এমএম মাসুদ, মরিয়ম চম্পা, ফাহিমা আক্তার সুমি ও শরিফ রুবেল
দীর্ঘকাল বাংলাদেশে পাদুকা শিল্পে রাজত্ব করা সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বহুজাতিক কোম্পানি বাটার বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। একটা সময় নারী, পুরুষ ও শিশুদের কাছে জুতা মানেই ছিল বাটা। তাদের নতুন নতুন স্টাইল ও ডিজাইন বাজারে বেশ সাড়া ফেলেছিল। ছিল প্রতিযোগিতাও। তবে বাটার এই দাপুটে রাজত্বে এখন ভাটার টান পড়েছে। বিশেষ করে করোনার পর থেকে বাটার মুনাফা তলানিতে ঠেকেছে। বাটা জুতার দাম বাড়ার পাশাপাশি মান কমারও অভিযোগ করছেন ভোক্তারা। এ ছাড়া নানামুখী প্রতারণা করছে প্রতিষ্ঠানটি। ফেসবুকে এক, বাস্তবে আরেক দাম। বেশি মূল্যের ট্যাগ লাগিয়ে বিক্রি, চামড়ার বদলে রেকসিন ব্যবহার, নিম্নমানের আঠা ব্যবহার, নিজস্ব কারখানা ছাড়া লোকাল কারখানা থেকে অর্ডার দিয়ে জুতা বানানো ছাড়াও নানা অভিযোগ উঠেছে বাটার বিরুদ্ধে।
এতে জুতা কিনে প্রতারিত হওয়া ক্রেতার সংখ্যাও দিন দিন বাড়ছে। পাল্লা দিয়ে দাম বাড়ালেও, মান কমছে। এতে জুতা কিনে নিয়মিত ঠকছেন ক্রেতারা। ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরে জমা পড়েছে এন্তার অভিযোগ। দুই/একটির প্রতিকার হলেও অধিকাংশ অভিযোগেরই কোনো সুরাহা মেলে না বলে জানিয়েছেন ক্রেতারা।
ক্রেতারা বলেছেন, বাটা জুতার দাম দিন দিন বাড়ছে, তবে মানের দিক দিয়ে খারাপ হচ্ছে। লোকাল জুতার ডিজাইন আর বাটার শো-রুমে থাকা জুতার খুব একটা পার্থক্য নেই। কোনো কোনো জুতা কিনে নেয়ার পর সঙ্গে সঙ্গেই সোল খুলে যাচ্ছে। মানুষের আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও ভালো মডেল না থাকায় বাটা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন ক্রেতারা। এডিডাস সহ ৩০-৩৬টি ব্র্যান্ড রয়েছে বাটার শো-রুমে। এই ব্র্যান্ডের জুতাগুলোতে রয়েছে বাটার সিল ও স্টিকার। এখন আদতে বাটা না অন্য কিছু বোঝা মুশকিল। ক্রেতাদের অভিযোগ, দাম দিয়ে জুতা কিনে বেশিদিন ব্যবহার করতে পারেন না। কয়েকদিন যেতে না যেতেই জুতার সোল ভেঙে যায়, ফেটে যায়, বা ছিঁড়ে যায়। তারা গ্যারান্টি দিলেও মেয়াদের আগে ফেরত দিতে গেলেও নেয়া হয় না।
এদিকে বাটার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ ও ওয়েবসাইট বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, তারা ফেসবুকে যে দাম দিয়ে রেখেছে, শোরুমে তারচেয়ে বেশি দামে জুতা বিক্রি করা হচ্ছে। ফেসবুকে যে জুতার দাম ৯৯৯ টাকা বলা হচ্ছে। শোরুমে সেই জুতাই ১২শ’ টাকার ট্যাগ লাগিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে। বাটার ওয়েবসাইটেও প্রতারণার শিকার হচ্ছেন ক্রেতারা। কেউ কেউ এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও প্রায়ই অভিযোগ করছেন। তারা বলছেন, ওয়েবসাইটে যে মূল্য উল্লেখ করা হয়েছে শোরুমে তার থেকে বেশি টাকা নেয়া হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, বাটার বাজার হারার পেছনে গত ১০ থেকে ১২ বছরে দেশীয় বেশ কয়েকটি কোম্পানি গড়ে উঠেছে। তাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পড়তে হয়েছে বাটাকে। এই সময়ে নতুন নতুন স্টাইল ও ডিজাইন বাজারে সাড়া ফেলেছে। নিজেদের আলাদা ব্র্যান্ড তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। অন্যদিকে বাটার মানও আগের চেয়ে নিম্ন হয়েছে। কোম্পানির ব্যবসায় ধসের আরেকটি কারণ হচ্ছে, সারা দেশে বাটার যত পাইকারি ডিপো, হোলসেল ডিলার এবং রিটেইল আউটলেট রয়েছে, তারা অনেক সময় বাটা নামে নিম্ন মানের জুতা বিক্রি করছে।
রাজধানীর সদরঘাট, গুলিস্তান, কাওরান বাজার, বাটা সিগন্যাল, ঢাকা কলেজ, ফার্মগেটসহ বাটার কয়েকটি শো-রুমে দেখা গেছে, রঙ-বেরঙের বাহারি জুতার সমাহার। ভেতরের ডিসপ্লে বাইরে থেকে নজর কাড়ে ক্রেতাদের। লেটেস্ট কালেকশন থেকে শুরু করে ফান-ফুর্তি ভরপুর ক্যাম্পেইন। একই ছাদের নিচে শত শত ডিজাইনের জুতা। নারী-পুরুষ, শিশু সবার জন্য নিউ বাটা কালেকশন, মেরি ক্লেয়ার, বাটা কমফিট, নর্থ স্টার, পাওয়ার, বাবল গ্ল্যামারস, লাইট ইজি, হাসপাপিস, অ্যাম্বাসি, সুপারম্যান, উইনব্যানার সহ অন্যান্য ব্র্যান্ডের কালেকশন সাজিয়ে রেখেছে। এগুলোর মধ্যে নাইকি এবং পাওয়ারের মতো হাতেগোনা দু-একটি ব্র্যান্ডের নামডাক থাকলেও অধিকাংশই চায়না থেকে আমদানি করা বেনামি নিম্নমানের জুতার ব্র্যান্ড। শো-রুমগুলোয় এখন নিজেদের দেশি কারখানায় তৈরি জুতা থেকে বিদেশি ব্র্যান্ডের জুতাই বেশি।
নাসিমা বেগম। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে রাজধানীর মিরপুরে বসবাস করেন। বসুন্ধরা শপিংমলে ছেলেকে নিয়ে জুতা কিনতে এসেছিলেন। কথা হয় তার সঙ্গে। নাসিমা বলেন, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় পড়াকালীন সময় থেকে আমি নিয়মিত বাটা জুতা পরতে অভ্যস্ত। সম্প্রতি মিরপুরে অবস্থিত বাটার শো-রুম থেকে ১ হাজার ৬শ’ টাকায় একজোড়া জুতা ক্রয় করি। একটি বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে ফেরার পথে জুতার সোল খুলে যায়। রীতিমতো বিব্রতকর পরিস্থিতি। বাটার প্রতি বিশ্বাসটা অনেকটাই উঠে গেছে। জুতা ক্রয়ের সময় তারা ১ মাসের গ্যারান্টি দিলেও পরবর্তীতে সেটা পরিবর্তন করতে গেলে জুতার সাইজ নেই, অন্য শো-রুম থেকে আনতে হবে, সঙ্গে সঙ্গে কেন অভিযোগ দেইনি, এসব অজুহাত দেখাতে শুরু করেন।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী জাওয়াদ বলেন, বাটা থেকে জুতা কিনেছি। ১৫শ’ থেকে ২৫শ’ টাকা বাজেটের জুতাগুলো একটু টেকসই হয়। বছরখানেক অনায়াসেই পরা যায়। জাওয়াদের মায়ের পছন্দ এপেক্স। তিনি বলেন, আমি এপেক্স থেকে জুতা ক্রয় করি। এর আগে ২০১৭ সালে সুকান্ত কুমার সাহা নামে এক ব্যক্তি বাটার জুতা ক্রয় করে প্রতারিত হয়ে ভোক্তা অধিকারে অভিযোগ করেন। ভুক্তভোগী ব্যক্তি অভিযোগে জানান, বাটার চকচকে শো-রুম আর রঙ- বেরঙের ডিসপ্লে দেখলে-ক্রেতা সাধারণের মাথা আসলেই ঘুরে যায়। তারা ভাবতে বাধ্য হন-এত সুন্দর আর দামি জায়গায় যাদের শোরুম, এত সুন্দর আর গোছানো যাদের ডিসপ্লে, তারা ভালো জিনিস বিক্রি