সাধারণ মানুষের আবাসন সমস্যা সমাধান এবং কম টাকায় স্বল্প আয়ের মানুষের আবাসন সুবিধা দেওয়ার জন্য নানা উদ্যোগ নেয় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। তবে সংস্থাটির এসব উদ্যোগ কাগজে-কলমেই। রাজউকের মাধ্যমে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, প্রভাবশালী রাজনীতিক, জনপ্রতিনিধিসহ নানা মানুষের আবাসনের ব্যবস্থা হলেও সাধারণের অংশগ্রহণ খুবই কম। বিভিন্ন সময় রাজউকের প্লট বরাদ্দ নিয়ে নানা অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। এর মধ্যে সর্বশেষ গত ৫ ফেব্রুয়ারি ২৪ জনকে রাজউকের ঝিলমিল প্রকল্পে পাঁচ কাঠার প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়। সংরক্ষিত কোটার নামে এসব অতিরিক্ত প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়। যদিও মোট প্লটের সংরক্ষিত কোটায় থাকা ১০ ভাগেরও বেশি প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়ে গেছে।
রাজউকের বরাদ্দ নীতিমালা অনুযায়ী, সংরক্ষিত কোটায় প্লট দেওয়া হয় ১৩-এ ধারা মতে। এ ধারায় বলা আছে, সংসদ সদস্য, বিচারপতি, মুক্তিযোদ্ধা, রাজনীতিবিদ ও সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা; যারা রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ কাজে অবদান রেখেছেন, তাদের প্লট দেওয়া যায়। তবে রাজউক এলাকায় যাদের নিজস্ব প্লট বা ফ্ল্যাট রয়েছে, তারা প্লট পাবেন না। পূর্বাচল প্রকল্পে অবশ্য রাজউক এলাকায় নিজস্ব প্লট বা ফ্ল্যাট থাকলেও উপযুক্ত হলে তিনি প্লট পেতে পারেন।
close
ঝিলমিল আবাসিক প্রকল্পে ৫ কাঠা আয়তনের ৩৯৭টি এবং ৩ কাঠা আয়তনের ১ হাজার ১৩টি প্লট রয়েছে। এর মধ্যে ৫ কাঠার জন্য সংরক্ষিত ১০ ভাগ হিসেবে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৪০টি প্লট। এ ছাড়া ৩ কাঠার জন্য সংরক্ষিত ১০ ভাগ হিসেবে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১০৩টি প্লট। তবে রাজউকের নথিতে দেখা যায়, এরই মধ্যে ৫ কাঠা প্লটের ক্ষেত্রে ১০ ভাগের অতিরিক্ত প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন ব্যক্তির নামে ৭০টি প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ৩ কাঠার প্লটের ক্ষেত্রে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১০৩টি প্লট। অর্থাৎ সংরক্ষিত কোটার বাইরেও ৩২টি প্লট অতিরিক্ত বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
সংরক্ষিত কোটায় অতিরিক্ত বরাদ্দের বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছে বাংলাদেশের মহাহিসাবরক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়। এতে বলা হয়, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় অনুমোদিত ঝিলমিল আবাসিক প্রকল্পের প্লট বরাদ্দ পদ্ধতি-২০১১-এর শর্ত লঙ্ঘন করে ৩২টি অতিরিক্ত প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে গত ৫ ফেব্রুয়ারি রাজউকের এক সাধারণ সভায় ২৪ জন হাইকোর্টের বিচারপতিকে সংরক্ষিত কোটায় ঝিলমিল আবাসন প্রকল্পে ৫ কাঠা আয়তনের প্লট দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। রাজউকের চেয়ারম্যান মো. আনিছুর রহমান মিঞার সভাপতিত্বে এতে রাজউকের বোর্ডের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। যদিও বোর্ড সভার নথিতে উল্লেখ করা হয়, ঝিলমিল আবাসিক প্রকল্পে ১৩/এ ধারা, সরকারের সংরক্ষিত কোটায় ৫ কাঠা আয়তনের অতিরিক্ত প্লট বরাদ্দের বিষয়ে পূর্ত অডিট অধিদপ্তরের অডিট আপত্তি অনিষ্পন্ন আছে।
কালবেলা পত্রিকা অনলাইনের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
এ বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক এবং ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইপিডি) নির্বাহী পরিচালক আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, যে কোনো নীতিমালা তৈরি করা হয় নানা কিছু বিবেচনা করে। প্রিভেলেজ সবাই পেতে চায়; কিন্তু নীতিমালার ব্যত্যয় ঘটিয়ে নয়। সবাইকে তো দেওয়া যাবে না। সংরক্ষিত কোটার অপব্যবহার নিয়ে দীর্ঘদিন কথা হচ্ছে। কোটার মাধ্যমে প্লট চাওয়াটা ব্যক্তিগত বিষয়। লাভ জড়িত। এখানে আবেদনগুলোই অনৈতিক। এর চেয়ে বেশি অনৈতিক, আবেদনের বিষয়ে রাজউক থেকে যে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে রাজউককে আমরা বড় মনে করি। তবে রাজউকের চেয়েও বড় হচ্ছে মন্ত্রণালয়। রাজউকের পক্ষে, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ উপেক্ষা করার সুযোগ থাকে না। বড় কর্তাদের চাপ রক্ষা করা অনেক সময় কঠিন হয়ে যায়। শুধু রাজউক না, মন্ত্রণালয়ে যারা চাপ দেয়, রাজউককে চাপ দিয়ে যারা প্লট দিতে বাধ্য করে, তারাও সমান দায়ী। পুরো প্রক্রিয়াটাই অস্বচ্ছ। একজন সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে তাদের নিয়মের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। এক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়কে আরও শক্ত ভূমিকা রাখতে হবে। যে কোনো অনৈতিক অনুরোধ থেকে বিরত থাকতে হবে।
এ বিষয়ে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মোহাম্মদ নূরুল ইসলাম বলেন, নতুন করে যে ২৫টি প্লট সংরক্ষিত কোটায় দেওয়া হয়েছে, ওইটা রাজউক থেকে ১৩/এ ধারা অনুযায়ী বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। সরকারি নির্দেশে বিশেষ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে ৩ কাঠা ও ৫ কাঠার প্লট বরাদ্দে অডিট আপত্তি দেওয়া হয়েছিল। তবে ৩ কাঠার অডিট আপত্তি তুলে নেওয়া হয়েছে।