খনন হয়নি নদী। যেখানকার মাটি রয়েছে সেখানেই। উপরন্তু বালু ও পলির প্রলেপে ভরাট হয়ে গেছে নদীর পেট। স্থানীয় কৃষিজীবীদের উপকার হয়নি এক রত্তি। অথচ ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের বরাদ্দের টাকায় উদরপূর্তি হয়েছে প্রকৌশলী ঠিকাদার ও বালুদস্যদের। নিজেরাই ভাগাভাগি করে নিয়েছেন প্রকল্পের নামে বরাদ্দ হওয়া ১৩৪ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। আর বৃহৎ এই দুর্নীতি সংশ্লিষ্টদের দায়মুক্তি দিতে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কর্মকর্তারা মরিয়া। তথ্য নির্ভরযোগ্য সূত্রের।
তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) নেত্রকোণার কংস ও ভোগাই নদীর ১৫৫ কিলোমিটার খনন প্রকল্প হাতে নেয়। ম্যাকানিজম করে এ কার্যাদেশ পায় ৫টি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। বসুন্ধরা ইনফ্রাস্টাকচার ডেভলপমেন্ট লি:, সোনালী ড্রেজার লি:, বিডিএল-এসআরডিসি (জেবি), এস এস রহমান, মাতৃবাংলা (জেবি) ও নবারুন ট্রেডার্স লি:। টেন্ডারের অনুযায়ী, নদী দু’টির প্রশস্ত ৮০ থেকে ১০০ ফুট। শর্ত ছিল, ড্রেজিংয়ের পর গভীরতা অনুসারে শঙ্ক মৌসুমে নদীতে ৮ থেকে ১০ ফুট পানি থাকতে হবে।
অভ্যন্তরীণ নৌ-পথের ৫৩টি রুটে ক্যাপিটাল ড্রেজিং (১ম পর্যায়ে ২৪টি নৌ-পথ) শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ভোগাই এবং কংস নদীর মোহনগঞ্জ থেকে নালিতাবাড়ি পর্যন্ত নৌপথ খনন প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হয়। সংশ্লিষ্ট উপজেলা চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে গঠিত ড্রেজিং ব্যবস্থাপনা কমিটির সমন্বয়ে প্রতিষ্ঠানগুলো নদীর খনন কার্যক্রম ভাগ করে নেয় ৫টি পয়েন্টে। প্রতিষ্ঠানগুলো নদী থেকে ১ কোটি ঘনমিটার বালু উত্তোলনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ শুরু করে। কাগজ-কলমে সেই কাজ ‘শেষ’ ও হয়েছে। ঠিকাদাররা পেয়ে গেছেন সমুদয় বিল। কিন্তু যেমন নদী তেমনই রয়ে গেছে। কোথাও কোথাও হয়েছে আগের চেয়ে বেশি ভরাট। ড্রেজিংয়ের নামে ভয়াবহ এই দুর্নীতির কোনো তল খুঁজে পাচ্ছে না দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
প্রাপ্ত তথ্য মতে, ভোগাই-কংস নদী খনন প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী বিআইডব্লিটিএ’র নির্বাহী প্রকৌশলী (ড্রেজিং) আবু বকর সিদ্দিক ও নির্বাহী প্রকৌশলী (পুর) দিদার এ আলমের বিরুদ্ধে দুদকে একটি অভিযোগ জমা পড়ে। তাতে নদী খনন না করেই বরাদ্দকৃত ১৩৪ কোটি ৬৪ লাখ টাকা আত্মসাতের তথ্য ছিল। অভিযোগ অনুসন্ধানে দুদকের ময়মনসিংহ সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের (সজেকা)’র উপ-পরিচালক মো: আবুল হোসেন এবং একজন উপ-সহকারী কর্মকর্তার সমন্বয়ে একটি টিম মাঠে নামে। অনুসন্ধান প্রক্রিয়ায় প্রকল্প সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র সংগ্রহ করা হয়। তাতে অভিযোগের অধিকাংশ তথ্যেরই সত্যতা মেলে।বিস্তারিত