এক সপ্তাহের ব্যবধানে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি ডেঙ্গু রোগী ৮৩.৯৩ শতাংশ বেড়েছে। গতকাল শনিবার পর্যন্ত এক সপ্তাহে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ১০৩ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে। এর আগের সপ্তাহ ২৩ থেকে ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয় ৫৬ জন রোগী। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত উপাত্ত থেকে এসব তথ্য জানা যায়।
সাধারণত বর্ষাকালেই ডেঙ্গুবাহী এডিস মশা বাড়ে। ডেঙ্গুর সর্বোচ্চ বিস্তৃতি ঘটে জুলাইয়ের পর থেকে। অক্টোবরে এটি কমে আসে। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে এখন ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত বেড়েছে ডেঙ্গু বিস্তারের সময়। এতে প্রায় ১২ মাসই থাকছে ডেঙ্গুর বিস্তার। এ জন্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখনই সঠিক সময় মশা নিয়ন্ত্রণের।
কীটতত্ত্ববিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কবিরুল বাশার বলেন, ২৫ থেকে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা এডিস মশার প্রজননের জন্য বেশ উপযোগী। এর সঙ্গে যদি বৃষ্টি থাকে, তখন এডিস মশার প্রজনন বেড়ে যায়।
এ বছর মাঠ পর্যায়ে এডিস মশার ঘনত্ব বেশি থাকায় শনাক্তের হার বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন কবিরুল বাশার। তিনি বলেন, তাপমাত্রার সঙ্গে এ বছর বৃষ্টিপাত হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই এডিস মশার ঘনত্ব অন্যান্য বছরের তুলনায় বেশি পাওয়া যাচ্ছে। এ বছর ঢাকার পর চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগে এডিস মশা বেশি হবে। ঢাকার বাইরে এখন ৪৬ শতাংশ রোগী রয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, চলতি বছর এ পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে এক হাজার ৮০ জন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঢাকায়, ৫৮৮ জন। ঢাকার বাইরে ৪৯২ জন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ২৩৬ জন চট্টগ্রাম বিভাগে এবং ১১১ জন বরিশাল বিভাগে। চলতি বছর এ পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে মোট ১১ জনের। এর মধ্যে আটজন ঢাকা মহানগরের এবং তিনজন চট্টগ্রাম বিভাগের।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক ডা. নাজমুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ডেঙ্গুর চারটি ভেরিয়েন্ট রয়েছে। গত বছর ডেঙ্গুর ধরন ডেন-১ সেরুটাইপ থেকে ডেন-৪ সেরুটাইপ—সব কটির রোগী পাওয়া গেছে। এ ভাইরাস বহনকারী মশা কিন্তু রয়ে গেছে। অর্থাৎ ডেন-১ দ্বারা বা ডেন-৩ দ্বারা গত বছর যে আক্রান্ত হয়েছে, এ বছর একই ভেরিয়েন্ট দ্বারা যদি সে দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হয়, সেটি শরীরে খুব একটা ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে না। কিন্তু যদি অন্য কোনো ভেরিয়েন্ট দ্বারা আক্রান্ত হয়, তাহলে দ্রুত হাসপাতালে যেতে হবে। কারণ সেটি খুব ঝুঁকিপূর্ণ।
ডা. নাজমুল বলেন, ‘দুই দশক বা তারও আগে থেকে মানুষের তো ডেঙ্গু হয়েছে, অনেকে তো পরীক্ষাও করেনি, তাদের ঝুঁকিটা বেশি। গত কয়েক বছরে আমরা দেখছি, আইসিউতে বেশি যাচ্ছে, মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। এ জন্য আগে থেকে প্রস্তুতি নেওয়া জরুরি। একই সঙ্গে নাগরিকদেরও দায়িত্ব নিয়ে নিজ বাড়িতে জমে থাকা পানি অপসারণ করতে হবে। সেখানে এডিস মশা হলে প্রথমে ওই বাড়ির মানুষকে কামড়াবে।’
সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের সাবেক পরিচালক বে-নজির আহমেদ বলেন, ‘ঢাকার বাইরে ডেঙ্গু রোগী বাড়ছে, সেটি কিন্তু ভালো খবর নয়। ঢাকা সিটি করপোরেশনের যদিও কিছু সামর্থ্য আছে, কিন্তু ঢাকার বাইরে সেই সামর্থ্য খুব কম। বিশেষ করে পৌরসভায় তো সেটি একবারে কম। কিন্তু নগরায়ণের অনেক বৈশিষ্ট্য সেখানে আছে। অনেক নির্মাণকাজ হচ্ছে, বিল্ডিং হচ্ছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই বিভিন্ন জাযগায় পানি জমে থাকে। এ জন্য স্থানীয় সরকারকে একটা জাতীয় কর্মকৌশল প্রণয়ন করতে হবে এবং সব পৌরসভাকে এ কর্মকৌশলের আওতায় আনতে হবে। এ ছাড়া পরিস্থিতি আমাদের নিয়ন্ত্রণে বাইরে চলে যাবে।