না করেই পারেন না! অতএব এরা বেশি কিছু না ভেবে, দেশীয় ছোট ছোট শো-রুম থেকে জুতা না কিনে বাটায় যায়। এই ক্রেতা সাধারণের মধ্যে আমিও একজন। গত ১৩/০৬/২০১৭ তারিখে আমি বসুন্ধরা সিটির বাটার ‘মেগা সিটি স্টোর’ থেকে ৩,৯৯০ টাকায় একজোড়া জুতা কিনে কীভাবে প্রতারিত হয়েছিলেন তার ঘটনাও দেন অভিযোগে। ২০ দিন আগে জুতা কিনছি। এক মাস না যেতেই পুরো সোল উঠে গেছে। দেখা গেল, ভেতরে চামড়া নেই। রেকসিন দিয়ে বানানো হয়েছে। এ কারণেই আঠা টেকেনি। বাটা জুতা কিনে হতাশ হয়ে এমন কথা বলছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী নেহাল হোসেন। তিনি বলেন, বেশি হাঁটাচলা করতে হয়। তাই বেশিদিন পরা যাবে ভেবে বাটা জুতা কিনলাম। কেনার সময় ৬ মাসের গ্যারান্টিও দিয়েছে। এখন এক মাসই পরতে পারলাম না। যেন নামেই ব্র্যান্ড, কাজে ঠনঠন। আগে বাটা জুতা কিনলে ৫ থেকে ৬ মাসে কিছুই হতো না। আর এখন ১৫ দিনই টেকসই হচ্ছে না। এ কেমন প্রতারণা? বাটা মানুষের কাছে ব্র্যান্ড বিক্রি করছে। জুতা নয়।
পুরান ঢাকার বাসিন্দা এহসান ঈদের কেনাকাটা করতে বেরিয়েছেন। তিনি বাটার কয়েকটি শো-রুমে ঘুরেছেন কিন্তু পছন্দ না হওয়ায় অন্য জুতা কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এদিকে বাটা জুতার প্রতি তার কিছুটা অনীহা তৈরি হয়েছে। তিনি বলেন, গত জানুয়ারি মাসে রাজধানীর সদরঘাটের বাটার বড় শো-রুম থেকে একটি জুতা ক্রয় করেছিলাম। পরের দিন পায়ে দেয়ার পর সোল খুলে গিয়েছে। জুতাটির মূল্য নিয়েছিল ২ হাজার ৬০০ টাকা। এরপর তাদের জানানো হয়। জানানোর এক সপ্তাহ পরে জুতাটি চেঞ্জ করে অন্য জুুতা নেয়া হয়। সেটির দাম ২ হাজার ৮০০ টাকা। পরের জুতাটার মানও খুব একটা ভালো না। অল্প দিনের ভেতরে সোল নষ্ট হয়ে গিয়েছে। বাটা জুতার মান এত খারাপ হয়েছে যেটা এই জুতা দুইটি ক্রয় করে বুঝেছি। এখন থেকেই বাটা জুতার প্রতি একটি খারাপ ধারণা চলে এসেছে। এত টাকা দিয়ে জুতা কিনে যদি পরতেই না পারি তাহলে কিনবো কেন?
ঢাকা কলেজের অপরপাশে বাটার শো-রুম থেকে গত ফেব্রুয়ারিতে বাটার লোফার কেনেন নুর আলম খান। তিনি জানান, কেনার তারিখ থেকে সর্বোচ্চ ১৫ দিন হবে। দেখলাম বাম পায়ের জুতার সোল থেকে আঠা খুলে যাচ্ছে। ভাবলাম, যাক, রাস্তার পাশের কোনো এক ‘জুতার কারিগর’ দিয়ে আঠা লাগিয়ে নেব। কিন্তু কারিগর যখন জুতা খুলে সেলাই করবে, তখন দেখা গেল জুতাটা চামড়ার তৈরি না। এক ধরনের রেকসিন দিয়ে বানানো। কাপড় টাইপের কোনো ম্যাটেরিয়ালের উপর চামড়ার মতো দেখতে পাতলা এক ধরনের রেকসিন। পরদিন শো-রুমে গিয়ে কথা বললেও তারা কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। বললে, রেখে যান হেড অফিসে পাঠাবো। ফেরত আসলে আপনাকে জানানো হবে।
গুলিস্তানের বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে বাটার শো-রুমে বাচ্চাদের নিয়ে ঈদের কেনাকাটা করতে এসেছেন রিতা বেগম। তিনি বলেন, ছোটবেলা থেকেই দেখে এসেছি আমার পরিবার বাটার জুতা পরে। এটার একটা ঐতিহ্য আছে। তবে বাটার জুতা আগে অনেক ভালো ছিল যেটা এখন নেই। আগে একসময় শো-রুমগুলোতে শুধু বাটার জুতাগুলো দেখা যেতো কিন্তু এখন অন্যান্য ব্র্যান্ডের ভিন্ন ভিন্ন নামে জুতা বিক্রি করে। বুঝতে পারি না বাটার জুতা ক্রয় করছি নাকি অন্যকিছু। আগে একটা জুতা দুই বছর টিকতো। এখন সেটি ছয় মাস থেকে এক বছরও টিকে না। আগের তুলনায় মান অনেকটা নষ্ট হয়েছে।
