নিজস্ব প্রতিবেদক
ঢাকা উত্তর সিটি কপোরেশন ( ডিএনসিসির) মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেছেন, শহরের মাঝখানে পচনশীল হোলসেল মার্কেট থাকে না, তাই কাওরানবাজারেও এ ধরণের মার্কেট থাকবে না। একটি গতিময়, পরিচ্ছন্ন নগর গড়তে কাওরানবাজার থেকে এই মার্কেট সরানো হবেই।
ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্য তিনি বলেন, এখানে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের জান মালের নিরাপত্তার স্বার্থে আমরা কাওরান বাজার থেকে পচনশীল হোলসেল মার্কেট সরানোর তাগিদ দিচ্ছি। সবাইকে নিশ্চিয়তা দিতে চাই, আধুনিক যে মার্কেটগুলো আমরা করে দেবো তা কাওরান বাজারের চেয়ে অনেক ভালো হবে। এ সময় `আমরা যাবো না, যাবো না` বলে ব্যবসায়ীরা হট্টগোল শুরু করেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে টিসিবি ভবন মিলনায়তনে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন, অঞ্চল -৫ এর আওতাধীন কাওরান বাজার হস্তান্তরের লক্ষ্য কাওরান বাজারসহ ব্যবসায়ী মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
সভাপতির বক্তব্যে ঢাকা উত্তর সিটি কপোরেশন ( ডিএনসিসির) মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, আলোচনার মাধ্যমে সবই সম্ভব। আমরা কেনো বলছি কাওরানবাজার ঝুঁকিপূর্ণ, কারন প্রকৌশলী, ইঞ্জিনিয়াররা বুঝেশুনেই রিপোর্ট দিয়েছে বলেই আমরা এই ঘোষণা দিয়ে সাইনবোর্ড দিয়েছি। তিনি বলেন, একনেকে প্রধানমন্ত্রী নিজেই কাওরান বাজার সরানোর জন্য ২৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়ে তিনটি জায়গা ঠিক করে দিয়েছেন। আমরা তার নির্দেশ মাফিক কাজ করছি। মেয়রের বক্তব্যের সময় ব্যবসায়ীরা হৈচৈ শুরু করেন।
এ সময় মেয়র আতিক পরিস্থিতি শান্ত করা চেষ্টা করে বলেন, আপনার থামুন, আমার সঙ্গে বসুন। আমরা বলছি না হুট করে কিছু করে ফেলবো। আমরা চাইনা কেউ বেকার হয়ে যাক। তিনি বলেন, এই মার্কেট ঝুঁকিপূর্ণ, যে কোনো সময় ভেঙে পড়বে। এ দায়িত্ব কি ব্যবসায়ীরা নেবে? তখন ব্যবসায়ীরা বলেন আমরা দায়িত্ব নেবো। মেয়র তখন পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করে বলেন, আসুন আলোচনার মাধ্যমে ১১ জনের কমিটি করে এ সমস্যার সমাধান হবে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, বুয়েট কর্মকর্তাদের পরীক্ষা নিরিক্ষার পরে দেয়া প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই সিটি কপোরেশন বাধ্য হয়েই কাওরান বাজারকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছে। তিনি বলেন, কাওরান বাজেরে একটা সময় দিনে ৩ টা খুন হতো, চাঁদাবাজি হতো। আজকে আমরা ব্যবসায়ীদের সহয়তায় তা বন্ধ করতে সক্ষম হয়েছি।
ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, যুগের সবই পরিবর্তন হয়, হয়তো একটা সময় আসবে এই বাজার রোডে ট্রাক ঢুকবে না, তখন আপনারা বিপদে পড়বেন। এমন কিছুই হবে না যাতে ব্যবসায়ীরা বিন্দুমাত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আমরা কারো রুটি রোজগার বন্ধ করে জোর করে কোথাও নিবো না। যেখানেই ব্যবস্থা করা হবে, এমনভাবে সেই মার্কেট তৈরি করা হবে, ব্যবসায়ীরা স্বইচ্ছায় আনন্দে সেখানে যাবেন।
