কাল বন্ধ হচ্ছে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র তীব্র লোডশেডিংয়ে পড়ছে দেশ

কাল বন্ধ হচ্ছে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র তীব্র লোডশেডিংয়ে পড়ছে দেশ

দেশে কয়লা সংকটে উৎপাদন বন্ধ হচ্ছে দেশের বৃহত্তম কয়লাভিত্তিক পায়রার তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র। টানা তিন বছর ধরে চলমান পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রে কয়লা সংকটের কারণে প্রথমবারের মতো পুরোপুরি বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হতে যাচ্ছে। গতকাল শনিবার কেন্দ্রটি বন্ধ করার কথা থাকলেও গত কয়েকদিনের বৃষ্টির কারণে বিদ্যুতের চাহিদা কম থাকায় বিদ্যুৎ উৎপাদন কম করা হয়। ফলে বেেঁচ যায় দুই দিনের কয়লা। সে হিসেবে আগামীকাল মঙ্গলবার থেকে পুরোপুরি বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হচ্ছে এই কেন্দ্রে। বন্ধ হওয়ার পরই তীব্র লোডশেডিংয়ের কবলে পড়বে পুরো দেশ। উচ্চ তাপমাত্রায় এমন লোডশেডিংয়ে বড় বিপদের মধ্যে পড়বে শিল্পকারখানা। এর আগে গত ২৫ মে প্রথম ইউনিটের বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। এবার দ্বিতীয় ইউনিটের বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাবে। এতে পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। ফলে ৩ জুন থেকে দক্ষিণাঞ্চলে যে লোডশেডিংয়ের আশঙ্কা করা হচ্ছিল তা আরও দুদিন পরে হচ্ছে।

পায়রা এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের প্ল্যান্ট ম্যানেজার শাহ আব্দুল মওলা বলেন, এখন পর্যন্ত যে পরিমাণ কয়লা আছে তাতে হয়তো ৫ জুন রাত পর্যন্ত প্ল্যান্ট চালু রাখা সম্ভব হবে। কয়লা না থাকায় গত ২৫ মে বিদ্যুৎকেন্দ্রের একটি
ইউনিট বন্ধ করা হয়েছে। বর্তমানে ৬৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বাকি একটি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে। পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র কর্তৃপক্ষ জানায়, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের কাছে বিদ্যুৎকেন্দ্রটির বর্তমান পাওনা প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড কিছু কিছু টাকা পরিশোধ করছে, যা দিয়ে প্ল্যান্ট চালিয়ে নেয়া হচ্ছিল। তবে বৈশ্বিক সংকটের কারণে ডলার সংকট থাকায় টাকা ডলারে কনভার্ট করতে না পারায় এলসি করা যাচ্ছে না, আর এ কারণে কয়লা আমদানি সম্ভব হচ্ছে না। এদিকে পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র কর্তৃপক্ষ জানায়, নতুন করে কয়লা আমদানির জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক এবং সরকার যৌথভাবে ১০০ মিলিয়ন ডলার ব্যবস্থা করে দিয়েছে। জুনের শেষে কয়লা এলে আবার পুরোপুরিভাবে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি চালু করা হবে। এদিকে পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হওয়ার পর থেকে লোডশেডিং বেড়ে গেছে। বিদ্যুৎ সংকট নিয়ে জনমনে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, সংকট কাটিয়ে দ্রুত কয়লা সংগ্রহের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কয়লা আসতে অন্তত ২৫ দিন সময় লাগতে পারে। সে কারণে জুনের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বন্ধ রাখতে হতে পারে।

শাহ আব্দুল মওলা বলেন, পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শাহ আব্দুল হাসিব বলেন, কয়লা সংকটের কারণে বন্ধ হচ্ছে দেশের সবচেয়ে বৃহত্তর কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র পায়রা। চালুর তিন বছরের মধ্যে এই প্রথম বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ থাকবে। তবে ইতোমধ্যে এলসি খোলা হয়েছে। আগামী ২৫ জুন প্রথম কয়লাবাহী জাহাজ পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রে আসবে। এতে ২১ দিনের আগে বিদ্যুৎ চালু হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম বলেও জানান এই কর্মকর্তা।

পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শাহ আব্দুল হাসিব বলেন, কয়লা সংকটের কারণে বন্ধ হচ্ছে দেশের সবচেয়ে বৃহত্তর কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র পায়রা। চালুর তিন বছরের মধ্যে এই প্রথম বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ থাকবে। তবে ইতোমধ্যে এলসি খোলা হয়েছে। আগামী ২৫ জুন প্রথম কয়লাবাহী জাহাজ পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রে আসবে। এতে ২১ দিনের আগে বিদ্যুৎ চালু হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম বলেও জানান এই কর্মকর্তা। এদিকে বিদ্যুৎ প্রসঙ্গে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধী দলীয় উপনেতা জি এম কাদের বলেছেন, এখন সাধারণ মানুষের প্রশ্ন বিদ্যুতের বিল তো বাকি রাখি নাই। তাহলে কয়লার বিল বাকি কেন? আজ মিল ফ্যাক্টরি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। কারণ ফ্যাক্টরিগুলোতে বিদ্যুৎ পাচ্ছে না। মানুষকে বিভ্রান্ত করে লাখ লাখ টাকা তছরূপ করেছে বর্তমান সরকার। একে একে বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হওয়ায় লোডশেডিং বাড়ছে দিন দিন। অতিষ্ঠ জনজীবন। ত্রাহিত্রাহি অবস্থা সাধারণ মানুষের। লোডশেডিং প্রসঙ্গে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জানিয়েছেন, দেশে এখন প্রায় ১৭০০ মেগাওয়াট লোডশেডিং চলছে। চলমান এই বিদ্যুৎবিভ্রাট নিরসনে আরও ২০ থেকে ২৫ দিন সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন তিনি। গতকাল শনিবার এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে প্রতিমন্ত্রী এ কথা বলেন।

বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমাদের একটা হাব বন্ধ আছে, দ্বিতীয় হাবটিও (পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র) ৫ তারিখে বন্ধ হয়ে যাবে। কয়লার অভাব দেখা দেয়ায় এমনটি হয়েছে। আর সেটি আসতে আসতে ২০ থেকে ২৫ দিন লেগে যাবে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, এলসি খুলতে দেরি হওয়ায় এমনটা হয়েছে। আর এই কারণে বিদ্যুতের একটা বড় অংশ সিস্টেমে পাচ্ছি না আমরা। তাই বর্তমানে প্রায় ১৭০০ মেগাওয়াট লোডশেডিং চলছে। নসরুল হামিদ বলেন, তেল আনার ব্যাপারেও রীতিমত হিমশিম খাচ্ছি আমরা, আর গ্যাসের ক্ষেত্রে বেশিরভাগ গ্যাস আপাতত আমরা ইন্ডাস্ট্রিতে দিচ্ছি। এদিকে গরমও অনেক বেড়ে গেছে। ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রির উপর চলে গেছে তাপমাত্রা। আর এর মধ্যে কিছুটা লোডশেডিং চলছে। এতে জনদুর্ভোগ বেড়ে গেছে। সে জন্য আমরা দুঃখিত।

উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ১৫ মে থেকে পায়রা এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৬৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন প্রথম ইউনিট উৎপাদন শুরু করে এবং ওই বছরের ডিসেম্বরে প্ল্যান্টটির দ্বিতীয় ইউনিট উৎপাদনের সক্ষমতা অর্জন করে। তবে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা অর্জন করলেও সঞ্চালন লাইন নির্মাণ কাজ শেষ না হওয়ায় দীর্ঘদিন একটি ইউনিট অলস বসে ছিল।

জাতীয়