দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কী হবে নির্বাচনী সরকারের

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কী হবে নির্বাচনী সরকারের

নিজস্ব প্রতিবেদক

সংবিধান অনুযায়ী বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই নির্বাচনকালীন সরকার গঠন হচ্ছে। ২০১৪ সালের মতো এবারও বিএনপিকে নির্বাচনকালীন সরকারে দুয়েকটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হতে পারে। রাজনৈতিক মহলে এখন এরকম আলোচনাই চলছে।

আওয়ামী লীগ বলছে, বিএনপি ২০১৪ সালে সংসদে ছিল বলেই নির্বাচনকালীন সরকারে থাকার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। এবারে তারা সংসদে নেই। তাই তাদের প্রস্তাব দেওয়ার প্রশ্নই আসে না। বিএনপি বলছে, আওয়ামী লীগের অধীনে নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের প্রশ্নই ওঠে না। আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সরকার বাধ্য হবে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবি মেনে নিতে। ২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচনের আগেও বিএনপিকে নির্বাচনকালীন সরকারে থাকার প্রস্তাব দেওয়া হলে দলটি তা গ্রহণ করেনি। সংবিধান অনুযায়ী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের ৯০ দিনের মধ্যেই নির্বাচন করবে ইসি। বর্তমান সংসদের মেয়াদ শেষ হবে ২০২৪ সালের ২৯ জানুয়ারি। সে হিসেবে চলতি বছরের নভেম্বর থেকে ২০২৪ সালের ২৯ জানুয়ারির মধ্যে ভোট হবে। নির্বাচন কমিশন বলছে, ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ বা ২০২৪ সালের জানুয়ারির শুরুতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে। তফসিল ঘোষণা হবে নভেম্বরে।

নির্বাচনকালীন সরকারে বিএনপিসহ অন্যান্য দলকে রাখার সুযোগ সংবিধানে আছে কি না- জানতে চাইলে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ  বলেন, যে সরকার আছে, সে সরকারই নির্বাচন পরিচালনা করবে। অন্যান্য দল যদি অংশগ্রহণ করতে চায় করতে পারে। এ ক্ষেত্রে আইনি কোনো বাধা নেই।
বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন হতে পারে কি না- প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান  বলেন, নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে আমরা কোনো আলোচনা করছি না। সংবিধান অনুযায়ী বর্তমান সরকারই নির্বাচনকালীন সরকারে থাকবে। সেই সরকারের প্রধান থাকবেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বিএনপিকে নির্বাচনকালীন সরকারে থাকার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। এবারও সেরকম কোনো প্রস্তাব দেওয়া হবে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ২০১৪ সালে বিএনপি সংসদে ছিল বলেই তাদের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে তারা সংসদে নেই। তাই তাদের প্রস্তাব দেওয়ার প্রশ্নই আসে না।

বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন হচ্ছে। সেই সরকারে বিএনপিকে দুয়েকটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেওয়ার প্রস্তাব আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দেওয়া হলে অংশ নেবে কি না- জানতে চাইলে দলীয় মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আওয়ামী লীগের অধীনে নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের প্রশ্নই ওঠে না। সংসদ ভেঙে দিয়ে এ অবৈধ সরকার পদত্যাগ করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সরকার বাধ্য হবে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবি মেনে নিতে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের কথায় আস্থা রাখা, বিশ্বাস করার প্রশ্নই ওঠে না। জনগণকে বিভ্রান্ত করার জন্য এটি আরেকটি চক্রান্ত। এখন তারা বলবে যে তারা প্রস্তাব দিয়েছে, আমরা শুনছি না, যাচ্ছি না। মির্জা ফখরুল বলেন, ২০১৮ সালে শেখ হাসিনাকে বিশ্বাস করে আমরা তার সঙ্গে সংলাপে বসেছিলাম। সেই সংলাপে যেসব কথা তিনি দিয়েছিলেন, তার একটাও রক্ষা করেননি। সুতরাং আমাদের কথা খুব পরিষ্কার- আমরা বিএনপিকে বা বিরোধী দলকে ক্ষমতায় নেওয়ার জন্য আন্দোলন করছি না। গত দুটি নির্বাচনে মানুষ ভোটই দিতে পারেনি এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতেও জনগণ ভোট দিতে পারে না। তারা জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। মানুষ যেন ভোট দিতে পারে সেজন্য আমরা আন্দোলন করছি।

নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশে সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে। বর্তমান সরকারই নির্বাচনকালীন সরকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে এবং প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনাই দায়িত্বে থাকবেন।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশ ভারত, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য এবং কন্টিনেন্টাল ইউরোপের বিভিন্ন দেশে যে সরকার ইতঃপূর্বে দায়িত্ব পালন করে আসছিল, তারাই নির্বাচনকালীন সরকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছে। আমাদের দেশেও সংবিধান অনুযায়ী তা-ই হবে।’ গতকাল দুপুরে সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সমসাময়িক বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তথ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

এ সময় নির্বাচনকালীন সরকারে বিএনপির প্রতিনিধিত্ব এবং ২০১৪ সালেও আওয়ামী লীগের দেওয়া অনুরূপ প্রস্তাবের বিষয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আমাদের দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের একজন সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে মন্তব্য করেছেন। এটি কারও জন্য কোনো প্রস্তাব নয়, সেটি করা হবে কি হবে না, তা বলার সময় এখনো আসেনি। বিএনপি যদি নির্বাচন বর্জন করে বা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচন না করার দাবিতেই অনড় থাকে, তাহলে এসব আলোচনার প্রশ্নই আসে না। ২০১৪ সালের প্রেক্ষাপট আর আজকের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা নিজেই সেই প্রস্তাব দিয়েছিলেন, কিন্তু তারা গ্রহণ করেনি।

 

জাতীয় রাজনীতি