গুলিস্তানে বাটার শো-রুমের সামনের সড়কে বসে জুতা বিক্রি করেন বাইজু। তিনি বলেন, আমি চায়না এবং ইন্ডিয়ার তৈরি জুতা বিক্রি করি। বাটা যখন ডিসকাউন্ট পণ্য ছাড়ে তখন কিছু নিয়ে এসে এখানে বিক্রি করি। আমরা ৩০০-৪০০ টাকায় বিক্রি করি। এই জুতাগুলো খুব একটা সুবিধার থাকে না। বাটা এখন আর আগের মতো নেই।
১৫, বঙ্গবন্ধু এভিনিউ’র শো-রুম ম্যানেজার মো. মামুন বলেন, ক্রেতাদের কাছ থেকে পণ্য নিয়ে খুব একটা অভিযোগ আমাদের কাছে আসে না। তবে দুই একটা আসে। আমরা তখন ওই জুতাটি চেঞ্জ করে দেয়ার চেষ্টা করি। প্রতিটি জুতার একমাস গ্যারান্টি থাকে।
গুলিস্তানে আরেকটি বাটার শো-রুমের বিক্রয়কর্মী ফাহাদ আগের চেয়ে বিক্রি অনেক কমেছে জানিয়ে বলেন, ডিসকাউন্টের জুতাগুলো একটু খারাপ হয়। বাচ্চাদের প্রডাক্ট বেশির ভাগ থাইল্যান্ড থেকে সরঞ্জাম এনে বাংলাদেশে তৈরি বা ফিটিং করা হয়। এখানে আবার বিভিন্ন কোম্পানির কিছু প্রডাক্ট আছে যেগুলো বাটা সিল ও স্টিকার ব্যবহার করা হয়।
ঢাকার কিছু কিছু শোরুমে পুরনো ট্যাগের উপর নতুন মূল্য নির্ধারণী ট্যাগ লাগিয়ে জুতা বিক্রি করা হচ্ছে। এমন কিছু অভিযোগের সত্যতা পেয়েছেন ভোক্তা অধিকার। ভোক্তা অধিকার বেশকিছু শো-রুমে অভিযান চালিয়ে ট্যাগ জালিয়াতির বিষয়টি হাতেনাতে ধরে জরিমানাও করেছেন। ভুয়া ট্যাগ লাগিয়ে ৯শ’ টাকার জুতা ১২শ’ টাকা নেয়া সিরাজগঞ্জ শহরের এস এস রোডে অবস্থিত বাটার শো-রুমকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। ১৯৯৯ টাকার জুতার স্টিকারের উপর আবার ২২৯৯ টাকার নতুন প্রাইজ ট্যাগ লাগিয়ে বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা-এমন অভিযোগে চট্টগ্রাম নগরের অভিজাত স্যানমার শপিং মলের বাটার শো-রুমে অভিযান পরিচালনা করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।
ফার্মগেটে অবস্থিত বাটা শো-রুমের এক কর্মী বলেন, বাটা আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের হলেও অল্প কিছু জুতা ইন্দোনেশিয়া এবং থাইল্যান্ড থেকে আমদানি করা হয়। এগুলোর মান অনেক ভালো। এবং দামও কিছুটা বেশি। আমাদের এখানে বাটা ছাড়াও আরও প্রায় ৫৭টির মতো বিভিন্ন ব্র্যান্ডের জুতা রয়েছে। এগুলোকে বাটার সাব-ব্রাঞ্চ বলা যায়। এক্ষেত্রে এসব জুতায় বাটার লোগো ব্যবহার করে। এর মধ্যে রয়েছে লাইট অ্যান্ড ইজি, ফুটবেড মাসাজিও, বিজিস। এই কর্মী জানান, জুতার বিষয়ে অভিযোগ করতে আমাদের অভিযোগ বক্স রয়েছে। সেখানে যে কেউ চাইলে অভিযোগ করতে পারেন। এক্ষেত্রে জুতা ক্রয়ের পর ১ মাসের ওয়ারেন্টি দেয়া হলেও অনেক সময় ছয় মাস পর্যন্ত সার্ভিসিং মেয়াদ দেয়া হয়।
