পুরো ফলাফল নয়, অনিয়ম হলে শুধু কেন্দ্রের ফল বাতিল করতে পারবে ইসি

পুরো ফলাফল নয়, অনিয়ম হলে শুধু কেন্দ্রের ফল বাতিল করতে পারবে ইসি

নিজস্ব প্রতিবেদক

নির্বাচনে কেবল অনিয়ম হওয়া কেন্দ্রের ভোট স্থগিত বা ভোটের ফল বাতিলের ক্ষমতা দিয়ে ‘গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও)’ সংশোধনের খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে তার কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই অনুমোদন দেওয়া হয়।

আইনটি সংসদে পাস হলে অনিয়মের জন্য নির্বাচন চলাকালে যেকোনো মুহূর্তে এক বা একাধিক কেন্দ্রের নির্বাচন স্থগিত বা বাতিল করতে পারবে নির্বাচন কমিশন। অনুমোদন হওয়া খসড়ায় পুরো আসনের নির্বাচন বাতিল বা স্থগিতের বিষয়টি নেই। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদীয় আসন অনুযায়ী রিটার্নিং কর্মকর্তা আগে জেলা ভিত্তিক হতেন। এখন আসনভিত্তিক করার বিধান সংশোধনীতে যুক্ত হয়েছে।

বৃহস্পতিবার বিকেলে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বৈঠকের এসব সিদ্ধান্ত জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন। বৈঠকে সুরক্ষিত লেনদেন (অস্থাবর সম্পত্তি) আইন, ২০২৩ এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এ আইনে বলা হয়েছে অস্থাবর সম্পত্তির বিপরীতে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ পাওয়া যাবে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বৈঠকে আলোচনায় গুরুত্ব পেয়েছে ইসির নির্বাচন বাতিলের ক্ষমতা নিয়ে। কোনো কেন্দ্রে অনিয়ম-বিশৃঙ্খলা হলে ইসি নির্বাচন বাতিলের ক্ষমতা চেয়ে প্রস্তাব দিয়েছিল। গেজেট প্রকাশের পরও সেই ক্ষমতা চেয়েছিল সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি। তবে ইসির প্রস্তাবে রাজি নয় মন্ত্রিসভা। পুরো আসন নয়, শুধু এক বা একাধিক কেন্দ্রের নির্বাচন বন্ধ বা বাতিল করতে পারবে ইসি।

মাহবুব হোসেন জানান, জাতীয় নির্বাচনের আগেই সংশোধিত হচ্ছে গণপ্রতিনিধিত্ব আইনের (আরপিও) কয়েকটি ধারা। এ ছাড়া মনোনয়নপত্র দাখিলের আগের দিন কৃষি ও ক্ষুদ্রঋণ এবং বিলখেলাপিরা তাদের খেলাপি টাকা পরিশোধ করলেই নির্বাচনে প্রার্থী হতে সুযোগ রাখা হয়েছে সংশোধনীতে। বিদ্যমান আইনে সাত দিন আগে এসব পরিশোধের বিধান রয়েছে।

সচিব বলেন, আরপিওতে কিছু নতুন ধারা যুক্ত হয়েছে। মনোনয়নপত্র দাখিলের আগের দিন পর্যন্ত ইউটিলিটি বিল জমা দিতে পারবেন প্রার্থীরা। যিনি মনোনয়নপত্র দাখিল করবেন তার টিআইএন এবং ট্যাক্স রিটার্ন জমার রশিদের কপি জমা দিতে হবে। একমাত্র ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন ছাড়া সব নির্বাচনে এই বিধান আছে। সংসদ নির্বাচনে এটি ছিল না, সেটি আইনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর বাতিল হলে তিনি তখন আপিল করতে পারতেন। এখন শুধু বাতিল নয়, রিটার্নিং অফিসার যদি গ্রহণও করেন তাহলেও তার বিরুদ্ধে আপিল করা যাবে। তার যেকোনো সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করা যাবে। উপযুক্ত কাগজপত্র ও সুনির্দিষ্ট প্রমাণসহ অভিযোগ দাখিল করে এই আপিল করা যাবে। এছাড়া বৈধভাবে গণমাধ্যমকর্মী ও পর্যবেক্ষকের নির্বাচন কেন্দ্রে প্রবেশে ও কাজে যে কেউ বাধা দিলে দুই থেকে সাত বছরের সাজারও বিধান রয়েছে প্রস্তাবিত আইনে। এর আগে গত ২৮ মার্চ আইনটির নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। বৃহস্পতিবার চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

বৈঠকে প্রকিউরমেন্ট অথরিটি আইন, সুরক্ষিত লেনদেন (অস্থাবর সম্পত্তি) আইন ও ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন আইনের খসড়ার নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়।

