এক দফা দাবিতে দ্রুত আন্দোলন শুরু করতে চায় বিএনপি

এক দফা দাবিতে দ্রুত আন্দোলন শুরু করতে চায় বিএনপি

সরকার পতনের এক দফা দাবিতে দ্রুত আন্দোলন শুরু করতে চায় বিএনপি। এ জন্য দলের ঘোষিত ১০ দফা দাবিকে এক দফায় নামিয়ে আনার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এক দফা সামনে রেখে আগামী কয়েক সপ্তাহ বিভাগীয় পর্যায়ে ‘তরুণ সমাবেশ’সহ কিছু কর্মসূচি পালন করবে দলটি।

বিএনপি নেতারা জানান, আজ রবিবার ঢাকা ছাড়া সারা দেশে মহানগর পর্যায়ে পদযাত্রা কর্মসূচির মাধ্যমে সপ্তাহব্যাপী সরকারবিরোধী কর্মসূচির প্রথম ধাপ শেষ হচ্ছে।

এরপর এক দফার আন্দোলন কিভাবে শুরু হবে, এ পর্যায়ে কী ধরনের কর্মসূচি দেওয়া হবে তা চূড়ান্ত করা হবে।
একাধিক দায়িত্বশীল নেতা কালের কণ্ঠকে জানান, বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব সব জেলা ও মহানগরের দায়িত্বপ্রাপ্ত গুরুত্বপূর্ণ নেতা, দলের সাবেক এমপি-মন্ত্রী এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করছেন। এ ছাড়া বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের শীর্ষস্থানীয় বিএনপিনেতাদের সঙ্গে কয়েক দফা সমন্বয় বৈঠক করেছেন। ওই সব বৈঠক থেকে সবাইকে দ্রুত এক দফার আন্দোলনে নামার প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বিএনপির নীতিনির্ধারকরা বলেন, চলমান কর্মসূচি এক দফার আন্দোলনে যাওয়ার প্রস্তুতির অংশ। দলের নেতারা মনে করেন, গত এক সপ্তাহ ধরে চলা কর্মসূচিতে আন্দোলনের গতি বেড়েছে। মার্কিন নতুন ভিসানীতি ঘোষণার পর নেতাকর্মীরা আন্দোলনের মাঠে নতুনভাবে উদ্দীপনা পেয়েছেন। মাঠের এই আবহ এক দফার আন্দোলন সফল করার ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।

জানতে চাইলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু কালের কণ্ঠকে বলেন, এখন যে কর্মসূচি চলছে তা এক দফার আন্দোলনে যাওয়ার প্রস্তুতির অংশ।

স্থায়ী কমিটির গত কয়েকটি বৈঠকে এক দফার আন্দোলনে যাওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে নেতারা বলেন, হঠাৎ বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে গায়েবি মামলা দেওয়ার সংখ্যা বেড়ে গেছে। কারণ ছাড়াই নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। জামিন বাতিল হচ্ছে।

এ অবস্থায় এক দফা আন্দোলনের দিনক্ষণ এগিয়ে আনা উচিত।
দ্রুত এক দফা চান নেতাকর্মীরা : মার্কিন নতুন ভিসানীতি ঘোষণার পর আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা মানসিকভাবে কিছুটা দুর্বল হবেন বলে মনে করছেন বিএনপি নেতারা। তাঁদের মতে, বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার, মামলা-হামলাসহ পুলিশের ‘আগ্রাসী ভাব’ও কমে আসবে। এই বিষয়গুলো সামনে রেখে দ্রুত কর্মসূচি দেওয়া উচিত বলে দলের বিভিন্ন পর্যায় থেকে মত এসেছে।

গাজীপুর থেকেও জনসমর্থনের ধারণা পেয়েছে বিএনপি : গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ না করলেও আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে হারতে হয়েছে। বিএনপি নেতারা মনে করেন, এর মাধ্যমে সরকারের প্রতি জনগণের অনাস্থা ও বিএনপির প্রতি জনসমর্থন সম্পর্কে ধারণা পেয়েছেন তাঁরা। দলের নেতারা মনে করেন, সরকারের প্রতি অনাস্থা থেকে গাজীপুরের ভোটাররা জায়েদা খাতুনকে ভোট দিয়েছেন।

আবার ভোটের আগ মুহূর্তে ভিসানীতি ঘোষণার কারণে নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা সরকারি কর্মকর্তাসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যরা সংযত ছিলেন। ভোটের মাঠে তাঁদের আচরণে পরিবর্তন দেখা গেছে। বিএনপি এখন এসব পরিস্থিতিকে কাজে লাগাতে চায়।

বিভাগীয় পর্যায়ে তরুণ সমাবেশ : ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের যৌথ উদ্যোগে বিভাগীয় পর্যায়ে তরুণ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে প্রায় দুইব্যাপী কর্মসূচি শেষ হবে আগামী ৮ জুন। আগামী ১০ জুন চট্টগ্রামে তরুণ সমাবেশের মাধ্যমে এই বিভাগীয় কর্মসূচি শুরু হতে পারে। সম্প্রতি বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। এই কর্মসূচিগুলোতে গত বছরের বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশের আবহ তৈরি করতে চান নেতাকর্মীরা। তিন সংগঠনের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।

যৌথ ঘোষণার দফা বাড়তে পারে : ক্ষমতায় গেলে রাষ্ট্র সংস্কারে কী করা হবে সে বিষয়ে যুগপৎ আন্দোলনের যৌথ ঘোষণা চূড়ান্ত করা হচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে দীর্ঘ আলোচনার পর তাদের ঘোষিত ২৭ দফা বাড়িয়ে ৩১ দফার খসড়া তৈরি করা হয়েছে। আগামীকাল সোমবার স্থায়ী কমিটির পরবর্তী বৈঠকে যৌথ ঘোষণা চূড়ান্ত করা হতে পারে। এরপর যুগপৎ আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী দলগুলো এক মঞ্চ থেকে রাষ্ট্র পরিচালনার যৌথ ঘোষণা দেওয়ার পাশাপাশি এক দফার ভিত্তিতে নতুন কর্মসূচি দেওয়ার চিন্তা-ভাবনা করছে।

এর আগে বিএনপি বলেছিল, ২৭ দফা অক্ষুণ্ন রেখে ঘোষণা চূড়ান্ত করবে। গণতন্ত্র মঞ্চের প্রস্তাবিত ৩৫ দফা ও গণতান্ত্রিক বাম ঐক্যের ১৩ দফার সঙ্গে সমন্বয় করে খসড়া রূপরেখা তৈরি করা হয়েছে। শুক্রবার ১২ দলীয় জোটের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আগামী দুই-এক দিনের মধ্যে গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে আলোচনা করবেন বিএনপির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা।

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও লিয়াজোঁ কমিটির সদস্য সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, যৌথ ঘোষণা চূড়ান্ত করতে কাজ চলছে। স্থায়ী কমিটির অনুমোদনের পর সুবিধাজনক সময়ে তা ঘোষণা করা হবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন  বলেন, সরকারকে বিদায় করতে যৌথ ঘোষণার ভিত্তিতে কর্মসূচি দেওয়া হবে। সরকারের বিদায়ের সেই আন্দোলনের জন্য নেতাকর্মীরা প্রস্তুত হচ্ছেন।

রাজনীতি