আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন তেল, পাম তেল, চিনি, আটা তৈরির গম, পেঁয়াজ, মসুর ডাল, ছোলা ও মটর ডাল— আটটি পণ্যের দাম রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর সময়কার তুলনায় উল্লেখযোগ্য হারে কমলেও দেশের বাজারে এখন পর্যন্ত কমেনি চার আনাও। পেঁয়াজ কিংবা সয়াবিন তেলের দাম বিশ্ববাজারে কমলেও দেশে উল্টো বেড়েছে। বিশ্ববাজারে চিনির দাম যা বেড়েছে, তার দ্বিগুণ বেড়েছে দেশে। ডালের দাম বিশ্ববাজারে যে হারে কমেছে, দেশে সে হারে কমেনি এখনো। এরপরও নানা ধরনের স্বার্থের দ্বন্দ্ব ও গোষ্ঠীস্বার্থের কারণে সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরাও ব্যবসায়ীদের অতিমুনাফা নিয়ন্ত্রণে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে মূল্যহ্রাসের বিষয়ে কোনো কার্যকর উদ্যোগই গ্রহণ করছে না। এমনকি তেল-গ্যাসের মতো যেসব খাত সরকারের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, সেসব খাতেও জনগণকে দেয়া হচ্ছে না আন্তর্জাতিক বাজারের মূল্যহ্রাসের সুবিধা। যে কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে কোনো পণ্যের মূল্যহ্রাসের সুফলই জুটছে না দেশের মানুষের ভাগ্যে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসব বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে না পারলে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ও জ্বালানি বিক্রির ক্ষেত্রে ‘মূল্য সমন্বয়’-এর নামে জনগণের পকেট কাটা বন্ধ হবে না।
বাজারের তথ্যানুযায়ী, গত এক বছরের ব্যবধানে আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন ও পাম তেলের দাম কমেছে যথাক্রমে ৪৪ শতাংশ ও ৫২ শতাংশ; কিন্তু দেশের বাজারে সম্প্রতি উল্টো লিটারপ্রতি সয়াবিন ও পাম তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে যথাক্রমে ১২ টাকা ও ১৮ টাকা। অথচ ২০ শতাংশ শুল্কসহ প্রতিটন সয়াবিন তেলের আমদানি মূল্য এক লাখ ৩৮ হাজার ৭৫০ টাকার সঙ্গে উৎপাদন পর্যায়ের ১৫ শতাংশ ভ্যাট, উৎপাদন খরচ, মোড়কজাতকরণ, অপচয় (প্রসেস লস), মুনাফা ও ডিলার কমিশন মিলিয়ে আরও ১৫ শতাংশ যুক্ত করে রক্ষণশীল হিসাবেও খুচরা পর্যায়ে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ১৮৩ টাকা ৫০ পয়সার বেশি হওয়ার কথা নয়। যদিও ট্যারিফ কমিশনের অনুমোদন নিয়ে বাজারে খুচরা পর্যায়ে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৯৯ টাকায়। সম্প্রতি সরকার কর্তৃক ভারত থেকে প্রতি লিটার ১৪৬ টাকা ১০ পয়সা দরে ১১ হাজার টন সয়াবিন তেল ও সিঙ্গাপুর থেকে ৮২ টাকা ৯৪ পয়সা কেজিতে সাড়ে ১২ হাজার টন চিনি আমদানি করা হয়। প্রশ্ন উঠেছে, সরকার যদি বিদেশ থেকে ১৪৬ টাকা লিটার দরে সয়াবিন ও ৮৩ টাকা কেজি দরে চিনি আমদানি করতে পারে, তাহলে কার স্বার্থে দেশের ব্যবসায়ীদের দেশের মানুষের কাছে ১৯৯ টাকা লিটার দরে তেল এবং ১৪০ টাকা কেজি দরে চিনি বিক্রি করতে দেয়া হচ্ছে! এ নিয়ে বিভিন্ন মহলের ভাষ্য, তেলের মতো চিনির বাজারেও সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। দেশের সাধারণ মানুষকে ভারতীয়দের চেয়ে দ্বিগুণের বেশি দামে চিনি কিনতে হচ্ছে।বিস্তারিত