সংসদ নির্বাচন নিয়ে শেখ হাসিনার কঠোর বার্তা মুখ দেখে মনোনয়ন নয় ভোট হবে চ্যালেঞ্জিং

সংসদ নির্বাচন নিয়ে শেখ হাসিনার কঠোর বার্তা মুখ দেখে মনোনয়ন নয় ভোট হবে চ্যালেঞ্জিং

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলীয় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেছেন, আগামী নির্বাচন হবে চ্যালেঞ্জিং। মুখ দেখে কাউকে মনোনয়ন দেওয়া হবে না। যাদের জনপ্রিয়তা আছে, নেতা-কর্মীদের নিয়ে চলেন তাদেরই মনোনয়ন দেওয়া হবে। এমপি বা মেয়র থাকলেই যে মনোনয়ন দেওয়া হবে তা ভাবার সুযোগ নেই। জরিপের ভিত্তিতেই আগামীতে মনোনয়ন দেওয়া হবে। এসময় দলের দুঃসময়ের ত্যাগীদের মূল্যায়ন করা হবে বলেও জানান আওয়ামী লীগ সভানেত্রী। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগকে দ্রুত কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন সাংগঠনিক নেত্রী শেখ হাসিনা। করোনার কারণে বয়স দুই বছর বাড়িয়ে দিতে নির্দেশ দেন তিনি।

গণভবনে গতকাল ঢাকা, রাজশাহী, খুলনা জেলা-মহানগর, নেত্রকোনা, নোয়াখালী, বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সম্পাদকের সঙ্গে বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক জেলার নেতা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

দুপুর ১২টায় বৈঠক শুরু হয়ে পৌনে ৩টা পর্যন্ত চলে। তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে খোলামেলা কথা বলেন টানা তিন মেয়াদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সূত্রটি জানায়, বৈঠকে জেলার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক স্থানীয় সমস্যা তুলে ধরেন। সেগুলো মনোযোগসহকারে শোনেন এবং নোট নেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। বৈঠকের একপর্যায়ে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রাজশাহী সিটির মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন। তিনি বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ নানাভাবে কুৎসা রটানো হচ্ছে। এখন আমাকে অব্যাহতি দিতে কেন্দ্রে সুপারিশও করা হচ্ছে। আমরা ২০১৪ সালের পর থেকে ভালোই ছিলাম। কিন্ত ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর থেকে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রাশিক মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন আমাকে কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না। কোন্দল সৃষ্টি করছেন। জবাবে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি তো তোমাকে সেক্রেটারি করেছি। তোমার সব বিষয় আমার জানা আছে। তুমি দলের জন্য কাজ করো, সেটা তো জানি। তুমি তোমার কাজ চালিয়ে যাও।’ বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু ও সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির পাথরঘাটা ও বেতাগী উপজেলায় সম্মেলন না করতে পারার ব্যাখ্যা দেন। সেখানে দলীয় কোন্দলের কথা উঠে আসে বলে বৈঠক সূত্র জানায়। দীর্ঘ বৈঠকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন, দেশের বর্তমান অবস্থান, নানামুখী সংকট, সরকারের উন্নয়ন নিয়েও কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে দেশটাকে একটা জায়গায় নিয়ে এসেছি। বাংলাদেশ এখন আত্মমর্যাদাশীল দেশ। সেই দেশকে স্বাধীনতা বিরোধীদের হাতে তুলে দিতে পারি না। কাজেই সামনে নির্বাচন আসছে, এই নির্বাচনে আমাদের দলের প্রতিটি নেতা-কর্মীকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। কোনোভাবেই বিভেদ তৈরি করা যাবে না। সবার আগে দলীয় ঐক্য প্রয়োজন। আমরা গত ১৪ বছরে যে উন্নয়ন করেছি, সেগুলো জনগণের কাছে তুলে ধরতে হবে। জনগণকে সঠিকভাবে বুঝাতে পারলে আমরা আবারও ক্ষমতায় আসব।

আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচন ও জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী করা নিয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, সামনের নির্বাচনটা অনেক চ্যালেঞ্জিং। এই চ্যালেঞ্জে আমাদের ভোটেই বিজয়ী হতে হবে। এ জন্য ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। নির্বাচনকে সামনে রেখে আমি নিয়তিম জরিপ করছি। সেই জরিপের ভিত্তিতেই দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হবে। এবার এমপি বা মেয়র আছেন বলেই যে আগামীতেও মনোনয়ন পাবেন, এমনটা ভেবে যারা বসে থাকবেন তারা ভুল করবেন। মুখ দেখে কাউকে মনোনয়ন দেব না। যাদের জনপ্রিয়তা আছে, গ্রহণযোগ্যতা আছে সেই ব্যক্তিকেই দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হবে। আমি পরিষ্কারভাবে বলছি, দলীয় মনোনয়নে ব্যক্তি দেখা হবে না, জনপ্রিয়তার মাপকাঠিতেই হবে মনোনয়ন।

ছাত্রলীগের বয়স দুই বছর বাড়িয়ে দ্রুত কমিটি গঠনের নির্দেশ : বৈঠকে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে দ্রুততম সময়ের মধ্যে কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, করোনার কারণে অনেকের বয়স চলে গেছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি শেষ করে ফেলো। কমিটি গঠনের সময়ে দুই বছর যেন বয়স বাড়িয়ে দেওয়া হয় সে নির্দেশনা দেন তিনি। বৈঠকে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি বেনজীর আহমদ ও সাধারণ সম্পাদক পনিরুজ্জামান তরুণ, রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াদুদ দারা, রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোহাম্মদ আলী কামাল ও সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার, নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যক্ষ এ এইচ এম খায়রুল আনম চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক সহিদুল্লাহ খান সোহেল, নেত্রকোনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আমিরুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শামসুর রাহমান ভিপি লিটন, বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু ও সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়াও ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান উপস্থিত ছিলেন।

জাতীয় রাজনীতি