কনজ্যুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট হুমায়ুন কবির মানবজমিনকে বলেন, বাটা নিয়ে বর্তমানে টুকটাক অভিযোগ আসছে। উত্তরা থেকে একটা অভিযোগ এসেছিল পরে ভোক্তা ও শোরুমের সঙ্গে বনিবনা হয়ে গেছে। বাটা একটা নামি কোম্পানি তাদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ আসা দুঃখজনক। অতিরিক্ত মুনাফা অর্জনের জন্যই তারা এই অসৎ উপায় অবলম্বন করছে। ভোক্তা অধিকারের উচিত বাটার প্রতি নজর রাখা। তাহলে ক্রেতারা ঠকবেন না।
কোম্পানিটির আর্থিক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, বাটার আয়ে প্রথম ধাক্কা আসে ২০১৯ সালে। ২০১৮ সালে যেখানে কোম্পানির মোট আয় ছিল ৯৫২ কোটি ১৩ লাখ ৯৪ হাজার টাকা, সেখানে পরের বছর ২০১৯ সালে আয় কমে দাঁড়ায় ৮৫৭ কোটি ৩৪ লাখ ৯৮ হাজার টাকায়। যদিও এর আগের বছরগুলোতে কোম্পানির ব্যবসা তুলনামূলক ভালো ছিল। ২০১৭ সালে আয় ছিল ৯০৪ কোটি ৫ লাখ ৫৮ হাজার ৩৫৫ টাকা। ২০১৬ সালে ছিল ৮৭৮ কোটি ৪৫ লাখ ৫৩ হাজার ৩১৭ টাকা।
২০২০ সালে কোম্পানির তৃতীয় প্রান্তিকের হিসাব অনুযায়ী, জানুয়ারি- সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯ মাসে বাটা আয় করে ৩৪৪ কোটি ৭৭ লাখ ৬৩ হাজার ২২৬ টাকা। অথচ ২০১৯ সালের একই সময়ে কোম্পানির এই আয় ছিল ৬২৮ কোটি ৪০ লাখ ৪৫ হাজার ৩০৯ টাকা।
ব্যবসার এই প্রভাব পড়ে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ার দরে।
বাংলাদেশে বাটা কোম্পানির দুইটি কারখানা রয়েছে। এর একটি গাজীপুরের টঙ্গী ও অপরটি ঢাকার ধামরাইয়ে। কারখানা দুইটির সম্মিলিতভাবে দৈনিক উৎপাদন সক্ষমতা রয়েছে ১ লাখ ৬০ হাজার জোড়া জুতা। সারা দেশে বাটা বাংলাদেশের হোলসেল ডিপো রয়েছে ১৩টি। এই হোলসেল ডিপোর মাধ্যমে ৪৭১টি অনুমোদিত হোলসেল ডিলার এবং ৬৯০টি ডিলার সাপোর্ট প্রোগ্রামের মাধ্যমে বাটা জুতা বাজারজাত হয়ে থাকে। আর বাটা সিটি স্টোর, বাটা বাজার এবং বাটা ফ্যামেলি শপসহ সারা দেশে আরও রয়েছে ২৪২টি রিটেইল আউটলেট। বাটা ব্যবসা করছে বাংলাদেশে। অথচ বাংলাদেশি কর্মীরা এখানে অবহেলিত। সব বড় পদই দখল করে আছেন বিদেশিরা।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বাটা বাংলাদেশের কোম্পানি সচিব হাসিম রেজা বলেন, করোনার কারণে কারখানা বন্ধ ছিল। উৎপাদন কমায় লোকসান হয়েছিল। এখন আগের তুলনায় বেচা-বিক্রি অনেক ভালো। মহামারির সময় যে ক্ষতি হয়েছিল সেটা কাটিয়ে এখন মুনাফা হচ্ছে। আগামী মাসে আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে। তখন স্পষ্ট হবে বাটার আয়-ব্যয়।
জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান মানবজমিনকে বলেন, বাটার বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ ছিল। বাটার অতিরিক্ত মূল্য, নিম্নমানের পণ্যসহ মাঝেমধ্যেই আমাদের কাছে এ সংক্রান্ত অভিযোগ আসে। এবং বাটার বিরুদ্ধে গত বছর বিভিন্ন জেলায় আমরা অভিযান চালিয়েছি। ঈদের আগে দু-একদিনের মধ্যে বাটাসহ জুতার দোকানগুলোতে অভিযান চালাবো। এখন আমরা কাপড় আর কসমেটিকস নিয়ে রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানের দোকানগুলোতে অভিযান পরিচালনা করছি।