ব্যবসায়ী সংগঠনে শৃঙ্খলা ফেরাতে বাণিজ্য সংগঠন বিধিমালা হচ্ছে

ব্যবসায়ী সংগঠনে শৃঙ্খলা ফেরাতে বাণিজ্য সংগঠন বিধিমালা হচ্ছে

বাণিজ্য সংগঠনের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিতে ‘বাণিজ্য সংগঠন বিধিমালা-২০২৩’ প্রণয়ন করছে সরকার। ইতিমধ্যে বিধিমালার খসড়া তৈরি করে সেটি অংশীজনের মতামতের জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়েছে।

খসড়া বিধিমালার ২৭ ধারার উপধারা (২) এর (ক)-তে ফেডারেশনের পরিচালনা পর্ষদের বিষয়ে বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, ফেডারেশনের সাধারণ পরিষদভূক্ত অ্যাসোসিয়েশন গ্রুপ এবং চেম্বার গ্রুপ থেকে নির্বাচিত ৬৪ জন পরিচালক হতে পারবেন। এ ছাড়া দুটি সংগঠন থেকে সরকার কর্তৃক মনোনীত দুজন করে মোট চারজন স্বতন্ত্র পরিচালক থাকতে পারবেন। তবে তাদের মধ্যে কমপক্ষে একজন নারী সদস্য হবেন।

১৯৯৪ সালে প্রণীত বাণিজ্য সংগঠন বিধিমালা অনুযায়ী ফেডারেশনের পরিচালনা পর্ষদে চেম্বার গ্রুপ থেকে ২০ জন, অ্যাসোসিয়েশন থেকে ২০ জন, চেম্বার গ্রুপ এবং অ্যাসোসিয়েশন থেকে মনোনীত ১৪ জন করে মোট ২৮ জন পরিচালক হতে পারতেন। তবে ২০২৩ সালের বাণিজ্য সংগঠনের বিধিতে চেম্বার গ্রুপ থেকে ৩২ জন, অ্যাসোসিয়েশন গ্রুপ থেকে ৩২ জন করে মোট ৬৪ জন এবং দুটি সংগঠন থেকে সরকার কর্তৃক মনোনীত দুজন করে পরিচালক পদে থাকতে পারবেন।

খসড়া বিধিমালার ২৭ ধারার উপবিধি (২) এর (খ)-তে বলা হয়েছে, ফেডারেশন পরিচালনা পর্ষদে একজন সভাপতি, একজন সিনিয়র সহসভাপতি এবং চেম্বার ও অ্যাসোসিয়েশন গ্রুপ থেকে তিনজন করে মোট ছয়জন সহসভাপতি হতে পারবেন। সভাপতি অ্যাসোসিয়েশন গ্রুপ থেকে হলে সিনিয়র সহসভাপতি চেম্বার গ্রুপ থেকে হবেন। ফেডারেশনের ৬৮টি পদের মধ্যে ৬৪টি বিশেষ খাত ও অঞ্চলভিত্তিক অ্যাসোসিয়েশন গ্রুপের ২৪টি খাতভিত্তিক ৩২ জন। চেম্বার গ্রুপের ৯টি গুচ্ছের জন্য সংরক্ষিত করা হবে।

ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বারস অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সিনিয়র সহসভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু আজকের পত্রিকাকে বলেন, বাণিজ্য সংগঠন বিধিমালাটি যুগোপযোগী করে তৈরি করা হয়েছে। এফবিসিসিআই নির্বাচনে এখন অঞ্চলভিত্তিক ভোট দেওয়ার সুযোগ তৈরি হবে। ভোটারদের ঢাকায় আনার প্রয়োজন হবে না। এতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি বাড়বে।