মন্ত্রী বলেন, মেয়রের প্রতি আহ্বান থাকবে এখানেই একটা আধুনিক সুপার মার্কেট তৈরি করে দিন। তবে সবাইকে ছাড় দিতে হবে। শহরকে সুন্দর করে সাজাতে মেয়র ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলেই সিদ্ধান্ত নিবেন। মার্কেটগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে থাকলে যত তাড়াতাড়ি বিকল্প ব্যবস্থা করা যায় আশা করছি মেয়র আতিকুল ইসলাম সেভাবেই ব্যবস্থা করবেন।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো: তাজুল ইসলাম বলেন, প্রধানমন্ত্রী কাওরান বাজার নিয়ে আমাদের যে দায়িত্ব দিয়েছেন, সেখানে ব্যবসায়ীদের ক্ষতিগ্রস্ত করার কোনো উদ্দেশ্য নেই। আমরা সবার জন্য সৌহার্দ্যপূর্ণ শহর গড়তে চাই। তিনি বলেন, এখন কাওরান বাজারে ৫০ হাজার লোকের আনাগোনা, অসংখ্য লোক চলাচল করে, ট্রাক আসা যাওয়া সব মিলে জটিল বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই সমস্যা সমাধান করতে হবে ব্যবসায়ীরা যেনো রকম ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিক বিবেচনা রেখেই। এ সমস্যা সমাধানে, ব্যবসায়ীদেরও সহযোগী প্রয়োজন।
মন্ত্রী বলেন, ঢাকা শহরকে সুন্দর করতে সবাই মিলে একটা যৌক্তিক কর্মসূচি নিয়ে এই সমস্যা সমাধান করতে হবে। সব পক্ষ ছাড় দিয়ে প্রতিপক্ষ নয় সবাই একপক্ষ হয়ে কাজ করতে হবে৷
অনুষ্ঠানে সিটি করপোরেশন ইচ্ছাকৃতভাবে মনগড়া পরিত্যক্ত ঘোষণা করেছে বলে দাবি করেন কাওরান বাজার ব্যবসায়ী নেতারা। তাদের অভিযোগ, ষড়যন্ত্র করে ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে কোনো আলোচনা না করেই কাওরান বাজার স্থানান্তর করার সিদ্ধান্ত নিয়ে এখানকার ব্যাবসায়ীদের অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে দেয়া হয়েছে।
কাওরান বাজার ক্ষুদ্র ব্যাবসায়ী মালিক সমিতির নেতা হাজ্বী মো: আবুল বাশার বলেন, আজকে তিলে তিলে কাওরান বাজার উন্নতি করছি। যারা অবৈধভাবে দখল করেছিলো আমরা তাদের সরিয়ে সিটি কপোরেশনের জায়গা হেফাজত করেছি। এখন আমাদের অসহায় করে জায়গা সরিয়ে ফেলার কথা বলছে। আমাদের জ্যণ বিকল্প কোনো ব্যবস্থা না করা পর্যন্ত উচ্ছেদ না করার অনুরোধ করছি। আমরা নিঃস্ব হয়ে যাবো। কাওরান বাজারের যে কোনো একটা উপযুক্ত স্থানে আমাদের ব্যবসার ব্যবস্থা করুন।
কাওরান বাজার আড়ৎ মালিক সমিতির নেতা ওমর ফারুক বিএসসি বলেন, গাবতলীতে যে মার্কেট হয়েছে সেখান থেকে ট্রাক বের হওয়ার সুযোগ নেই। গাবতলী যে পরিকল্পনা নিয়েছিলো তা ভুল ছিলো। এটা সংশোধন করতে হবে। ঢাকার মধ্যে সিটি কপোরেশন এমন জায়গায় এমন ব্যবস্থা করুক যাতে জনগণের কোনো অসুবিধা না হয়। কপোরেশন জায়গা দিলে মার্কেট আমরা নিজ উদ্যোগে করে নিবো।
চিকেন মার্কেট সমিতির নেতা হাজী মো: লোকমান বলেন, ৮৬ সালে মার্কেট বুঝে নেয়ার পরে আমরা ডিএনসিসিকে রাজস্ব দিচ্ছি। অথচ তারা এক টুকরো আস্তরও রিপেয়ার করে দেয়নি৷ তাদের নিজস্ব কাজের অবহেলায় কাওরান বাজারকে আজকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। আমাদের দাবি, কাওরান বাজারকে আধুনিকায়ন করে আমাদের এখানেই থাকার ব্যবস্থা করতে হবে৷ জোর করে সরিয়ে দিতে চাইলে প্রয়োজনে সবাই মিলে আত্মহুতি দেবো।