আদালতের বারান্দায় বিএনপির কেন্দ্রীয় ও তৃণমূল নেতারা। সিনিয়র নেতাদের এক যুগের পুরোনো মামলায় সাজার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। গতকাল সাবেক দুই মন্ত্রীকে ১৩ বছর ও ৯ বছরের সাজা দেয়া হয়েছে। গত ১৫ দিনে জেলা পর্যায়ে প্রায় সাড়ে ৬০০ নেতাকর্মীকে জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া সারা দেশে প্রায় এক হাজার ৮০০ নেতাকর্মী বন্দি রয়েছেন। দলটির দপ্তর সূত্র বলছে, এক লাখ ১১ হাজার ৫৪৫টির অধিক মামলা এই সরকার তাদের বিরুদ্ধে করেছে। আসামির সংখ্যা প্রায় ৩৯ লাখ ৭৮ হাজার ৪৮১-এর বেশি। তার মধ্যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দুই হাজার ৮৩০টির বেশি। যার কারণে দেশব্যাপী গণগ্রেপ্তারের পুরোনো আতঙ্ক ভর করছে দলটিতে। কেন্দ্রীয় কর্মসূচি পালনে জেলায় জেলায় শুরু হয়েছে গায়েবি মামলা। করা হচ্ছে হামলাও। কেন্দ্রীয় নেতারাও আহত হচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতেও দলটির হাইকমান্ড থেকে তৃণমূলকে নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে— আন্দোলন চলবে। চলতি মাসের ১৯ থেকে ২৭ মে পর্যন্ত যুগপৎ আন্দোলনের চার পর্বের কর্মসূচি শেষ হয়েছে। এর মধ্যে এখন চলছে আবার ১৩ দিনের কর্মসূচি। ইতোমধ্যে আগামী ১০ জুন থেকে তারুণ্য সমাবেশ শুরু হচ্ছে চট্টগ্রাম থেকে। সমমনা দল ও জোটগুলোকে নিয়ে ৩১ দফার ভিত্তিতে রাষ্ট্র সংস্কারের যৌথ রূপরেখা চূড়ান্ত করা হয়েছে। বিএনপির গোছানো পরিস্থিতিকে নষ্ট করতে সরকার পুরোনো কায়দায় আদালতকে ব্যবহার করছে— অভিযোগ দলটির। গতকাল ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক ও সাবেক এমপি আমান উল্লাহ আমানের ১৩ বছর এবং তার স্ত্রী সাবেরা আমানের তিন বছরের সাজার রায় বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট। আরেক মামলায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর ৯ বছরের কারাদণ্ডও হাইকোর্ট বহাল রেখেছেন। এ নিয়ে দলটির হাইকমান্ডের অভিযোগ— এ রায় ‘ফরমায়েশি’ বিচার ব্যবস্থা সরকারের দখলে চলে গেছে। সরকার সম্পূর্ণ রাষ্ট্রযন্ত্রকে দখল করে রাজনৈতিক নেতাদের জিম্মি করছে। এ ধরনের রায় দিয়ে কোনো দিন গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে স্তব্ধ করা যাবে না। সুষ্ঠু অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন না হতে পারে, তারা যেন একদলীয় নির্বাচন আবার করতে পারে সেই লক্ষ্যে সরকার এসব কাজ করছে। কিন্তু এবার জনগণ এটি করতে দেবে না। বিএনপির আন্দোলন চলবে। বিএনপির আইনজীবীরা বলছেন, দুর্নীতি দমন কমিশন সরকার নিয়ন্ত্রিত। সরকার যা বলে তারা তাই করে। সরকারের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে এই সংস্থাটি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহূত হচ্ছে। এক কথায় বলা চলে, দুর্নীতি দমন এখন বিএনপি দমনে পরিণত হয়েছে। এ নিয়ে বিশ্লেষকদের ভাষ্য— সরকার দেশের পুরো সেক্টরকে দলীয়করণ করে ফেলেছে। বিচার বিভাগ পুরো দলীয়করণ হয়ে গেছে। বিচারের নামে অবিচারের রায়গুলো এখন অনেক ক্ষেত্রেই দৃশ্যমান হয়ে যাচ্ছে। এটি দেশের ভাবমূর্তির জন্য অনেকটা মহা আশঙ্কার।বিস্তারিত