অস্থাবর সম্পত্তির বিপরীতে ঋণ: মন্ত্রিসভা সুরক্ষিত লেনদেন (অস্থাবর সম্পত্তি) আইন, ২০২৩ এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন জানান, আইনটি পাস হলে অস্থাবর সম্পত্তির বিপরীতে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ পাওয়া যাবে। আমাদের ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো সাধারণত ঋণ নিয়ে থাকে স্থাবর সম্পত্তির ভিত্তিতে। অস্থাবর যে সম্পত্তি আছে তার আওতায় ঋণ দেওয়ায় আমাদের কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান কাজ করে, কিন্তু তার আইনগত কোনো ভিত্তি ছিল না। সেই আইনগত ভিত্তি দিতেই আইনটি করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, যে অস্থাবর সম্পত্তির বিপরীতে ঋণ নেওয়া হবে, সেই অস্থাবর সম্পত্তি আগে নিবন্ধন করতে হবে। নিবন্ধনের জন্য একটি অথরিটি হবে। সেখান থেকে নিবন্ধন নিয়ে যেকোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নেওয়া যাবে। মূলত যারা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, বিশেষ করে যারা আইসিটি দিয়ে ব্যবসা করেন, যাদের একটা অ্যাপস আছে, একটা সফটওয়্যার আছে কিংবা কোনো একটা বিষয়ে মেধাস্বত্ব আছে, সেগুলোকে নিবন্ধন অথরিটি থেকে বাজার দরে মূল্যায়ন করে ব্যাংক ব্যবস্থায় এক্সেস তৈরি (ঋণ নেওয়া) হবে।

আইনে বলা হয়েছে মেধাস্বত্বসহ ১৬টি অস্থাবর সম্পত্তি জামানত রেখে ঋণ নেওয়া যাবে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো- ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে গচ্ছিত স্থায়ী আমানতের সনদ, সোনা-রূপা ও অন্যান্য মূল্যবান ধাতু, নিবন্ধিত কোম্পানির শেয়ার সার্টিফিকেট, মেধাস্বত্ব অধিকার দ্বারা স্বীকৃত মেধাস্বত্ব পণ্য, আসবাবপত্র, ইলেকট্রনিক পণ্য, সফটওয়্যার বা অ্যাপস যার মূল্য প্রাক্কলন করা সম্ভব, যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নিবন্ধিত যান্ত্রিক বা অযান্ত্রিক যানবাহন, যথাযথ সংরক্ষিত কৃষিজাত পণ্য, প্রক্রিয়াজাত মৎস্য বা জলজ প্রাণী ও বন্যপ্রাণী, উভচর-প্রাণী ছাড়া আয়বর্ধক জীবজন্তু, সুরক্ষার স্বার্থ স্বীকৃত যেকোনো চুক্তি বন্ধক সাপেক্ষে বিক্রয় ডিবেঞ্চার, যেকোনো চাষ বা কিস্তিতে ক্রয় চুক্তি, বিধি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত এক বছরের অধিক মেয়াদি কোনো ইজারা, সড়ক পরিবহন আইন দ্বারা নিবন্ধিত কোনো মোটরযান বা জামিনদারের দখলে থাকা পণ্যের ওপর সৃষ্ট সুরক্ষা স্বার্থ, কোনো বার্ষিক ভাতা বা বিমা পলিসির অধীন সৃষ্ট কোনো স্বার্থ বা দাবি বা জামানতের ক্ষয়ক্ষতি পূরণের নিশ্চয়তা হিসেবে কোনো বিমা পলিসির অধীন প্রাপ্য অর্থ। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আমরা শুনেছি আগে কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান শেয়ার বা এফডিআরের বিপরীতে ঋণ দিতো। এর আইন গত কোনো ভিত্তি ছিল না। এখন এর আইনগত ভিত্তি দেওয়া হলো।

সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হার ৬৪.৮১ শতাংশ : চলতি বছর জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত মন্ত্রিসভায় নেওয়া সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের হার ৬৪ দশমিক ৮১ শতাংশ। মন্ত্রিসভা বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের বিষয়ে ২০২৩ সালের প্রথম ত্রৈমাসিক (জানুয়ারি-মার্চ) প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। বৃহস্পতিবার মন্ত্রিসভা বৈঠকে এ প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন এ তথ্য জানান।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, গত জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত ৬টি মন্ত্রিসভা বৈঠক হয়। এতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ৫৪টি। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হয়েছে ৩৫টি, বাস্তবায়নের হার ৬৪ দশমিক ৮১ শতাংশ। ১৯টি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। গত তিন মাসে (জানুয়ারি থেকে মার্চ) মন্ত্রিসভা বৈঠকে নীতি বা কর্মকৌশল দু’টি, পাঁচটি চুক্তি বা প্রোটোকল অনুমোদিত হয়েছে। এ সময়ে সংসদে আইন পাস হয়েছে ১০টি।

জাতীয় রাজনীতি