বেসিক ব্যাংক ঋণ কেলেঙ্কারির ‘মূলহোতা’ শেখ আবদুল হাই বাচ্চু দেশেই আছেন

বেসিক ব্যাংক ঋণ কেলেঙ্কারির ‘মূলহোতা’ শেখ আবদুল হাই বাচ্চু দেশেই আছেন

বেসিক ব্যাংক ঋণ কেলেঙ্কারির ‘মূলহোতা’ শেখ আবদুল হাই বাচ্চু দেশেই আছেন। ব্যাংকটির সাবেক এ চেয়ারম্যানের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা চেয়ে ইমিগ্রেশনে চিঠি দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল রবিবার কমিশনের এক কর্মকর্তা  বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

বেসিক ব্যাংক ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনায় প্রায় আট বছর অনুসন্ধান শেষে গত ১২ জুন ৫৯টি মামলার অভিযোগপত্র অনুমোদন করে দুদক। এর মধ্যে ৫৮টি মামলায় আবদুল হাই বাচ্চুকে আসামি করা হয়েছে।

২০১৫ সালে ২ হাজার ৩৬ কোটি ৬৫ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে এসব মামলা করে দুদক। কিন্তু কোনো মামলায় আসামি হিসেবে বাচ্চুর নাম ছিল না। এ নিয়ে সমালোচনা শুরু হলে দুই বছর পর তাকে পাঁচ দফা জিজ্ঞাসাবাদ করে কমিশন। এরপর প্রায় আট বছর তদন্ত শেষে বাচ্চুসহ ১৪৭ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় সংস্থাটি।

আবদুল হাই বাচ্চু বিদেশ আছেন, নাকি দেশে- অভিযোগপত্র দাখিলের পর তা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়। ইমিগ্রেশনের সর্বশেষ তথ্যের ভিত্তিতে দুদকের এক গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আবদুল হাই বাচ্চু গত ৫ এপ্রিল দুবাই যান। সেখান থেকে তিনি যান কানাডায়। এর পর ৮ জুন দেশে ফেরেন তিনি। এর পর তিনি আর দেশের বাইরে যাননি। এর মধ্যে ১৫ জুন আবদুল হাই বাচ্চুর বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দিয়ে পুলিশের স্পেশাল ব্র্যাঞ্চের ইমিগ্রেশেন ল্যান্ড অ্যান্ড সি পোর্টের বিশেষ পুলিশ সুপার বরাবর চিঠি দেয় দুদক। মামলার পাঁচ তদন্ত কর্মকর্তা পৃথকভাবে এসব চিঠি দেন।

২০০৯ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন জাতীয় পার্টির সাবেক এমপি আবদুল হাই বাচ্চু। আর তখনই ব্যাংকটির দিলকুশা, গুলশান ও শান্তিনগর শাখার কয়েক হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে।

এর আগেই ২০১০ সাল থেকে বেসিক ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারির অভিযোগ পেয়ে অনুসন্ধানে নামে দুদক। প্রাথমিক অনুসন্ধানে ২ হাজার ৩৬ কোটি ৬৫ লাখ টাকা আত্মসাতের প্রমাণ মেলে।

অভিযোগপত্রে আসামির তালিকায় আছেন ব্যাংকের ৪৬ কর্মকর্তা এবং ১০১ জন ঋণগ্রহীতা। ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাচ্চু ও কোম্পানি সচিব শাহ আলম ছাড়াও আসামি হিসেবে আছেন- ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপন পরিচালক (এমডি) কাজী ফখরুল ইসলাম, উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) মো. সেলিম, এমদাদুল হক, ফজলুল সোবহান, প্রধান কার্যালয়ের ক্রেডিট কমিটির সদস্য সচিব এ মোনায়েম খান, মহাব্যবস্থাপক মো. মনিরুজ্জামান ও শাহজাহান মোল্লা, ডিএমডি কনক কুমার পুরকায়স্থ, ডিজিএম খান ইকবাল হাসান, জিএম মোহাম্মদ আলী চৌধুরী ও সহকারী মহাব্যবস্থাপক মো. আশরাফুজ্জামান। ব্যাংকটির শান্তিনগর শাখার সাবেক ব্যবস্থাপক মো. জালাল উদ্দিন, এজিএম এসএম আনিসুর রহমান চৌধুরী, সাবেক ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ আলী, গুলশান শাখার সাবেক ব্যবস্থাপক শীপার আহমেদ, একই শাখার ক্রেডিট ইনচার্জ এসএম জাহিদ হাসানসহ দিলকুশা শাখা ও স্থানীয় কার্যালয়ের আরও কয়েকজন কর্মকর্তা আসামির তালিকায় রয়েছেন।

বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারির ঘটনায় যখন মামলা করা হয়, তখন দুদক চেয়ারম্যান ছিলেন মো. বদিউজ্জামান। তিনি মামলার তদন্ত শেষ করে যেতে পারেননি। ২০১৬ সালে দুদক চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পান সাবেক জ্যেষ্ঠ সচিব ইকবাল মাহমুদ। তার পাঁচ বছরেও বেসিক ব্যাংকের তদন্ত সম্পন্ন হয়নি। আর সংস্থাটির বর্তমান চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ ২০২১ সালে দুদকে নিয়োগ পান। মামলার তদন্ত শেষ না হওয়ার বিষয়টি এক মামলার সূত্রে গত নভেম্বরে হাইকোর্টের নজরে আসে। তখন আদালত তিন মাসের মধ্যে তদন্ত শেষ করতে দুদককে নির্দেশ দেন।

অর্থ বাণিজ্য