউনিয়নে বিকাল ৪টা থেকে ৬টা পর্যন্ত মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করবে। এ ছাড়া বিএনপির অঙ্গসংগঠনগুলো কর্মসূচি রেখেছে।