বিধিমালায় সংযুক্ত হচ্ছে জয়েন্ট ট্রেড ওয়ার্কিং কমিটির (জেটিডব্লিউসি) ধারা। খসড়া অনুযায়ী, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাণিজ্য সংগঠন অনুবিভাগের মহাপরিচালককে আহ্বায়ক ও বাণিজ্য সংগঠন-১ শাখার কর্মকর্তাকে সদস্যসচিব করে এ কমিটি গঠনের বিধান রাখা হয়েছে। নতুন করে থাকছে সংগঠনের লাইসেন্স প্রাপ্তিতে নতুন শর্ত, সংগঠনের গঠনতন্ত্রে সংযোজন-বিয়োজনের নিয়ম, সদস্যদের ধরন পরিবর্তন, সংগঠনের নিজস্ব ওয়েবসাইট উন্নতসহ বিভিন্ন বিষয়।

সমজাতীয় ব্যবসা-বাণিজ্যের বাণিজ্য সংগঠনের লাইসেন্স পেতে আগে কোনো শর্ত ছিল না। নতুন খসড়ায় লাইসেন্স পেতে শর্ত যুক্ত রয়েছে। বিধিমালার ধারা-৩-এ বলা হয়েছে, ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্পের প্রতিনিধিত্বকারী ১১টি প্রতিষ্ঠানকে একত্রিত হয়ে নতুন বাণিজ্য সংগঠনের জন্য ছাড়পত্রের আবেদন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে প্রথমে নামের ছাড়পত্রের আবেদন করতে হবে। নামের ছাড়পত্রের মেয়াদ থাকবে ছয় মাস। এ ছয় মাসের মধ্যে লাইসেন্স প্রাপ্তির যাবতীয় কার্যক্রম শেষ করে লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে হবে।

বিধিমালার ১০ নম্বর ধারায় বাণিজ্য সংগঠনগুলোর গঠনতন্ত্রের সংশোধন, সংযোজন বা পরিবর্তনের বিষয়ে নিয়ম করা হয়েছে। যদিও ১৯৯৪ সালের বিধিতে তা ছিল না। খসড়া বিধিমালা অনুযায়ী, হালনাগাদ বৈধ সদস্যদের এক-চতুর্থাংশের উপস্থিতিতে ও উপস্থিত সদস্যদের দুই-তৃতীয়াংশের সমর্থনে সংশোধন প্রস্তাব গ্রহণ করা হবে।
সব চেম্বার ও অ্যাসোসিয়েশনকে সরকার আগে ক, খ, গ—এ তিন শ্রেণিতে বিভক্ত করলেও এখন থেকে ক ও খ শ্রেণিতে বিভক্ত হবেন। সে অনুযায়ী তাদের ফি নির্ধারণ হবে। প্রতি বছর ৩০ এপ্রিলের মধ্যে সদস্যদের নির্ধারিত চাঁদা পরিশোধ করতে হবে।

কোনো বাণিজ্য সংগঠন সক্রিয়ভাবে কাজ না করলে ‘সুপ্ত বাণিজ্য সংগঠন’ নামে অভিহিত করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে দুই বছরের যৌথ মূলধনি কোম্পানি ও ফার্মগুলোর পরিদপ্তরে প্রতিবেদন দাখিল না করতে পারলে, বার্ষিক সাধারণ সভার বিজ্ঞপ্তি, নির্বাচনের তফসিল, কমিটির পূর্ণ তালিকা, পরিবর্তিত অফিস ঠিকানা মহাপরিচালকের কাছে না পাঠালে এবং কোনো সভায় কারণ দর্শানো ব্যতীত অনুপস্থিত থাকলে ওই সংগঠনকে সুপ্ত বাণিজ্য সংগঠন বলা হবে।

জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাণিজ্য সংগঠন অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. হাফিজুর রহমান বলেন, বাণিজ্য সংগঠন আইনের আলোকে একটি খসড়া বিধিমালা তৈরি করা হয়েছে। এটি অংশীজনের মতামতের জন্য ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়েছে। তবে ওয়েবসাইটে সময় বেঁধে না দেওয়ায় ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

অর্থ বাণিজ্য