নিজস্ব প্রতিবেদক
বিভিন্ন অজুহাতে লাগামহীনভাবে সপ্তাহান্তে ১০ থেকে ১৫ টাকা দাম বাড়িয়ে প্রতি কেজি পেঁয়াজ সর্বোচ্চ ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সবজির দাম বেড়ে ক্রেতাদের জন্য অস্বস্তির পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছে। কেজিপ্রতি সবজি সপ্তাহের ব্যবধানে গড়ে ১০ থেকে ১৫ টাকা দাম বেড়েছে। গ্রীষ্মের অনেক সবজির কেজিই মিলছে না ৮০ থেকে ১০০ টাকার নিচে।
শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি পটল বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা, ঢেঁড়স ৬০ টাকা, বেগুন ৮০, ঝিঙ্গা ৮০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, কাঁকরোল ১০০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৪০ টাকা, পেঁপে ৮০ টাকা, করলা ১০০ টাকা, টমেটো প্রতি কেজি ৪০ টাকা, মুলা ৬০ টাকা এবং শসা প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা দরে।
অন্যদিকে জালি কুমড়া কুমড়া পিস ৬০ টাকা, গাজর প্রতি কেজি ১০০ টাকা, কচুর লতি ১০০ টাকা, লাউ প্রতি পিস ৮০ টাকা, কাঁচামরিচ প্রতি কেজি ২৫০ টাকা এবং কাঁচাকলা প্রতি হালি ৪০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে অন্য পণ্য। দেখা গেছে বাজারে ডিম, মুরগি ও সয়াবিন তেলের দামও অনেক দিন থেকে ঊর্ধ্বমুখী। ব্রয়লার মুরগি আগের মতোই প্রতি কেজি ২৪০ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সোনালি মুরগি কিনতে গুণতে হচ্ছে কেজিপ্রতি ৩৫০ থেকে ৩৬০ টাকা। মুরগির বাদামি ডিমের দাম প্রতি ডজন ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা। সাদা ডিমের দাম প্রতি ডজন ১২০ থেকে ১৩০ টাকা। গত এক সপ্তাহে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আসেনি মাছ-মাংসের বাজারেও।
বাজারে আলু পেঁয়াজের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে আদা-রসুনের দামও। বিক্রেতারা জানিয়েছেন, ঈদের পর মানভেদে কেজিপ্রতি ইন্দোনেশিয়ার আদা কেজিতে ১৫০ টাকা বেড়েছে, মিনায়মারেরটি ১০০ ও চীনা আদার দাম বেড়েছে ১০০ টাকা। মিয়ানমারের আদা বাদে কোনোটিই ৩২০ টাকার নিচে মিলছে না। মিয়ানমারের আদার দাম ২২০ টাকা। অথচ টিসিবির তথ্যে গতবছর এসময়ে আদা ৮০ থেকে ১৪০ টাকার মধ্যে পাওয়া গেছে।
দাম বেড়েছে আমদানি করা রসুনেরও। কারওয়ানবাজারে চীনা রসুন কেজিপ্রতি দাম ২০ থেকে ৩০ টাকা বেড়ে এখন ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার দাম বাড়িয়ে কেজি প্রতি ১৬ টাকা বাড়িয়ে খোলায় ১২০ টাকা এবং প্যাকেটজাত চিনি ১২৫ টাকা বিক্রয়মূল্য নির্ধারণ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তবে এতেও বাজারে পরিবর্তনের নজির নেই। এখনও খোলা চিনি ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকাতেই বিক্রি হচ্ছে।
রাজধানীর মহাখালী বাজারে বাজার করতে এসেছেন একজন বেসরকারি চাকরিজীবী। মাছ মাংস বাড়তি দামে কেনার পর এসেছেন কাঁচাবাজারে সবজি কিনতে। কিন্তু সব ধরনের সবজির অতিরিক্ত দাম দেখে তিনি তো রীতিমত অবাক।
বাজার ঘুরে দরদাম সম্পর্কে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বাজারে ৭০/৮০ টাকা কেজির নিচে কোনো সবজি নেই। বাজারে পেঁপে বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা কেজি, আর করলা ১০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। সব ধরনের সবজিই যদি এত বাড়তি দামে বিক্রি হয়, তাহলে আমরা কিভাবে কিনব?
এদিকে রাজধানীর মালিবাগ কাঁচাবাজারে আসা একজন গার্মেন্টস কর্মী বলেন, বাজারে এসে দেখা যাচ্ছে সবজি কেনার উপায় নেই। এত দাম দেখে আধা কেজি, আড়াইশ গ্রাম করে সবজি কেনা লাগছে। যেই সবজির দাম করছি সেটা ৮০ টাকা, কম দামে কোনো সবজি নেই বাজারে। এত দাম হলে আমরা নিম্ন আয়ের মানুষ তো সবজিও কিনতে পারবো না।
মহাখালী কাঁচা বাজারের সবজি বিক্রেতা আব্দুল মালেক বলেন, সবজি দাম কিছুদিন ধরে বাড়তি যাচ্ছে। দাম বাড়তির কারণে আগের চেয়ে সবজি বিক্রিও কমে গেছে আমাদের। আগে যেখানে একজন ক্রেতা এক আইটেম এক কেজি নিত এখন সেখানে আধা কেজি নিচ্ছে। যে কারণে সব বাজারে সব দোকানেই সবজি বিক্রি অনেক কমেছে। দাম বৃদ্ধির কারণে মানুষও তুলনামূলক কম করে সবজি কিনছে।
খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা জানান, গত মার্চ থেকে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ আছে। পাশাপাশি স্থলবন্দর দিয়েও পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রয়েছে। তাই এখন পুরোপুরি দেশি পেঁয়াজের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। চাহিদা মেটাতে পাবনা, কুষ্টিয়া, রাজবাড়ী ও ফরিদপুর থেকে পেঁয়াজ আনা হচ্ছে। ফলে বাড়ছে পেঁয়াজের দাম।
নয়াবাজারের বিক্রেতা মো. ইকরামুল বলেন, পাইকারি বাজারে দফায় দফায় দাম বাড়াচ্ছে। যে কারণে আমরা বাড়তি দরে পেঁয়াজ কিনে বাড়তি দরে বিক্রি করছি।
রাজধানীর পাইকারি আড়ৎ স্যামবাজারের পাইকারি পেঁয়াজ বিক্রেতা শংকর চন্দ্র ঘোষ বলেন, ভারত থেকে আমদানি হচ্ছে না। সে কারণে পেঁয়াজের সরবরাহ কমেছে। তাই দাম কিছুটা বাড়তি। তবে দেশি পেঁয়াজ দিয়ে চাহিদা পূরণ করা হচ্ছে।
দেশের অন্যতম সবজি সরবরাহকারী জেলা বগুড়ায় উত্তরাঞ্চলের বৃহৎ সবজি বাজার মহাস্থান কাঁচা বাজারের একজন আড়তদার জানান, এক মাস আগেও দাম এত বেশি ছিল না। গরমে দেশি সবজি নষ্ট হয়েছে তাই দাম বেড়েছে। প্রচণ্ড গরমের কারণে সবজির ফলন কম হওয়ায় সরবরাহ কমেছে।